অর্কদীপ মিশ্র

ভারতের জি বাংলার সংগীত প্রতিভা অন্বেষন প্রতিযোগিতা ‘সারেগামাপা’র বাংলা সংস্করণের এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অর্কদীপ মিশ্র। দেশটির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর শীষ্য হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সব কিছু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে। সেই সাক্ষাৎকারটির চুম্বকাংশ ঢাকা পোস্ট পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

রাতারাতি নাম-যশ-অর্থ-খ্যাতি। কেমন লাগছে?
ভালোই লাগছে। বেশ ভাল। খ্যাতির সঙ্গে কু-খ্যাতিও জুটেছে রাতারাতি (হাসি)।

কুখ্যাতি কিসের? দর্শক-শ্রোতাদের আপনার কোনটা নিয়ে আপত্তি?
আমার লোকগান গাওয়া নিয়ে বেশ কিছু মানুষের আপত্তি রয়েছে। তাদের প্রশ্ন, শুধুই লোকগীতি গেয়ে কী ভাবে সেরা হলাম? কারণ, তাদের মতে লোকগান নাকি আলাদা করে শিখতে হয় না। খুবই সহজ ব্যাপার! আমি নাকি আমার ‘কমফর্ট জোন’ থেকেই বেরোইনি! অথচ শো বলছে, আমি কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, অমিত ত্রিবেদী, শাহরুখ খান অভিনীত সিনেমার গানসহ নানা ধারার গান গেয়েছি। তার পরেও শুনতে হচ্ছে, আমি নাকি এক ধারার গান গেয়ে এই সম্মান পেয়েছি। আমার পাতায় গেলেই দেখতে পাবেন আমার গান, গায়কির সমালোচনার পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

খ্যাতির বিড়ম্বনা টের পাচ্ছেন?
সমালোচনা ভালো। সমালোচনা দরকারও। সারাক্ষণ 'ভালো' শোনাটাও ভালো নয়। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত বিষয় বা মা-বাবা তুলে খারাপ মন্তব্য করেন কেউ, গায়ে লাগে। এটাও ঠিক, আমরাই কত সময় বাড়িতে মাংস-ভাত খেতে খেতে শচীন টেন্ডুলকারের খেলার সমালোচনা করি। এটাই জীবন। এগুলো নিয়েই চলতে হবে এখন থেকে। তবে আমার দিক থেকে আমি খুবই পরিষ্কার। ফাঁকি দিয়ে এই সম্মান পাইনি। বিচারকেরা এই বিশেষ সম্মান জানিয়েছেন। তাকে অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই। তবে এখন মনে হচ্ছে, ক্ষমতা থাকলে এই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়াই শ্রেয় ছিল।

জীবনটা কঠিন হয়ে গেল?
একেবারেই না। এখন আমায় লোকে চেনেন। আমি কিছু বলতে চাইলে তারা শুনবেনও। কিন্তু যখন আমার এই পরিচিতি ছিল না, তখনও স্বাধীন ভাবে কাজ করেছি। আমার একটি ব্যান্ড রয়েছে, ‘দ্য ফোক ডায়েরি’। মুম্বাইয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের রিয়েলিটি শো করেছি। জাতীয় স্তরের একটি রিয়েলিটি শো-তেও অংশ নিয়েছি। তখন লড়াই বেশি শক্ত ছিল।

চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার হাতে অর্কদীপ মিশ্র

শঙ্কর মহাদেবন, শিবমণিকে মুগ্ধ করলেন কী ভাবে?
মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সত্যিই অত কিছু ভাবিনি। পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছিল। প্রত্যেক বারের মতো গ্র্যান্ড ফিনালের দিনেও নিজেকে বার বার বুঝিয়েছি, এটাই আমার শেষ বার মঞ্চে উঠে গান গাওয়া। সুতরাং সেরাটা দিতে হবে। প্রতিযোগিতায় জিততে পারব কিনা, তাই নিয়ে একটুও মাথা ঘামাইনি। হয়ত সেটাই ক্লিক করে গিয়েছে। আমি শুরু থেকে শুধুই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই আজ সবাই যখন বিরোধিতা করছেন, বেশি খারাপ লাগছে।

মা সেতার বাদক। বাবা মঞ্চাভিনেতা?
হ্যাঁ। আমিও আমাদের দল ‘সেমন্তী নৈহাটি’ নাট্য সংস্থার অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। রূপঙ্কর বাগচীর ‘কৃষ্টি পটুয়া’র ‘জেহাদ’ নাটকে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করেছি। পাশাপাশি, মা-বাবার আগ্রহেই গানের দুনিয়ায়।

না হলে আজ ব্যাট হাতে ময়দানে ৪, ৬ হাঁকাতেন?
(হেসে ফেলে) আমার দাবাড়ু হওয়ারও ইচ্ছে ছিল। দাবা খেলতে পারি। তাই আগে গানে মন বসত না। ধীরে ধীরে অভ্যেস করতে করতে গান রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলায় একটুআধটু লেখালিখিও করতে পারি। অনেকেই জেনে অবাক হয়েছেন। আসলে আমার গায়কি, সাজপোশাক, গতিপ্রকৃতির সঙ্গে বাংলা-ই মানানসই। যদিও আমি রসায়নে স্নাতক। পরে লোকগীতিতে স্নাতকোত্তর পড়েছি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আর কী কী প্রতিভা আছে আপনার?
অর্কদীপ: অনেক কিছু। ভালো ক্রিকেটার, লোকের সমস্যার সমাধান করা, লেখালিখি, অভিনয়, মঞ্চের আবহ তৈরি করা-- সবটাই লোকচক্ষুর বাইরে।

শিল্পী অর্কদীপের ক’জন প্রেমিকা?
(লাজুক হেসে) এই মুহূর্তে স্পষ্ট করে কারও নাম বলা যাবে না। তবে যে ছিল বা আছে, সে-ই ভবিষ্যতে থাকবে। একাধিক নেই। কারণ, একাধিক বিশেষ বান্ধবী থাকলে তাদের সামলাতে গিয়ে আর শিল্প হবে না! তার মানে আবার এটাও নয় যে বিশেষ বান্ধবীর সঙ্গে অন্য বন্ধুরা থাকবে না। সবাই আছে যে যার মতো করে।

বিচারকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল? ইমন আপনার ‘গুরু বোন’?
অর্কদীপ: শুধু ইমন চক্রবর্তী বা রূপঙ্কর বাগচী নন, সবার সঙ্গে আমি খুব মিশে গিয়েছিলাম। সবাই ভীষণ সাহায্য করতেন। রথিজিৎ ভট্টাচার্যের স্টুডিয়োয় গিয়ে অনেক রেকর্ডিং করেছি। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব?

ওই জন্যেই নিন্দুকেরা আপনার জয় ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলছেন?
অর্কদীপ: লোকের মুখ তো আটকাতে পারি না। খারাপ লাগছে শুনে। আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সারাক্ষণ তাই গেম খেলায় ডুবে আছি।