বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নায়ক তিনি। শাবনূর-পূর্ণিমা থেকে শুরু করে হালের মম-মিমদের বিপরীতেও অভিনয় করেছেন। শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। বয়সের সংখ্যা অর্ধশতক ছুঁলেও অভিনয় খিদে এখনও তরুণদের মতো। হ্যাঁ, বলছিলাম ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা রিয়াজের কথা। আজ বুধবার (২৬ অক্টোবর) এ বহুমুখী অভিনেতার জন্মদিন। এদিন বয়স ৫০-এ পা দিয়েছেন তিনি।

১৯৭২ সালের ২৬ অক্টোবর ফরিদপুরের কমলাপুরে জন্মগ্রহণ করেন রিয়াজ। তার পুরো নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক। ১৯৯৫ সালে চাচাতো বোন চিত্রনায়িকা ববিতার হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতের পথ চেনা। কিন্তু অভিনয়ে আসার কোনো ইচ্ছাই ছিল না জনপ্রিয় এ নায়কের।

ছোটবেলায় তার ইচ্ছা ছিল স্থপতি হবেন। কিন্তু পরে হয়ে যান বৈমানিক। পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন রিয়াজ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে বিমানচালক হিসেবে যোগদান করেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।

শোনা যায়, রিয়াজ ঢাকায় আসার পর তাকে নিয়ে একদিন এফডিসিতে শুটিংয়ে যান বড় বোন ববিতা। ওই সিনেমাতে ববিতার বিপরীতে নায়ক ছিলেন প্রয়াত অ্যাকশন হিরো জসিম। তার নজরে পড়েন রিয়াজ। চকলেট বয় রিয়াজকে দেখে মনে ধরে জসিমের। অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তাকে। এরপর ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাংলার নায়ক’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় রিয়াজের।

‘বাংলার নায়ক’ সিনেমার মূল ভূমিকায় ছিলেন জসিম ও শাবানা। সেখানে রিয়াজ অভিনয় করেন শাবানার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে। তবে তিনি পরিচিতি পান ব্যবসাসফল ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ‘দুই দুয়ারী’ ‘শ্যামল ছায়া’ ‘হাজার বছর ধরে’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘শিরি-ফরহাদ’সহ অনেক ব্যবসাসফল সিনেমাতে অভিনয় করেন।

‘রেডিও’ সিনেমার শুটিংয়ে রিয়াজ

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বহু নাটকেও অভিনয় করেছেন রিয়াজ। বিশেষ করে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকেই দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া প্রযোজক হিসেবেও খ্যাতি আছে রিয়াজের। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার ব্লকবাস্টার ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন তিনি। দুই জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর ও পূর্ণিমার সঙ্গে রিয়াজের জুটি দর্শকদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের।

সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর রিয়াজ-শাবনূর ও রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটিই চলচ্চিত্র মহলে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। এছাড়া রিয়াজ কাজ করেছেন নায়িকা পপি, শাওন এবং এ প্রজন্মের মম, তিশা, মাহিদের সঙ্গেও। অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ এবং সাতবার ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ ঘরে তুলেছেন রিয়াজ।

বড় পর্দায় অনেক বছর ধরেই অনিয়মিত রিয়াজ। কিছুদিন আগে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমায় দেখা গেছে তাকে। সেটাও অর্ধযুগ পর। নতুন করে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব’ ও ‘রেডিও’ সিনেমায় কাজ করেছেন। সেগুলোর মুক্তির তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

রিয়াজের মতে, তিনি নতুন সিনেমায় কাজ করতে আগ্রহী। তবে এই পর্যায়ে যে ধরনের গল্পে কাজ করার ইচ্ছে, সেরকম কোনো প্রজেক্ট আপাতত হাতে নেই।

ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর মডেল মুশফিকা তিনাকে বিয়ে করেন রিয়াজ। তিনা ছিলেন ২০০৪ সালের বিনোদন বিচিত্রার ফটো‍সুন্দরী বিজয়ী। বিয়ের প্রায় আট বছর পর ২০১৫ সালের ১ জুন কন্যাসন্তানের বাবা হন রিয়াজ-তিনা দম্পতি। অভিনয়ের পাশাপাশি রিয়াজ বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যবসা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কেএইচটি/আরআইজে