দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি যে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিল্পী-কলাকুশলীরা। নাটক, মঞ্চ, সংগীতসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা একতাবদ্ধ হয়ে নেমেছেন রাজপথে। ব্যানার-ফেস্টুন আর স্লোগানের সঙ্গে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সমাবেশ করছেন শিল্পীরা। এই প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে টিভি সংশ্লিষ্ট ১৪টি সংগঠনের জোট ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

‘ঐতিহ্য ও কৃষ্টির এই দেশে, থাকি সবাই মিলেমিশে’- এই স্লোগান নিয়ে রাজপথে যেসব তারকা নেমেছেন, তাদের মধ্যে আছেন- অভিনয়শিল্পী মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, শমী কায়সার, তারিন জাহান, ইরেশ যাকের, দীপা খন্দকার, শাহেদ আলী সুজন, শামীম জামান, আহসান হাবিব নাসিম, মীর সাব্বির, সাজু মুনতাসির, তুষার খান, এলিনা শাম্মী, নিমা রহমান, রাশেদ মামুন অপু, হারুন অর রশিদ, আজাদ আবুল কালাম, জয়শ্রীকর জয়া, ​সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গোলাম কুদ্দুস, সম্প্রীতির বাংলাদেশের সভাপতি পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মাতা গাজী রাকায়েত, সালাহউদ্দিন লাভলু, সুমন আনোয়ার, চয়নিকা চৌধুরী, শিহাব শাহীন, কামরুজ্জামান সাগর, পিকলু চৌধুরী, দীপু হাজরা, নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহম্মদ, নাদিয়া আহমেদ, নাট্যকার মাসুম রেজা, সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ থেকে সংগীতশিল্পী সন্দীপন দাস, সমরজিৎ রায়, জয় শাহরিয়ার, সাব্বির জামান, ডি রকস্টার শুভ, পুলক অধিকারী, সংগীত ​পরিচালক রিপন খান, গীতিকার সাকী আহমেদ, মাহমুদ মানজুর, রবিউল ইসলাম জীবন, উপস্থাপক আনজাম মাসুদ, দেবাশীষ বিশ্বাস, ফেরদৌস বাপ্পী, আলিফসহ আরও অনেকে। 

প্রতিবাদ জানিয়ে তারিক আনাম খান বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এমন ঘটনা দেখে ব্যক্তি হিসেবে আমার খুব কষ্ট হয়। প্রতিবাদ যেভাবে হওয়া উচিৎ ছিল, সেভাবে হচ্ছে না একেবারেই। রাজনৈতিক দলগুলো খুব নিভু নিভু জায়গা থেকে করছে। ভোটের রাজনীতি, ক্ষমতার রাজনীতি থেকে সরে এসে উন্নত সমাজ তৈরি করতে না পারলে আমরা কেউই নিরাপদ না।’

অভিনেত্রী তারিন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করা লাগছে, এটা খুব দুঃখজনক। আমার জন্ম কুমিল্লাতে। ছোটবেলায় আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি, প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশে বড় হয়েছি। আমাদের ভেতরে সম্প্রীতি ছিল। কিন্তু কিছু দিন আগে কুমিল্লা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, বোঝাই যাচ্ছে এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। শুধু এটা নয়, বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি জঙ্গিবাদী এবং মৌলবাদীরা আমাদের শিল্পী সমাজকে প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিং করছেন। সেটার কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ এখনো গড়ে ওঠেনি। এসবের বিরুদ্ধে ঢাকায় কিছু প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু মূল আন্দোলনটা হওয়া উচিৎ সারা বাংলাদেশ জুড়ে। সরকারের কাছে আমার আবেদন, বঙ্গবন্ধু আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন, সেই পরিবেশটুকু আমরা ফেরত চাই।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলার সূচনা হয়। এরপর দেশের রংপুর, চাঁদপুর, সিলেট, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।

কেআই/আরআইজে