ঠিক ৫০ বছর আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হলো একটি কনসার্ট। সেখানে সংগীত পরিবেশন করলেন বিখ্যাত বব ডিলান, এরিল ক্ল্যাপটন, জর্জ হ্যারিসন, বিলি প্রিস্টন ও রিঙ্গো রকস্টারের মতো তারকারা। তবে গান কিংবা শিল্পী নয়, এই আয়োজনের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব ছিল অন্য কিছু।

সেই বিশেষত্বের নাম বাংলাদেশ। হ্যাঁ, কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্যই। আর এই কনসার্টের মাধ্যমেই সূচনা হয় নতুন এক পথের। তা হলো, সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তহবিল সংগ্রহ করা।

১৯৭১ সালের ১ আগস্ট ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। আজ সেই আয়োজনের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। ভারতীয় সেতারবাদক ওস্তাদ রবিশঙ্কর ও তার বন্ধু সাবেক বিটলস সংগীত দলের লিড গিটারবাদক জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে ওই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পাকিস্তানী বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার ফলে এ ভূখণ্ডের প্রায় এক কোটি শরণার্থী আশয় নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে ত্রাণসামগ্রীর প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়। এছাড়া একাত্তরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আরও বহু বাঙালি চরম দুর্দশায় পড়ে যায়। তাদের সহযোগিতার কথা ভেবেই একটি কনসার্ট করার কথা ভাবেন পণ্ডিত রবি শংকর। বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের সাথে আলাপ করে সাজিয়ে নেন পরিকল্পনা।

মাত্র পাঁচ সপ্তাহের প্রস্তুতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। দুপুর আড়াইটায় রবি শংকর, সরোদ বাদক আলি আকবর খান, তবলা বাদক আল্লা রাখা এবং তম্বুরা বাদক কমলা চক্রবর্তীর পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর একে একে বাকি ব্যান্ডগুলো সংগীত পরিবেশন করে।

বলাই বাহুল্য, এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই বিশ্ববাসী জেনেছিল বাংলাদেশের কথা। যা লাল-সবুজের স্বাধীনতার পথকে সুগম করেছিল। জানা যায়, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ থেকে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ মার্কিন ডলার তহবিল উঠে এসেছিল। সেই অর্থ জাতিসংঘের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে শরণার্থীদের কাছে পৌঁছানো হয়।

‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ কেবল এ দেশের জন্যই ঐতিহাসিক নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই এটি চিরকালের স্মরণীয় আয়োজন হয়ে থাকবে। কেননা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চ্যারিটি কনসার্টের প্রচলন শুরু হয়।  

কেআই