গত ৮ মে গুলিস্তানের হকার্স মার্কেটটি গুঁড়িয়ে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন / ছবি- ঢাকা পোস্ট

৮ মে, ঈদের পর ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঢাকায় ফিরে কেবল দোকান খুলেছেন। হঠাৎ এলো সিটি করপোরেশন থেকে বার্তা। আজই দোকান ভেঙে ফেলা হবে, দ্রুত সরাতে হবে মালামাল। এমন খবরে গুলিস্তানের হকার্স মার্কেটের দোকানিরা জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

কেউ পিকআপ ভ্যান, কেউবা রিকশা ভ্যানে দ্রুত সরাতে শুরু করেন মালামাল। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে দাবি করা হয়, গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত হকার্স মার্কেটটি ভেঙে দেওয়া হবে— এমন নোটিশ ব্যবসায়ীদের একাধিকবার পাঠানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বিষয়টি জানতেনই না। ঈদের পর তারা যখন বাড়ি থেকে এসে দোকান খুলতে শুরু করেছেন, ঠিক সে সময় তাদের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে দোকানিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে

কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বিষয়টি জানতেনই না। ঈদের পর তারা যখন বাড়ি থেকে এসে দোকান খুলতে শুরু করেছেন, ঠিক সে সময় তাদের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে দোকানিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, আগে জানতে পারলে তারা সুন্দরভাবে মালামাল সরিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। 

তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের আশা, পরবর্তীতে এখানে যখন বহুতল মার্কেট নির্মাণ হবে, তখন তাদের যেন নতুন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়।

হকার্স মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, নোটিশ ছাড়াই তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, গুলিস্তান মাজারের ঠিক উল্টো পাশে ২৫ কাঠা জায়গার ওপর দোতলা টিনশেড মার্কেটটির মালিক দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৪৭ জন। অবৈধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। গত ৮ মে ডিএসসিসি অবৈধ পাঁচ শতাধিক দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। এখন সেখানে ১০ তলা মার্কেট নির্মাণ করা হবে। যে কারণে উচ্ছেদের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ মার্কেটটির জায়গা প্রকৌশল বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছে।

গুলিস্তান মাজারের ঠিক উল্টো পাশে ২৫ কাঠা জায়গার ওপর দোতলা টিনশেড মার্কেটটির মালিক দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৪৭ জন। অবৈধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। গত ৮ মে ডিএসসিসি অবৈধ পাঁচ শতাধিক দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। এখন সেখানে ১০ তলা মার্কেট নির্মাণ করা হবে

ক্ষতিগ্রস্ত ‘ইউনিক স্পোর্টস’ দোকানের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক বছর হলো এখানে দোকান চালাই। মার্কেট ভাঙার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। ঈদের পর যে দিন দোকান খুলি, সে দিনই দোকান ভাঙার কথা জানতে পারি। দ্রুত পিকআপ ভ্যান এনে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। অনেকেই জিনিসপত্র সরাতে পারেননি।

‘যাদের অন্য মার্কেটে দোকান আছে তারা হয়তো ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু আমার মতো যাদের আর কোনো দোকান নেই তাদের কথা একবারও কেউ ভাবল না। এখন আমরা কই যাব, সংসার কীভাবে চালাব? অনেকে রাস্তায় অস্থায়ী দোকান দিছে, অনেকে আবার মালামাল বিক্রি করে ফেলছে। ক্ষতি যা হবার হয়েছে, এখন আমাদের একটাই দাবি, বহুতল মার্কেট নির্মাণের পর আমাদের যেন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

ক্ষতি যা হবার হয়েছে, এখন নতুন মার্কেট নির্মাণ হলে সেখানে দোকান বরাদ্দ চান ব্যবসায়ীরা / ছবি- ঢাকা পোস্ট  

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান-মালিক জুয়েল রানা বলেন, এ মার্কেটে প্রকৃত যারা দোকান-মালিক তাদের অধিকাংশই তৃতীয় পক্ষের কাছে দোকান ভাড়া দিয়েছিল। মূলত সমস্যায় পড়েছে তারাই। প্রথমত, সময় না দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করেই দোকান ভেঙে দেওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। সিটি করপোরেশনের উচিত ছিল অন্তত সপ্তাহ খানেক আগে তাদের বিষয়টি জানানো। এখন সবকিছু বিবেচনা করে সিটি করপোরেশনের উচিত হবে, যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন মার্কেট হওয়ার পর দোকান বরাদ্দ দেওয়া।

‘ন্যাশনাল স্পোর্টস’-এর মালিক সাগর আহমেদ বলেন, ভাড়া দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলাম। দোকানের মূল মালিক অন্যজন। তার কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে দোকানটি ভাড়া নেই। দোকানের মালামাল, কর্মচারী সবকিছু আমার। কিন্তু ভাঙা হবে, এখানে নতুন মার্কেট হবে, কিছুই জানানো হয়নি আমাকে। ভাগ্যিস ওইদিন দোকান খুলেছিলাম। বহু কষ্টে ভ্যান রিকশা জোগাড় করে মালামাল একটা ভাড়া গোডাউনে রেখেছি। এখন কর্মচারীসহ আমি ফুটপাতে সেগুলো বিক্রি করছি।

‘মার্কেটটি ভাঙায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমার মতো ভাড়াটে দোকানিরা। হঠাৎ এভাবে মার্কেট ভেঙে দেওয়া সিটি করপোরেশনের উচিত হয়নি। মালিক সমিতির কাছে ক্ষোভ জানিয়েছি। এরপরও চাইব, দ্রুত এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হোক এবং আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হোক।’

কর্তৃপক্ষ বলছে, হকার্স মার্কেটে গড়ে ওঠা ৫০০-এর অধিক দোকান অবৈধ। এ কারণে উচ্ছেদ করা হয়েছে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ভেঙে ফেলা হকার্স মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, টিনশেডের মার্কেটটির কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এখানে ১৪৭টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গড়ে ওঠে ৫০০-এর বেশি দোকান। তাই আমাদের দাবি ছিল মার্কেটটিতে যেন শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এ কারণে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিটি করপোরেশনের কাছে দাবি জানায় এখানে আধুনিক ও বহুতল একটা মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হোক। সিটি করপোরেশন আমাদের দাবি শুনেছে। তারা মার্কেটটি ফাঁকা করে দিতে বারবার নোটিশ দিয়েছে। পরে সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে আমরা রমজান মাসটা চেয়ে নেই। ঈদ শেষে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পাশাপাশি মার্কেটটি ভেঙে ফেলা হয়। এখন এখানে বহুতল ও আধুনিক একটি মার্কেট নির্মাণ হবে। যারা এখানকার বৈধ ব্যবসায়ী তারা লটারির মাধ্যমে নতুন দোকান বরাদ্দ পাবেন।

গত ৮ মে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত হকার্স মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। উচ্ছেদ করা হয় পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকান। পরে টিনশেডের মার্কেটটি খালি করে ফেলা হয়। ওই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন এখানে একটি আধুনিক ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করবে। এ কারণে মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এখানে বহুতল মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন এ বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এ মার্কেটে পাঁচ শতাধিক দোকান অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। অথচ এখানে বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪৭টি। অবৈধ দখলদারদের বারবার আমরা সরে যেতে নোটিশ দিয়েছি। মার্কেট ভাঙা হবে— এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে একাধিকবার। পরে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। ঈদ শেষে মার্কেটটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন এখানে আধুনিক ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এএসএস/এমএআর/