২০২২ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি আলোচিত রায়, আদেশ ও সিদ্ধান্ত এসেছে। পুরনো ঢাকার হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান বাতিল, বছর জুড়ে নিপুণ-জায়েদ খানের আইনি লড়াই, কাবিননামায় কুমারি শব্দ বাতিল করে যুগান্তকারী রায় এসেছে।

এ ছাড়াও চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করে রায়, সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বলে রায়, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা দিতে রায়, এক তরুণীকে কানাডা সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার রায়সহ বিভিন্ন রায় ও আদেশের কারণে মানুষের দৃষ্টি ছিল উচ্চ আদালতের দিকে।

বছরজুড়ে শিল্পী সমিতির সম্পাদক পদ নিয়ে আইনি লড়াই 
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পদক পদ নিয়ে বছরজুড়ে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চলেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জায়েদ খানের রিটের মাধ্যমে আইনি লড়াই শুরু হয়। আর ২১ নভেম্বর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার মাধ্যমে আপাতত আইনি লড়াই শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে তাকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এর ফলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।  

গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। পরে নিপুণ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আবেদন করলে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে আপিল বোর্ড। ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন জায়েদ খান।

হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহালের রায় 
বিদায়ী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর ৯ ফেব্রুয়ারি এ রায় প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী হাজী সেলিম নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। এখনও কারাগারে রয়েছেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান বাতিল
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল ২০২২ সালের একটি অন্যতম আলোচিত রায়। গত ২৫ আগস্ট সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। 

পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেন। একইসঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। ৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট
৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় বিদায়ী বছরের ২২ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন খারিজ করে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য হলেন- এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান। তারা আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন।

আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। তাছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো।  

মোমবাতির আলোতে হাইকোর্টে বিচারকাজ 
গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও। তবে বিদ্যুৎ না থাকলেও থেমে ছিল না উচ্চ আদালতের বিচারকাজ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোতে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন বিচারপতিরা।

আদালতে উপস্থিত থাকা একাধিক আইনজীবী ঢাকা পোস্টকে জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুপ্রিম কোর্ট। এ সময় এনেক্স ভবনের জেনারেটরও বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিচারকাজ বন্ধ না করে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং এজলাস কক্ষে থাকা আইনজীবীদের মোবাইলের লাইটের আলোতে বিচারকাজ চলতে থাকে। প্রায় সোয়া ঘণ্টা মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

আরও পড়ুন : ‘হুদার’ সংকটে চ্যালেঞ্জে ‘আউয়াল’, আস্থা নিয়ে সংশয়

কাবিননামায় কুমারি শব্দ বাতিল করে যুগান্তকারী রায় 
মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিননামার ৫ নম্বর কলামে থাকা ‘কুমারি’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থি এবং তা বাতিল ঘোষণা করে গত ১৭ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ‘কাবিননামায় কুমারি শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থি’। এ কারণে ছয় মাসের মধ্যে কাবিননামার ফরম থেকে ‘কুমারি’ শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন।  

ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা দিতে হবে 
বিদায়ী বছরের ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন,  এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থীদের ৭টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা দাখিল করতে হবে, এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধতা ঘোষণার রায়ে ১৭ নভেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। 

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, অন্যান্য নির্বাচনে নোমিনেশন পেপারের সঙ্গে ৭টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা দেওয়া হয় না। যদিও ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ২৬(৩) এ হলফনামা দেওয়ার কথ বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিতে শুধুমাত্র প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হলফনামা দেওয়ার কথা নেই। হাইকোর্ট বলেছেন, যেহেতু বিধিমালার ওপরে আইন প্রাধান্য পাবে সে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রার্থীদের হলফনামা দাখিল করতে হবে।

চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থি 
চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি- এটা বিদায়ী বছরের অন্যতম আলোচিত রায়। গত ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ে বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থি। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইড লাইন করে দিয়েছেন।  

সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয় 
কোনো সাংবাদিক তার নিউজের তথ্যের সোর্স কারো কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এটিও বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রায় ছিল।  

বিদায়ী বছরের ২৩ অক্টোবর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ আলোচিত এ রায় দেন। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেওয়া আছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ও গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আদালত রায়ে বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরে সমাজের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমের কাজ হলো জনগণকে সজাগ ও সচেতন করা। আদালত বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি-অর্থ পাচার ফলাও করে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে হলুদ সাংবাদিকতা কখনও সমর্থন করা যায় না। 
আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে মনোযোগী হতে হবে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ আছে— এ ধরনের সব সংবাদ সাংবিধানিকভাবে ও আইনগতভাবে সাংবাদিকরা তুলে ধরতে পারেন। সাংবাদিকদের সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে তাতে সাংবাদিকরা তাদের নিউজের তথ্যের সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন।

ব্যাংক চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না 
বিদায়ী বছরের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন,এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। 

ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না। পরে আপিল বিভাগ এই রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন।

তরুণীকে কানাডা সরকারের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট 
বিদায়ী বছরের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় ‘গৃহবন্দি’ থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে দেশটির সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ  দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন আদালত। তরুণীর বাবা-মা দেখা করতে চাইলে সেই ব্যবস্থা করতে কানাডিয়ান হাইকমিশনকে বলা হয়।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

স্পিকারকে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা দিতে রায় 
আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং হুইপের জন্য বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

গত ৩ ডিসেম্বর  সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩২ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়টি লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।   

রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির (পারিশ্রমিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ১৯৭৫ এর ১০ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। শুধু তাই না, দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরাও সরকারি খরচে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারী। একইভাবে (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা আইন, ১৯৭৫ এর ১২ ধারা অনুসারে) নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা ভোগ করে থাকেন। আর ‘স্পেশাল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্টস বিধি, ১৯৫০ এর ১২ বিধির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পরে এ বিধির আলোকে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চিকিৎসা ব্যয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারক এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা দেশে-বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বাধ্য। 

আরও পড়ুন : ইউএনওর গলাবাজি থেকে ‘জনস্বার্থে’ অবসর, আমলাতন্ত্রে ঘটনাবহুল ২০২২

রায়ে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গের একটি হচ্ছে বিচার বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা এই অঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে থাকেন। ফলে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। এসব বিধি-বিধান বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, দেশে-বিদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির আছে এবং এ বিষয়টি দেখভালের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি কমিটিও রয়েছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, আইন সভার প্রধান হওয়ারে পরও জাতীয় সংসদের স্পিকারের সে ক্ষমতা নেই।

একটি ন্যায্য গণতান্ত্রিক দেশে এটি অপ্রতাশিত। একই মর্যাদার সাংবিধানিক পদধারীদের সবার সমান ও অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের (নির্বাহী ও বিচার বিভাগ) প্রধানদের মত আইন সভার প্রধান হিসেবে স্পিকার বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। ফলে আমরা (আপিল বিভাগ) মনে করি, সরকার জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং হুইপের জন্য বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা স্পিকারকে দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে।

এমএইচডি/এনএফ