ফিরে দেখা ২০২৫
তারকা অঙ্গনে হারিয়েছি যাদের
একটি বছরে শুধু ক্যালেন্ডারের পাতাই বদলায় না, বদলায় নিয়তি, বাস্তবতা; আর রেখে যায় কিছু স্মৃতি। একটু স্মরণ করলেই এমন সব ব্যক্তিত্বের বিদায়ের কথা আসবে; যা শোকাতুর করেছে দেশবাসীকে। বিদায়ী বছরে দেশের তারকা অঙ্গনে আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের ফের মনে করিয়ে দিতেই এই আয়োজন; যাদের অবিস্মরণীয় অবদান দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে রেখেছে বড় ভূমিকা।
অঞ্জনা রহমান
বিজ্ঞাপন
ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের নায়িকা অঞ্জনা রহমানকেই শুরুতে স্মরণ করা যাক। চলতি বছরের শুরুতেই আসে দুঃসংবাদ। ৪ জানুয়ারি ভোরে খবর পাওয়া যায়, ‘নায়িকা অঞ্জনা রহমান আর নেই।’ মুহূর্তেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে পড়ে যায় শোকের ছায়া। নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনয়ে আসা এই অভিনেত্রী তিন শতাধিক সিনেমায় কাজ করেছেন। পর্দায় তার উপস্থিতি আজও দর্শকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
প্রবীর মিত্র
বিজ্ঞাপন
অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুর পরদিনই আরও এক দুঃসংবাদ। ৫ জানুয়ারি প্রয়াত হন বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে বাস্তবধর্মী ও চরিত্রনির্ভর অভিনয়ের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন তিনি। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে তার অভিনয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
সন্জীদা খাতুন
গত ২৫ মার্চ নিভে যায় সংস্কৃতিচর্চার এক দীপ্ত বাতিঘর। ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুন ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক। শিক্ষকতা, গবেষণা ও সংগঠনের মধ্য দিয়ে তিনি আজীবন সংস্কৃতিকে লালন করেছেন।
জীনাত রেহানা
কালজয়ী গান ‘সাগরের তীর থেকে’-এর কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা মারা যান গত ২ জুলাই। এক সময় বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত গাওয়া এই শিল্পী শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন বহু স্মরণীয় গান, যা আজও নস্টালজিয়া জাগায়।
এ কে রাতুল
প্রয়াত চিত্রনায়ক জসীমের সন্তান ছিলেন এ কে রাতুল। তবে সংগীতশিল্পী হিসেবেও নিজের আলাদা পরিচয় গড়েছিলেন। ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট ছিলেন তিনি। তরুণ প্রজন্মের সংগীতে তার অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গত ২৭ জুলাই, তার এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি অনেকেই।
ফরিদা পারভীন
লোকসংগীতের শক্তিশালী কণ্ঠ ফরিদা পারভীন না ফেরার দেশে চলে যান গত ১৩ সেপ্টেম্বর। লালনগীতি দিয়ে যিনি নিজেকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সেই শিল্পী ছিলেন সংগীতের শেকড়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
সেলিম হায়দার
গত ২৭ নভেম্বর মারা যান ফিডব্যাক ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গিটারিস্ট সেলিম হায়দার। ব্যান্ড সংগীতে তার সুর ও গিটার বাজানো ছিল অনন্য। ‘এই দিন চিরদিন রবে’র মতো গান তার সৃষ্টিশীলতার সাক্ষ্য দেয়।
জেনস সুমন
কণ্ঠশিল্পী জেনস সুমন চলে যান গত ২৮ নভেম্বর। ‘একটা চাদর হবে’সহ জনপ্রিয় বহু গানে তিনি শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা গানের এক পরিচিত কণ্ঠ হিসেবে তাকে মনে রাখবে সংগীতপ্রেমীরা।
উল্লেখ্য, এই নাম-ব্যক্তিত্বগুলো হয়তো হারিয়ে গিয়েও হারিয়ে যায়নি; তাদের গান, চরিত্র আর সৃষ্টিই তাদের রেখে গেছে আমাদের মাঝে। সময় এগিয়ে যাবে, কিন্তু এই নামগুলো রয়ে যাবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে, গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনে উল্লেখিত তালিকার ক্রম কোনো শিল্পীর মর্যাদা বা গুরুত্ব নির্দেশ করে না।
ডিএ