৪০ বছর বয়সে আচমকা মৃত্যু, শেষকৃত্য। বলিউডের তরুণ মডেল ও অভিনেতা সিদ্ধার্থর শূন্যতা নিয়ে গত দুদিন কেটেছে তার পরিবার এবং প্রিয়জনের। তার প্রেমিকা শেহনাজ গিল এখনও এই শক থেকে বের হতে পারেননি। সিদ্ধার্থর শেষযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন তার সহকর্মীদের অনেকেই। শেহনাজকে সেখানে ধরে রাখা মুশকিল ছিল বলে জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভারতের মুম্বাইয়ের ওশিয়াড়ার শ্মশানে সিদ্ধার্থর শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী সম্ভবনা শেঠ এবং তার স্বামী অবিনাশ দ্বিবেদী।

সিদ্ধার্থ মেরা বাচ্চা… বলতে বলতে সমানে কেঁদে যাচ্ছিলেন শেহনাজ

সেখান থেকে ফিরে ভারতীয় সাংবাদিকদের সম্ভবনা বলেন, “সিদ্ধার্থ মেরা বাচ্চা… বলতে বলতে সমানে কেঁদে যাচ্ছিল শেহনাজ। সিদ্ধার্থর মৃতদেহের পায়ের কাছে বসে পড়েছিল। যদিও পরে নিজেকে সামলে সব নিয়ম পালন করেছে। আন্টিও কাঁদছিলেন। কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। শেহনাজকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। সিদ্ধার্থর সঙ্গে এটা যদি হতে পারে, তা হলে আমাদের সঙ্গে সব কিছু হতে পারে। সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।” 

এক সাক্ষাৎকারে সিদ্ধার্থর মায়ের সম্পর্কে জ্যাসলিন বলেন, “সিদ্ধার্থর মা অত্যন্ত শক্ত মনের মহিলা। উনি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। আসলে ওর পরিবারের কেউই এখন কিছু বলতে পারবেন না। কিন্তু ওর মা আমাদেরকে যেটুকু বলছেন, তাতে আমরাই কান্না থামাতে পারছি না। উনি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। সব সময় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।”

সিদ্ধার্থ ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু মানুষ জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন সিদ্ধার্থ। শরীর ভালো লাগছিল না তার। তার মা ও শেহনাজ দুজনেই সে সময় বাড়িতেই ছিলেন। প্রথমে লেবুর পানি ও পরে সিদ্ধার্থকে আইসক্রিম খেতে দেন তারা। কিন্তু তা কাজে লাগে না। অস্বস্তি বাড়তে থাকে ক্রমশ। এরপর শেহনাজ ও তার মা তাঁকে আরাম করতে বলেন। কিন্তু ঘুম আসছিল না কিছুতেই। শেহনাজকে পাশে থাকতে বলেন সিড। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে বলেন। শেহনাজ তাই করতে থাকেন। শেহনাজের কোলে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ, সূত্র বলছে তেমনটাই।

ঘুমিয়ে পড়েন শেহনাজও। পরদিন সাতটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে শেহনাজ দেখেন ঠিক একই রকম ভাবে ‘ঘুমিয়ে’ আছেন সিদ্ধার্থ। তিনি ডাকতেই বুঝতে পারেন, সিদ্ধার্থ সাড়া দিচ্ছেন না। ভয় পেয়ে পরিবারের বাকিদের ডাকতে ছুটে যান তিনি। ফোন করা হয় পারিবারিক ডাক্তারকেও। তিনি এসেই বুঝতে পারেন সিদ্ধার্থ নেই। নিয়ে যাওয়া হয় কুপার হাসপাতালে। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

বিগ বস ১৩তে বিজয়ী হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। ওই শো’য়ে সিদ্ধার্থ ও শেহনাজের গিলের কেমিস্ট্রি ভালোবেসেছিল দর্শক। যদিও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এ কথা স্বীকার করেননি তারা। তবুও তাদের একসঙ্গে সময় কাটানো, নানা মুহূর্তকে ভালোবেসে অনুরাগীরা তাঁদের ভালোবেসে নাম দিয়েছিল ‘সিডনাজ’। তারা এই সম্পর্ককে বিয়ের মাধ্যমে পাকাপোক্ত করার কথাও ভাবছিলেন। ইতোমধ্যে বিয়ের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছিল পরিবারেও। 

দিন কয়েক আগে একসঙ্গে মিউজিক ভিডিওতেও অভিনয় করেছেন তারা। তাদের একসঙ্গে বড় পর্দায় দেখবার ইচ্ছে ছিল ভক্তদের। সেই ইচ্ছে যদিও আর পূরণ হলো না। 

‘বিগ বস ১৩’-র বিজেতা হওয়ার আগে থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে সিদ্ধার্থর পরিচিতি। ওই রিয়ালিটি শোয়ে জয়লাভের পর তিনি আরও জনপ্রিয় হন। ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া’-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। একতা কাপুরের শো ‘ব্রোকেন বাট বিউটিপুল ৩’- সিদ্ধার্থর শেষ কাজ। ওই শোয়ে সিদ্ধার্থর চরিত্রের নাম ছিল অগস্ত্য। ‘বালিকা বধূ’, ‘দিল সে দিল তক’-এর মতো টেলিভিশন ধারাবাহিকে সিদ্ধার্থর অভিনয় পছন্দ করেছিলেন দর্শক। ‘বিগ বস’ ছাড়াও ‘ঝলক দিখলা যা ৬’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’, ‘খতড়ো কে খিলাড়ি’র মতো শোতেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

এইচকে