শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে /ছবি : ঢাকা পোস্ট

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বন্ধের মধ্যেই অব্যাহত রয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম। প্রথম ডোজের পর এখন চলছে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি। অভিযোগ রয়েছে, সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থাপনা। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ১ কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৯০৮ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৫ জন। তবে মাদ্রাসার কোনো শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি।

এদিকে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। উপেক্ষিত ছিল সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। অনেকেই আবার হাজির হয়েছেন মাস্ক ছাড়া। শিক্ষার্থীরা একা নন, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক বা তার অধিক অভিভাবকও।

সূর্য যখন মাথার ওপর তখনই শুরু হয় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের শোরগোল। তারা লাইন ভেঙে স্কুল ভবনের কলাপসিপল গেট ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। রোভার স্কাউটের সদস্যরা মাইকিং করে সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজে মঙ্গলবার ৪ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। সকাল ৯টায় টিকা দেওয়া শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়ায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের লাইনও দীর্ঘ হয়। শিক্ষার্থীদের এ ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে টিকাদানের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ডেমরা থানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; সারুলিয়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তাজউদ্দীন আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইস্টেক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা, হাজী এম. এ গফুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রোজ গার্ডেন হাই স্কুল, কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হায়দার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাসাবো গার্লস হাই স্কুল, মান্নান হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ।

তবে এ ১১টি প্রতিষ্ঠানের বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্রাইট স্কুল কেন্দ্রে করোনার টিকা নিতে হাজির হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একটি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার শিক্ষক আবু সায়েম খান টিকা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ করলেও তামিরুল মিল্লাতের টিকাদান কেন্দ্র এটি নয় জানালে তিনি চুপ হয়ে যান। 

সূর্য যখন মাথার ওপর তখনই শুরু হয় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের শোরগোল। তারা লাইন ভেঙে স্কুল ভবনের কলাপসিপল গেট ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। রোভার স্কাউটের সদস্যরা মাইকিং করে সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে এ টিকাদান কেন্দ্রের সামনে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলায় ছেলেদের এবং ৮ম তলায় মেয়েদের টিকার বুথ করা হয়েছে। দুপুর ১টার পরপরই শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ৪ হাজার ৭০০ টিকা শেষ হয়ে যায়।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ১ কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৯০৮ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৫ জন। তবে মাদ্রাসার কোনো শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি।

এরপর আবারও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। রোভার স্কাউটের সদস্যরা টিকা শেষ হয়ে গেছে বলে সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলেন। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ নিয়ে চিৎকার শুরু করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা জানান, আরও টিকা আনার চেষ্টা করছেন তারা। পরবর্তীতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরও ১ হাজার ৮০০ টিকা আনা হয়।

বেশকিছু দিন পর এই কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করায় শিক্ষার্থীদের ভিড় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দাবি, প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক আলাদা দিন ও সময় নির্ধারণ করে দিলে এবং পর্যাপ্ত লোকবল থাকলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় এড়ানো সম্ভব হতো।

শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, সকাল ১০টায় লাইন ধরেছি, ১২টায় টিকা দিতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টিকা কেন্দ্র করলে আমাদের জন্য ভালো হতো। কষ্ট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না।

সবুজবাগ থেকে ছেলেকে টিকা দিতে নিয়ে এসেছেন আব্দুল কুদ্দুস। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসি কক্ষ না থাকলে নাকি সেই স্কুলে করোনার টিকা দেওয়া যাবে না। আমাদের ওদিকে (সবুজবাগ) তো কয়েকটি স্কুলে এসি কক্ষ আছে। তারপরও এখানে টিকার কেন্দ্র করা হলো। যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্কুল-কলেজ অনেক, শিক্ষার্থীও বেশি। সেসব বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে টিকা দানের ব্যবস্থা করলে আমাদের ভোগান্তি কমত।

শ্যামপুর থেকে মেয়েকে টিকা দিতে নিয়ে আসা তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাস্তায় জ্যাম ঠেলে এখানে আসতে হয়েছে। করোনার টিকা দিতে মেয়েকে নিয়ে এসেছি, অথচ টিকাদান কেন্দ্রে এসে দেখি একজন আরেকজনের ওপর ঢলে পড়ছে। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, টিকার জন্য দীর্ঘ লাইন সব মিলিয়ে এতো ভোগান্তি আর ভালো লাগে না। এই ব্যর্থতা সম্পূর্ণ সরকারের। তারা চাইলেই টিকা কেন্দ্র আর টিকার সরবরাহ বাড়িয়ে আমাদের ভোগান্তি কমাতে পারত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদানের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকা দিতে যেহেতু এসি কক্ষ লাগবে, তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে এসি কক্ষ আছে, সেখানে বুথ করা হচ্ছে। এর ফলে স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠানেও টিকা কেন্দ্র করা হচ্ছে না। ফলে শুধুমাত্র এসি কক্ষ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বাড়ছে।  

লোকবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরের ১৪ তারিখে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ঘোষণা পাই। ১ নভেম্বর টিকাদান শুরু হয়। স্বল্প সময়ে সভা করা, শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি করা, সুরক্ষা অ্যাপে পাঠানোসহ বেশ কিছু কাজ দ্রুত করতে হয়েছে। কীভাবে শুরু করব, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ফরম্যাটও তৈরি করা ছিল না। ফলে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে এখন সেসব সমস্যা অনেকটাই কমে এসেছে।

সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট টিকা কেন্দ্র থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্র হলে টিকাদান কার্যক্রম আরও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে করা যেত। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা কেন্দ্র, ফলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে।
 
এএজে/এসকেডি