ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু। যিনি মনিরা মিঠু নামেই বেশি পরিচিত। দুই দশক ধরে অভিনয় করছেন। যখন যে চরিত্রই করেন না কেন সেখানেই নিজেকে মানিয়ে নেন এই অভিনেত্রী। যার জন্য প্রতিনিয়ত ভক্ত-দর্শকের ভালোবাসাও কুড়ান। নিজের বর্তমান ব্যস্ততা এবং অভিনয় জীবনের নানা দিক নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এই গুণী অভিনেত্রী...

প্রায় দুই দশকের অভিনয় জীবন। পেছন ফিরে তাকালে কী অনুভূতি হয়?

অনেক কিছুই মনে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি মনে হয় এতো কষ্ট কীভাবে করতাম? রিকশা, সিএনজিতে করে এতো সময়ের নিয়ন্ত্রণে কীভাবে সেটে পৌঁছাতাম? মাঝে মাঝে নিজের কাছেই অবাক লাগে। এখন নিজের একটা গাড়ি থাকলেও একই কষ্ট করি। সময়ের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। সময় মতো সেটে যেতে না পারলে মনে শান্তি পাই না।

আপনি যে অবস্থানে এসেছেন বা যতটা পরিচিতি পেয়েছেন, তা নিয়ে কি সন্তুষ্ট?

১০০ ভাগ সন্তুষ্ট। অভিনয় জীবনে কিছু মারাত্মক অভিমান আছে। তবে সব মিলিয়ে শোকর আলহামদুলিল্লাহ। দারুণ উপভোগ করছি।

সিরিয়াল হোক বা একক নাটক, প্রচুর কাজে দেখা যায় আপনাকে। বেশি কাজ কি অনুরোধে ঢেঁকি গেলার জন্য হয়ে যায়?

প্রচুর কাজ দেখেন সিরিয়াল কিংবা একক নাটকে। কারণ এটা আমার একমাত্র জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। আর অনুরোধের ঢেঁকি গেলা নয়, বরং আমি মনে করি একজন শিল্পী ভালো কাজ করবে। দুই-একটা যদি খারাপ নির্মাণ হয়েই যায়, সেটা হবেই। পৃথিবীতে কোনো শিল্পীরই সব কাজই সেরা হয় না। ভালো-মন্দ মিশিয়েই শিল্পীর জীবন এগিয়ে চলে। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ক্যারেকটার আর্টিস্টদের অতিরিক্ত চুজি হয়ে কাজ নির্ধারণ করা অতি কঠিন। কারণ ক্যারেক্টর আর্টিস্টদের পারিশ্রমিক এমন না যে আমি মাসে দুইটা ভালো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো।

নাটকের দৃশ্যে মনিরা মিঠু

কাজের পজিটিভ রিভিউ পেলে কেমন লাগে?

অবশ্যই ভালো লাগে। কিন্তু আমি তো তথাকথিত হিরোইন না, তারপরও আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক একক রিভিউ পাই। যেমন আমার অন্যতম একটি জনপ্রিয় নাটক ‘হাউজফুল’। সেটা পুরনোই বলতে পারেন। নাটকটির রিভিউ এখনো পাই। শিল্পী হিসেবে এগুলো তৃপ্তির জায়গা। তবে আমি তা নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। বরং নতুন কাজটায় মনোযোগ দিই।

এত কাজের ভিড়ে নিজে তৃপ্তি পান এমন কিছু কাজের কথা বলুন

অভিনেত্রী হিসেবে ধারাবাহিক এবং একক নাটকের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা বলেন, আনন্দ অনুভব করা করেন, তৃপ্তি বলেন এরকম হাজারও নাটক আছে। একক নাটক যদি বলি- ‘স্পারটাকাস ৭১’, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’, ‘জননী সাহসিনী ১৯৭১’, এগুলো হচ্ছে আগের। বর্তমানের তো অনেক আছে-‘একুশ বছর পরে’, ‘নিহত নক্ষত্র’, ‘মায়ায় থেকো’, ‘আপন’, অমানুষ’, ‘শোকসভা’, ‘লিলুয়া’, ‘নসিব’, ‘আশার আলো’, ‘জীবন সঙ্গী’, ‘রোমিও জুলিয়েট’ প্রভৃতি। ধারাবাহিকের মধ্যে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’সহ অনেক নাটকই আছে।

নতুন কাজের কোনো খবর দিতে চান?

এই মুহূর্তে একটি নতুন ধারাবাহিক করছি। আর একক নাটক অনেক করছি। সম্প্রতি নিলয় আলমগীরের সঙ্গে দুটি খুব চমৎকার কাজ করেছি। একটা নাটকে আমি তোতলা। আরেকটি নাটকের নাম ‘পাপ’। যেখানে পাগল, একজন ধর্ষিতা পাগল। কাজ দুটি নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূলের নতুন একটা ধারাবাহিক করছি। অরুণ চৌধুরীর ‘জলে জ্বলে তারা’ নামে অনুদানের একটি সিনেমার ডাবিং শেষ করলাম। একক নাটক নিয়েই মূলত যুদ্ধটা চলে। তবে ধারবাহিক নিয়েও কম চলে না। ধারাবাহিক নাটক না করলে একজন শিল্পী বেঁচে থাকতে পারে না।

নাটকের দৃশ্যে মনিরা মিঠু

ঈদের পর কাজ মনে হয় কম থাকে?

একদম তাই। ঈদের পরে কাজে ধীর গতি থাকে। তবে আমি আবার চাঙ্গা হয়ে গেছি। টুকটুক করে পুরোদমে কাজ করছি। আমি আসলে সবসময় কচ্ছপের গতিতেই এগিয়ে চলি। আমি খরগোশ না, কচ্ছপ।

অভিনয়ের বাইরে সময় কাটান কীভাবে?

একটা সময় খুব পড়তাম-উপন্যাস, বড় গল্প, ছোট গল্প। এখন পড়ায় মনোযোগ বসাতে পারি না। অবসরে স্ক্রিপ্ট পড়ি, কস্টিউমস গোছাই আর আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর নেই। পরিবারে সময় দেই। আমার একটা ভাই বাংলাদেশে আছেন, একমাত্র বড়বোন আছেন। দুইজনই অসুস্থ। যেদিন অবসর থাকি সেদিন ভাইটা বাসায় আসে। তাকে সময় দেই। ভাইটা আমাকে ছোটবেলা থেকেই খুব ভালোবাসে। আমার সাথে সময় কাটালে কিছুটা সুস্থ বোধ করে। একটা ফুপু আছেন। বয়স ৯৯। ভাবছি দু’চারদিনের মধ্যে ফুপুকে দেখতে যাবো। ফুপু ছোটবেলায় আমার জন্য অনেক করেছেন। মাঝে মাঝেই মনে হয়, এই বুঝি ফুপু চলে গেলেন। এটা ভাবতেই বুকটা ভারী হয়ে আসে!

আরআইজে