দিন কয়েক হলো অনুপম রায় গানের চর্চায়। তবুও তার ভাঙা জীবনের গল্প সাধারণের মুখে মুখে। আর সে আলোচনায় জড়িয়ে গেছে তার ১১ বছর আগে তৈরি করা গান, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’ শিল্পীর গান যেন তার জীবনের সঙ্গে নির্মমভাবে মিলে গেছে! অনুপম কি কোনো দিন ভেবেছিলেন, নিজের গানই তার জীবনের আয়না হয়ে উঠবে? কেমন লাগে, যখন গানের প্রতিটি পংক্তি মিলে যায় বাস্তবের সঙ্গে?

জবাব দেওয়ার আগে সম্প্রতি এক লাইভ আড্ডায় সেই গান অনুপমের কণ্ঠে। তার চোখ, হাসি, গান উপস্থাপনের ভঙ্গিতেই যেন উত্তর লুকিয়ে। যা সম্ভবত অনুপমের অনুরাগী-দর্শকদের অনেকেরই চোখ এড়ায়নি। গানের শেষে অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘নিজের জীবনের জাহাজ-মাস্তুল ছারখার হলে, সব কিছু মিলে গেলে, অসুবিধে তো হয়ই। অন্যান্যদের মতোই।’’ অনুপমের দাবি, তার গানের তালিকায় বেশ কিছু গানই দুঃখের। সেই বিষাদের কিছুটা তার কাল্পনিক। গান তৈরির খাতিরে নিজেকে দুঃখী চরিত্রে বসিয়েছেন কখনও। কখনও তিল হয়েছে তাল। ছোট সুখ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ-কথাকে সৃষ্টির তাগিদে বড় করে দেখিয়েছেন। দুঃখবিলাসী হয়ে।

তার পরেই যেন যাবতীয় আড়াল সরিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার তাগিদ। অনুপম মেনে নিয়েছেন, তিলে তিলে গড়া সেই গান যখন স্রষ্টাকেই বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করায় তখন আর পাঁচ জনের মতো তারও গলা বুজে আসে যন্ত্রণায়। ‘‘সবার যেমন কষ্ট হয়, আমিও তেমনই কষ্ট পাই’’, বক্তব্য তার। ‘‘আমি যখন পারফর্ম করি, গান গাই, তার প্রতিটি পংক্তিতে আবেগ জড়িয়ে থাকে। নইলে আমি গাইতে পারব না। শ্রোতা আমার সঙ্গে গলা মেলাবেন না। আমি যখন ‘বোবা টানেল’ গাইছি, ওই আলোটা এসে পড়ছে চোখেমুখে। মানুষ গাইছেন আমার সঙ্গে... প্রতিটি পংক্তির মধ্যে দিয়ে আমি তো আবার সেই জীবনটা বাঁচি!’’, সাফ জবাব তার।

মঞ্চের বাইরেও কি নিজের গান চোখে জল আনে অনুপমের? লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে অন্ধকারে একলা বসে নিজেকে স্বান্তনা দেন— বলেন, ‘যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন...’? গায়ক অস্বীকার করেননি সেই ব্যথার কথা। বলেছেন, ‘‘কষ্ট হয়। তবে সেই কষ্ট থেকে নিজেকে বার করে আনার তাগিদও থাকে। নইলে মনখারাপের চোরা স্রোতে ডুবব আমি। আমাকেও তো বাঁচতে হবে!’’

এসএম