চাপা নাকের মেয়েটাকে ছোট্ট থেকেই বাড়ির সবাই ‘চিনা’ নামে ডাকে। গান গেয়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়া হৃদিস্রোতা মণ্ডল অবশ্য ওই নামটাই বেশি পছন্দ করে। আর আদুরে গলার গায়িকা হৃদিস্রোতাকে নেটিজেনদের পছন্দ অনেকগুলো গানের জন্য।

সম্প্রতি তার গাওয়া ‘আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবিমন বান্ধিবি কেমনে?’ গানটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ লোকগানটি বেশি খ্যাত হয় শিল্পী সাহানা বাজপেয়ীর গলায়। আর সেই গান শুনে শুনেই শিখে নেয় চিনা। তারপর বাবা-মা গানটি রেকর্ড করে ফেসবুকে দেন। কয়েক দিনের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয়ে যায় হৃদিস্রোতার দরদ ভরা কণ্ঠ। এরপর আরও অনেক গানেই শ্রোতা পেতে শুরু করে সে। এখন চিনার নিজস্ব ফেসবুক পেজ তো আছেই, আছে ইউটিউব চ্যানেলও।

কার গান প্রিয়? এমন প্রশ্নে একটুও না ভেবে চিনার জবাব, ‘হেমন্তদাদুর (মুখোপাধ্যায়) গান বেস্ট লাগে। গীতা দত্তর গানও আমি শুনতে ভালোবাসি।’ গানের গলা যেমন বেশ পাকা তেমনই পাকা-পাকা কথাও বলতে পারে চিনা। পাকা গিন্নির মতো বলল, ‘জানো আমার মোস্ট ফেভারিট গান কোনটা?’ কোনটা? ‘হেমন্তদাদুর ‘তুমসে দূর চলে...’! তবে সব গানই আমার ফেভারিট লাগে,’— সাত বছরের খুদে গানের মানুষের মন্তব্য।

চিনার গানের পথ চলা শুরু বাবা-মায়ের হাত ধরে। বাবা, মা দুজনেই স্কুল শিক্ষক। দুজনেরই বিষয় ইংরেজি। তবে মা রূপা মণ্ডল মুখোপাধ্যায় ছোট থেকে গানের ভক্ত। সেই সুবাদে চিনা বাড়িতে গানের পরিবেশ পেয়েছে ছোট্ট থেকেই। রূপা বলেন, ‘স্পষ্ট করে কথা বলার আগেই মাম্মামের (হৃদিস্রোতার আর একটা ডাকনাম) গলায় সুর এসে গিয়েছিল। গানের প্রতি টান আছে বুঝতে পেরে ওকে শেখাতে শুরু করি।’ চিনার তখন দু’বছরও বয়স হয়নি। সেই সময় মায়ের স্কুলে গিয়েছিল একদিন। টিচার্স রুমে বসে একটি গান গেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। এখন শিল্পী রথিজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে গান শিখছে চিনা। তবে করোনাকালে সবটাই অনলাইনে। তেমনটা লেখাশোনার ক্ষেত্রেও। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী চিনার সেটা মোটেও ভালো লাগে না। তার কথায়, ‘অনলাইনে স্কুল একদম ভালো লাগে না। আমার বরং গান গাইতে বেশি ভালো লাগে। সবসময় গান করি।’

চিনার বাবা অরিন্দম মণ্ডল নিজেও গান লেখেন। গতবছর শিশু দিবসে মায়ের কথা ও সুরে ‘বন্ধু তুই কেমন আছিস বল, শাসন বারণ দূরে ঠেলে আয় না খেলি চল...’ গানটি গেয়েছিল চিনা। ইউটিউবে প্রকাশের জন্য রেকর্ডও করেছিল আশা অডিও। করোনাকালে ঘরে আটকে থাকা শিশুদের নিয়ে ওই গানটি বেশ জনপ্রিয় হয় নেটজগতে। আগামী শিশু দিবসেও ওই সংস্থা একটি গান রেকর্ড করবে। তার অনুশীলন চলছে। গানটি লিখেছেন চিনার বাবা অরিন্দম। সে গানের শুরুটা, ‘গান আমার ইচ্ছে গাড়ি...’। গানকে ‘ইচ্ছে গাড়ি’ বানাতে চাওয়া চিনা সদ্যই ‘জি বাংলা সিনেমা অরিজিনালস’-এর ‘মন খারাপের ওষুধ’ নামের একটি ছবিতে গেয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শিল্পী নচিকেতার গানেও রয়েছে চিনার গলা।

ভাইরাল শব্দটির সঙ্গে পরিচিতি চিনা। বড়দের মুখেই শুনেছে এ শব্দ। তবে ওর তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বয়সটা তো পুতুল খেলার। অনেক পুতুলও আছে চিনার। তবে হৃদি ভাসে সুরের স্রোতেই। সঙ্গে থাকলে বোঝা যায়, গানই ওর খেলা, খেলাই ওর গান।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসএসএইচ