২০২০ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা ইরফান খান। কঠিন সব চরিত্রকেও তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পর্দায় খুব সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতেন। শুধু ভারতীয় নয়, নিজের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন হলিউডসহ বাংলাদেশি ছবিতেও। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন তিনি। ফিরিয়েছেন হলিউডের নামজাদা পরিচালকের ছবির অফারও।

আজ ২৯ এপ্রিল (শনিবার) অভিনেতার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। জেনে নেওয়া যাক অভিনেতা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য, যা হয়তো আপনি জানেন না।

১. ইরফান ও তার এক বন্ধু সতীশ শর্মা ভালো ক্রিকেট খেলতেন এবং ইরফান পরবর্তীতে ভারতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ভিত্তি হিসেবে সুপরিচিত সিকে নায়ুডু টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব ২৩ দলের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাবে তিনি এই আসরে খেলতে পারেননি।

২. অভিনেতা হওয়ার আগে ইরফান খান ছিলেন এসি মেকানিক। ডাক পড়লে মুম্বাইয়ের এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে এয়ার কন্ডিশন মেরামত করতেন। এমনিভাবে একবার ডাক পড়েছিল বলিউড তারকা রাজেশ খান্নার বাড়িতে।

৩. বাংলাদেশি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’-এ অভিনয় করেন ইরফান। অনেকে মনে করেন, এটিই অভিনেতার প্রথম বাংলা সিনেমা। আদতে কিন্তু তা নয়, ইরফান প্রথম বাংলা সিনেমা করেন সেই ২০০৪ সালে। ‘শ্যাডোজ অব টাইম’ নামের সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন জার্মান নির্মাতা ফ্লোরিয়ান গ্যালেনবার্গার। কলকাতায় শুটিং হওয়া সিনেমাটিতে ইরফান ছাড়াও ছিলেন প্রশান্ত নারায়ণ, তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি।

৪. মীরা নায়ারের ‘দ্য নেশমেক’ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান অভিনেতা। একবার অস্কার অনুষ্ঠানের সময় প্রখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস ইরফানের কাছে গিয়ে ‘দ্য নেমশেক’-এ তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন।

৫. পরে মীরা নায়ারের সঙ্গে আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ইরফান। যে সিনেমাটির কথা অনেকেরই জানা নেই। ‘কোশার ভেজিটেরিয়ান’ নামের ছবিটি ছিল ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নিউইয়র্ক, আই লাভ ইউ’-তে। যেটি ছিল ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার সংকলন। সিনেমাটিতে ইরফানের সঙ্গে অভিনয় করেন অস্কারজয়ী তারকা নাটালি পোর্টম্যান।

৬. ইরফান খানের আরেকটি বহুল প্রশংসিত সিনেমা ‘দ্য লাঞ্চবক্স’। অনেকেরই জানা নেই, সিনেমাটি মর্যাদাপূর্ণ টরন্টো ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড জেতে। যে রেকর্ড নেই আর কোনো ভারতীয় সিনেমার।

৭. ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ ও ‘ডি-ডে’ সিনেমায় অভিনয়ের পূর্বনির্ধারিত সূচির কারণে ক্রিস্টোফার নোলানের মতো পরিচালকের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ইরফান।

৮. ২০০৮ সালে ‘মার্ডার অ্যাট তিসরি মঞ্চিল ৩০২’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করেন ইরফান। ছবিটির কাজ শেষ হয় পরের বছরই। কিন্তু মুক্তি পেতে পেতে লেগে যায় এক দশকেরও বেশি। শেষ পর্যন্ত ইরফানের মৃত্যুর পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সিনেমাটি মুক্তি পায়।

উল্লেখ্য, ইরফান খান দীর্ঘ এক বছর ধরে কঠিন নিউরো এন্ডোক্রিন কর্কটরোগে ভুগছিলেন। লন্ডনে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ফিরে আসেন। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল বৃহদন্ত্রে জটিলতার জন্য তাকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন অভিনেতা।