গত কয়েকদিনে কয়েকজন মডেল ও অভিনেত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ সময় এসব মডেল-অভিনেত্রীর বাসায় মদ, ইয়াবা’সহ নানা সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শোবিজ তারকাদের ঘিরে। শোবিজের মূল ধারায় কাজ না করলেও বিতর্কের জন্ম দিয়ে প্রকাশ্যে আসা এসব মডেল-অভিনেত্রীকে নিয়ে মুখ খুলেছেন শোবিজ তারকাদের অনেকে।

এ নিয়ে ২ আগস্ট (সোমবার) নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি।

তিনি লিখেছেন, একজন মানুষ হঠাৎ কিছু টাকা, কিংবা ত্রাণ বিতরণ করে, অথবা মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে, কোন রাজনৈতিক দলে নাম লেখালেই যেমন রাজনীতিবিদ হয়ে যায় না! তেমনি কেউ কোন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আবেদন করেছিল, অথবা সম্পর্কের সুবাধে, বা টাকা-ক্ষমতার জোরে ২-৪ টা নাটক, বিজ্ঞাপনের কোন একটা কোনায় অংশ গ্রহণ করলেই সে মডেল বা অভিনেত্রী হয়ে যায় না। এখন তো কারো অভিনয় করবার শখ থাকলেই, প্রোফাইল ফাইল-আপ করে মডেল-অভিনেত্রী লিখে দিয়ে।

শাহনাজ খুশি লেখেন, রাজনীতিবিদ, অভিনেত্রী, মডেল এ বিশেষণগুলোই বিশেষিত হবার জন্য, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হয়! লোভ সংবরণ করে, রোজ একটু একটু করে সীমাবদ্ধ অন্ধকারকে দু-হাতে পেছনে ঠেলে, ঐতিহ্যের আলোর নিচে যেয়ে দাঁড়াতে হয়! মানুষের ভালোবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়! প্রতিদিনের চর্চায় বিন্দু বিন্দু করে অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে হয়! ধারণ করতে, বহন করতে হয় সেটা, উঠাবসা, কথা, পোশাক, রুচি, পরিমন্ডল, পরিবার, দর্শন, ইত্যকার যাবতীয় সব কিছুতে! আপনি বহন করবেন আপনার আদর্শ, আর জনগণ বহন করবে আপনার আকার, প্রকার, সত্য!

এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, এটাই সত্য! তাহলে কেন নিউজগুলো প্রতিদিন এমন হচ্ছে? আজ সকালে মডেল ‘মৌ’ দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলাম! কারণ, মডেল মৌ বলতে সারা দেশের মানুষ সাদিয়া ইসলাম মৌকেই জানে। অভিনেত্রী থানায়, দেখে কুণ্ঠিত হয়ে যায়! বার বার একই হেডিংয়ে বিব্রত হতে হয়, অভিনয় এবং মডেলিং পেশায় থাকা মানুষের পরিবারগুলোকে! কারো ব্যক্তিগত উশৃঙ্খলাতাকে এত প্রচার করারই বা কি আছে? তাও কিনা যখন দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে! অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বিরামহীন লাশ এবং রোগী টানার সাইরেনে কাতর হচ্ছে সমগ্র সারা শহর, গ্রাম!

খুশির মতে, ডেংগুসহ চিকিৎসা ব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে দিশেহারা সারাদেশের মানুষ! প্রিয়জন হারিয়ে শান্ত্বনার জায়গা নাই কারো! মৃত্যু এখন সংখ্যা শুধু! সেখানে প্রহসনের এই নিউজগুলো ফলাও করবার কি এত প্রয়োজন আছে? ব্যক্তিগতভাবে আমার বেশি খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, ইন্টানেটের কারণে সারা দুনিয়া জানছে এ কথা। সে হোক কোন ক্রিকেটার, মডেল, অভিনেত্রী, ব্যাংকার অথবা গৃহবধূ! সব তো এই ছোট, অসুস্থ দেশটার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ।

খুশি আরও লেখেন, ‘যাদের নিউজ নিয়ে এত হামলে পড়েছেন, তাদেরকে এই নিউজের আগে, ঔ পরিচয়গুলোতে কেউ চিনত না, অথবা কেউ হয়তো তার কাজ থেকে সরে গেছে বহু বছর আগেই।

খুশির কথায়, মিডিয়া পঁচলে দেশ আলোকিত হবে না! মিডিয়াই দেশের একটা ঐতিহ্যের আলো ধরে রাখে, বহন করে! পারলে সে আলোটুকু রক্ষা করেন। এসব আগাছা নিরবে বেছে ফেলেন। আর হ্যাঁ, আগাছা কিন্তু আগাছাই! এর কোন আলাদা নাম নাই! আলাদা পদ নাই! না সংস্কৃতিতে, না রাজনীতিতে!

এই অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, যারা মিডিয়ার কর্ণধার, যাদের মদদে তরতর করে বেড়ে উঠছে এমন আগাছা,তারাও বোধ করি এ দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারবেন না!

আরআইজে