গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচন। যেখানে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের ইলিয়াস কাঞ্চন আর সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের জায়েদ খান।

তবে এই নির্বাচনে শেষ হাসি হাসতে পারেননি শুরু থেকেই আলোচনায় থাকা ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ। কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়ে পরাজয় বরণ করেছেন তিনি। তার সঙ্গে একই পদে হেরেছেন ডি এ তায়েবও। দু’জনের ভোটের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫৬ ও ১১২। এই পদে জিতেছেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের মনোয়ার হোসেন ডিপজল (২১৯ ভোট) এবং মাসুম পারভেজ রুবেল (১৯১ ভোট)।

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই নিজ প্যানেলের জন্য সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন রিয়াজ। প্রচারণার এক পর্যায়ে এফডিসিতে একজন বৃদ্ধ শিল্পীকে জড়িয়ে ধরে আবেগের বশে কেঁদে ফেলেন তিনি। সেই ঘটনায় সমালোচকদের নিন্দাও সহ্য করতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে খুনের হুমকিও পেয়েছেন নন্দিত এ নায়ক। কিন্তু দমে যাননি রিয়াজ। শিল্পীদের পাশে থাকার আশ্বাসে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন নিয়মিত। সংবাদমাধ্যম ও শিল্পীদের সঙ্গে আলাপের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্যানেলের মুখপাত্রের মতো।

এরপরও কীভাবে ডিপজল ও রুবেলের কাছে হারলেন রিয়াজ? তা নিয়ে ভক্তদের মনে নানান প্রশ্ন। অনেকে প্রিয় নায়কের পরাজয়ে আফসোসের আগুনেও পুড়ছেন।

এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঢাকা পোস্ট যে ফল পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মূলত নিজ প্যানেল কাঞ্চন-নিপুণকে জেতাতে গিয়েই হেরেছেন রিয়াজ। বলা যায় পুরো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগও স্বীকার করেছেন ‘মনের মাঝে তুমি’ নায়ক।

নির্বাচনের দিন দুই প্যানেলের প্রার্থীরা যখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বুথের বাইরে থেকে সবার কাছে ভোট চেয়েছেন, ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন, ভোট দেয়ার আবদার করেছেন, নায়ক রিয়াজ তখন অতন্দ্র প্রহরীর মতো বুথের ভেতরে নিজ প্যানেলের ভোট পাহারায়। ফলে কোনো ভোটারের সঙ্গেই এদিন তার কথা বলার, ভোট চাওয়া সুযোগ হয়নি। রিয়াজ বুথের বাইরে থেকে অন্য প্রার্থীদের মতো কাজ করতে পারলে, ভোট চাইতে পারলে ১৫৬ ভোটের জায়গায় তার ভোটটা আরও বেশি হতে পারত, তিনি জিততেও পারতেন!

রিয়াজ জানতেন, তিনি বাইরে থেকে ভোট চাইলে হয়ত জিতে যাবেন। কিন্তু তার মনে শঙ্কা ছিল, বুথের ভেতরে অন্যরকম কিছু হয়ে যেতে পারে। আর সে কারণেই নিজ প্যানেলের ভোট পাহারার দায়িত্ব তুলে নেন কাঁধে। তাই দিনশেষে হেরে গেলেও কোনো আফসোস নেই এই নায়কের।

বিষয়টি নিয়ে রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় রিয়াজের। তিনি বলেন, ‘আমি যদি ভেতরে না থাকতাম আমার প্যানেল বা প্রেসিডেন্ট কাউকেই আনতে পারতাম না। যদি ভেতরে শকুনের দৃষ্টি নিয়ে না থাকতাম তাহলে হয়ত তাদের পুরো প্যানেল জিতে যেত। প্যানেলকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজে হেরে গেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি হ্যাপি।’

হেরে গিয়েও সবার জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করে এই নির্বাচনে অন্যভাবে সবচেয়ে বড় বিজয়ী হয়েছেন রিয়াজ। এ কথা মনে করিয়ে দিতেই তার ভাষ্য, ‘আমার প্যানেলকে আনতে হবে। আমার কাছে নিজেরটা কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমি মনে করি এর মাধ্যমেই আমি জয়ী হয়েছি। এবং আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ এটা ব্যক্তিগত কোনো চিন্তা নয়।’

রিয়াজ বলেন, ‘একটা দল হিসেবে আমরা এই নির্বাচনে লড়েছি। আমার ইচ্ছা ছিল তাদেরকে জায়গাটায় আনা। এটার জন্য কেউ আমাকে বাহবা দিলো, ক্রেডিট দিলো সেটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। পুরো নির্বাচনেই আমি টিমের হয়ে কাজ করেছি, নিজের জন্য নয়। আমি যদি নিজের জন্য ১০ পারসেন্টও কাজ করতাম, আমাকে ঠেকানোর ক্ষমতা কারো ছিল না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমি আসতাম হয়ত। তবে আমার প্যানেলের অনেকেই বাদ পড়ত।’

সর্বশেষ ফল নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানান এই নায়ক। বললেন, ‘নির্বাচনের ফল নিয়ে কোনো কনফিউশন নেই। আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রেজাল্ট টেম্পারিং করার কোনো সুযোগও ছিল না। যদি আমরা না থাকতাম, তা হলে হয়তো টেম্পারিং হতে পারতো। হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’

রিয়াজের পরাজয় ভক্তদের কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু জয়-পরাজয়ের উর্ধে গিয়ে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেখানে তার চেয়ে বড় জয়ী আর কেউ ছিল না।

আরআইজে/কেআই