জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আসিফ আকবর বলেছেন, গানের শিল্পীদের মধ্যে ঐক্যের উপস্থিতি কম। তাদের মধ্যে সাহসী লোক কম, চাটুকার বেশি। দল বদলায় সঙ্গে সঙ্গে তারাও বদলায়।

রোববার (২২ জানুয়ারি) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দ্বীন মুক্তমঞ্চে গান পরিবেশনের আগে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি।

আসিফ আকবর বলেন, আমি লাস্ট ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্ট করেছিলাম। এরপর একটা করেছি ঝিনাইদহে। এরপর কুমিল্লাতে একটা করেছি, আর আজ আবার জাহাঙ্গীরনগরে আসলাম। এই তিন বছরে আমি চারটা শো করতে পেরেছি। আসলে আমাকে শো করতে দেওয়া হয় না। আমাকে অনুমতি দেওয়া হয় না। লোকাল যেসব এসপি, ডিসি কিংবা এমপি আছেন তারা করতে দেয় না, হয়তো তাদের ভালো লাগে না।

দীর্ঘ ষোলো বছর কনসার্ট করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, এটা আসলে দুঃখজনক, আমি পাসপোর্ট পাচ্ছি না দীর্ঘদিন ধরে। হয়তো ওরা আমার ওপরে বিরক্ত এজন্য ঠিকভাবে ওপেন এয়ার কনসার্ট করতে দিচ্ছে না। তবে আমি গানের মধ্যে আছি, নিয়মিত রেকর্ডিং হচ্ছে। বাংলাদেশে একমাত্র আর্টিস্ট আমি যে, রেকর্ডিং করেই জীবিকা নির্বাহ করি। আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। লাইভ কনসার্ট করতে না পারার কারণে আমি ঠিকভাবে তাদের সঙ্গে কানেক্টেড হতে পারছি না। তবে সবশেষে একটাই কথা দেশের বাইরে সেটেল হওয়ার চিন্তা আমার নেই। যতদিন বাঁচি বাংলাদেশেই থাকবো।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের রাজনৈতিক চর্চার অধিকার আছে, আমি নিজে কোনো এগ্রেসিভ পলিটিশিয়ান না। গান বাজনার সঙ্গে রাজনীতি মেশানো ঠিক না। রাজনীতি যার যার নিজের ব্যাপার। আমার মনে হয় বর্তমান জেনারেশন অনেক বেশি লিবারেল। তবে সমস্যাটা হয় অতি উৎসাহী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জন্য। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে আমি ঠিকভাবে কনসার্ট করতে পারছি না। এটা আমার জন্য যতটুকু কষ্টের তার চেয়ে বেশি কষ্টের যারা আমাকে ভালোবাসে সেসব ফ্যানদের জন্য, একটা বড় প্রজন্মকে আমি মিস করে ফেলছি।

রোববার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে হাজারো দর্শককে সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলেন সাড়া জাগানো এ শিল্পী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির আয়োজনে নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা ২০২৩ প্রোগ্রামে গান করেন তিনি।

‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘ও পাষাণী বলে যাও কেনো ভালোবাসোনি’, ‘এখনো মাঝে মাঝে মাঝ রাতে’, ‘উড়ো মেঘ তুই শুধু ভালোবাসা দিস’ এমন সব গানে হাজারো দর্শককে মাতান জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আসিফ আকবর। রাত সাড়ে এগারোটার পরে মঞ্চে উঠেন আসিফ আকবর। এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা মাতিয়ে রাখেন দর্শক শ্রোতাদের।

উল্লেখ্য, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পর পর ৬ বছর অ্যালবাম বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে ছিলেন আসিফ। তার প্রথম অ্যালবাম ৫.৫ মিলিয়ন বৈধ কপি বিক্রি হয়েছিল, যা বাংলাদেশের অডিও ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সদা স্পষ্টভাষী আসিফ আকবর বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যার জনপ্রিয়তা এবং আধিপত্য এখন পর্যন্ত সমানভাবে বিরাজমান।

মো. আলকামা/এমএ