লোকজ ও আধ্যাত্মিক ঘরানার গানে তার মতো জনপ্রিয়তা আর কেউ অর্জন করতে পারেননি। তার কণ্ঠ শহর পেরিয়ে গ্রাম, সবখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল বিশুদ্ধ বাতাসের মতো। তিনি সহজ কথা, সুরে গাইতেন ঠিকই। কিন্তু সেই সুর গেঁথে যেত মানুষের হৃদয়ে।

তিনি বারী সিদ্দিকী। কিংবদন্তি এই শিল্পীর চলে যাওয়ার দিন আজ। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের লোকসংগীতে অসামান্য শূন্যতা তৈরি করে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। এই দিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

বারী সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনার একটি সঙ্গীত পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা শুরু করেন তিনি। পরিবার থেকে হাতেখড়ি হয়েছিল বটে। তবে তিনি বেশ কয়েকজন ওস্তাদের কাছ থেকেও তামিল নিয়েছিলেন।

বারী সিদ্দিকীর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে তার বাঁশির কথা। উপমহাদেশের বিখ্যাত বংশীবাদক ছিলেন তিনি। তার বাঁশির সুরে মন হারাননি, এমন শ্রোতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দুই দশক তিনি বাঁশি বাজিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন তিনি। তিনি যখন বাঁশি বাজাতেন, সামনে থাকা শ্রোতাদের হৃদয় শীতল হয়ে চোখের সীমানা বেয়ে নেমে আসত জল।  

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ থেক একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বারী সিদ্দিকী অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বাঁশি বাজান বারী। তাও একটানা ৪৫ মিনিট। অসাধারণ সেই পরিবেশনায় তিনি মুগ্ধ করেন বিশ্ব শ্রোতাদের। এরপর দেশ-বিদেশের বহু অনুষ্ঠানে বাঁশির সুরে হৃদয় স্পর্শ করেছেন এই শিল্পী।

গায়ক হিসেবে বারী সিদ্দিকী পরিচিতি পান নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে। তার পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় গান করেই দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পান বারী। এরপর তার বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ‘দুঃখ রইলো মনে’, ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’, ‘সরলা’, ‘ভাবের দেশে চলো’, ‘সাদা রুমাল’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মাটির দেহ’, ‘মনে বড় জ্বালা’, ‘প্রেমের উৎসব’, ‘ভালোবাসার বসত বাড়ি’, ‘নিলুয়া বাতাস’ ও ‘দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি’।

বারী সিদ্দিকীর গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘রজনী’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’, ‘পুবালি বাতাসে’, মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ও ‘আমার মন্দ স্বভাব জেনেও’ ইত্যাদি।

কেআই/আরআইজে