শুধু অভিনয় নয়, বরং অভিনয়কে কেন্দ্র করেই যার দিনপার হতো তিনি নায়করাজ রাজ্জাক। পুরো জীবনের দুই ভাগ অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনাও করতেন নিয়মিত। ছেলেদেরকেও এনেছিলেন চলচ্চিত্র জগতে। আমৃত্যু অভিনয়কে ভালোবেসে যাওয়া এই কিংবদন্তির না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার দিন আজ।

২০১৭ সালের আজকের দিনে (১৬ আগস্ট) সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান অনন্তলোকে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিদায় জানিয়েছিলেন ক্ষণস্থায়ী জীবনকে। দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেল। নায়করাজ আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন ভক্ত-দর্শকের তথা আপামর জনতার শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায়। কর্মগুণে চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন ধরায়।  

নায়করাজের প্রয়াণ দিবস স্মরণে বিভিন্ন আয়োজন থাকছে আজকের দিনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নায়ককে স্মরণ করে পোস্ট করেছেন অনেকেই। নিজের হাতে গড়ে যাওয়া চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও থাকছে আয়োজন। সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক বলেন, ‘আজ সোমবার বাদ আসর ওনার স্মরণে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। সমিতির নেতা-সদস্যদের অনেকেই এতে অংশ নেবেন। আমরা সবাই মিলে প্রিয় নায়করাজের জন্য দোয়া করব।’

দিনটিতে পরিবারের পক্ষ থেকেও থাকছে দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠান। নায়করাজপুত্র সম্রাট বলেন, ‘আর কিছু নয়, আমার বাবার জন্য শুধু একটু দোয়া চাই সবার কাছে।’

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায়। তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। দেশ ভাগের সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। অবশ্য কলকাতায় থাকতেই তিনি অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তার পথচলার সূচনা।

বাংলাদেশে আসার পর রাজ্জাকের সিনেমা জীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। সিনেমাটির নাম ছিল ’১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’। এখানে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন রাজ্জাক।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ। এর মধ্যে বাংলার পাশাপাশি উর্দু সিনেমাও ছিল। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’ এবং ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ইত্যাদি।

অভিনয়ের পাশাপাশি নায়করাজ রাজ্জাক ১৬ সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন। নিজের দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটকে সিনেমায় এনেছেন। তারাও ছড়িয়েছেন অভিনয়ের দ্যুতি।

এক জীবনে নায়করাজের প্রাপ্তির ঝুলিতে প্রায় সবই ছিল। ২০১৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একই আয়োজনে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া, বাচসাস, বাবিসাস ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারেও তাকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়।

কেএইচটি