কেউ হাউমাউ করে কাঁদছেন, কেউ লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন, কেউ অন্যের ঘাড়ে দোষারোপের সংলাপ দিচ্ছেন; দেশের সিনেমা পাড়ার অবস্থা আপাতত এমন। এফডিসিতে প্রবেশ করলে সিনেমার শুটিং নয়, এখন দেখা যায় ভোটের কাড়াকাড়ি।

আজ ২৩ জানুয়ারি বিষয়টি একটু বেশিই ভাবাচ্ছে। কারণ আজ ঢালিউডের রাজার জন্মদিন। নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন। রাজা নেই, রাজ্য আছে। কিন্তু আছে তো কেবল নামেই। যেখানে কাজের চেয়ে দলাদলি, কাদা ছোঁড়াছুড়ি, গদি দখলের লড়াই বেশি চলে।

ক’দিন পরই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। তারা এই সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন শিল্পীদের এক ছায়াতলে রাখার জন্য। শিল্পীদের যাবতীয় সংকট-সমস্যা সমাধানের জন্য। কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে এখন সেই সমিতি যেন ক্ষমতার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে!

আগেও শিল্পী সমিতির নির্বাচন হতো, নতুন কমিটি গঠন হতো। কিন্তু বর্তমানের মতো এতোটা দলাদলি ছিল না। সিনেমার পরিবেশে যাদের বহু আগে থেকে চলাফেরা, তাদের মতে, আগে সমিতি নয়, সিনেমার কাজই ছিল মুখ্য।

ঢালিউডের এমন পরিস্থিতি দেখলে অনেকের মনেই আক্ষেপ জাগে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, যদি রাজা থাকতেন। হয়ত নিজের স্নেহময় শাসনে, পরামর্শে গুছিয়ে রাখতেন রূপালি আঙিনা।

নায়করাজের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায়। তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। দেশ ভাগের সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। অবশ্য কলকাতায় থাকতেই তিনি অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তার পথচলার সূচনা।

বাংলাদেশে আসার পর রাজ্জাকের সিনেমা জীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। সিনেমাটির নাম ছিল ’১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’। এখানে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন রাজ্জাক।

দীর্ঘ সিনে জীবনে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ। এর মধ্যে বাংলার পাশাপাশি উর্দু সিনেমাও ছিল। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’ এবং ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ইত্যাদি।

অভিনয়ের পাশাপাশি নায়করাজ রাজ্জাক ১৬ সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন। নিজের দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটকে সিনেমায় এনেছেন। তারাও ছড়িয়েছেন অভিনয়ের দ্যুতি।

এক জীবনে নায়করাজের প্রাপ্তির ঝুলিতে প্রায় সবই ছিল। ২০১৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় তাকে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একই আয়োজনে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া, বাচসাস, বাবিসাস ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারেও তাকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মারা যান এই কিংবদন্তি অভিনেতা।

কেআই/আরআইজে