মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ’শনিবার বিকেল’ সেন্সর বোর্ডে আটকে রাখার ঘটনায় কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারা অবিলম্বে সিনেমাটি বাংলাদেশের উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, সিনেমাটি বাংলাদেশের আটকে রাখা হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

গত শনিবার টরন্টোর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সাউথ এশিয়ায় সিনেমাটি প্রদর্শিত হলে হলভর্তি দর্শকের প্রশংসায় সিক্ত হয়। উৎসবে যোগ দিতে আসা সিনেমাটির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাছে দর্শকরা জানতে চান-সিনেমাটি বাংলাদেশের আটকে রাখা হয়েছে কেন?

টরন্টোয় বসবাসরত সিনিয়র সাংবাদিক সৈকত রুশদী সিনেমাটি বাংলাদেশে দেখানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, “ইসলাম ধর্মের নামে জঙ্গী হামলা, নিরীহ ও নিরাপরাধ মানুষ হত্যা ও নিপীড়ন এবং তার প্রতিবাদ তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। বাংলাদেশে বা অপর কোনো দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের অজুহাতে এমন কোনো মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার বার্তা দিতে পারে 'শনিবার বিকেল'। সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র না দিলে বাংলাদেশের মানুষ সেই বার্তা থেকে বঞ্চিত হবে। আর ভিন দেশের মানুষ মনে করবে সিনেমাটি আটকে রেখে ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদের নামে জঙ্গীদের সহিংস হামলা ও মানুষ হত্যা করা যে উচিত নয় এই বার্তাটিকেই নিষিদ্ধ করতে চাইছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করবো, সেন্সর বোর্ড নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সিনেমাটি বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ছাড়পত্র দেবে।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করীম বাবুল বলেন, “ফারকীর 'শনিবার বিকেল' সিনেমাটি টরন্টোর সাউথ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখেছি। সিনেমাটির বিষয় বহুল আলোচিত এবং বাংলাদশে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার সাথে কিছু মিল থাকলেও পরিচালক তার মতো কাহিনিচিত্র তৈরি করেছেন। সেখানে নতুন গল্পকথা ও চরিত্রায়ন এবং সংলাপে পরিচালকের মতামত এসেছে। রয়েছে নিজস্ব নির্মাণশৈলী, স্টেডিক্যামের ব্যবহার।’ তিনি বলেন, একটি সিনেমার ভালো মন্দ খারাপ বিবেচনার ভার দর্শকদের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত। আশাকরি ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ‘শনিববার বিকেল’ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন।

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার দৃশ্য

’নতুন দেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, “বাংলাদেশে ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর বোর্ডের লাল ফিতায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে, প্রশংসিত হচ্ছে। একইসঙ্গে তারা এও জেনে যাচ্ছে- বাংলাদেশে এই ছবিটি দেখাতে দেয়া হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটি দেখার পর টরন্টোর দর্শকদের মনে যেমন প্রশ্ন জেগেছে- কেন এই সিনেমা আটকে রাখা হয়েছে, একই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশেও হয়েছে। আর এই প্রশ্ন তো বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি বার্তাই দেয়, সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশে শিল্প সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রিত, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেন্সরবোর্ডের লাল ফিতায় বন্দি করে রাখা হচ্ছে। কোনো সরকারের জন্যই নিশ্চয় এটি স্বস্তিদায়ক নয়। ’শনিবার বিকেল’কে মুক্ত করে দেয়া হোক, নির্বিঘ্নে প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হোক।”

‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’ এর প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল বলেন, “সত্যিই দুঃখজনক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র আজো মানুষের হৃদয়ে। ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর বোর্ড কর্তৃক আটকে রাখায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, গত পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে এর আগে এমন সমষ্টিগত প্রতিবাদ অন্য কোনও আটকে পড়া সিনেমার জন্য ঘটেনি। সারাবিশ্বের প্রবাসী, নির্মাতা, শিল্পী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সিনেমাটি মুক্তির আহ্বান ও আটকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

আরআইজে