মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে কাজ করছেন ১৪৯ নারী কর্মকর্তা। ‘রাজনৈতিক শক্তি’ মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন তারা।

এসব কর্মকর্তা জানান, কাজ করতে গিয়ে নানা সময় রাজনৈতিক মহল থেকে বিভিন্ন চাপ আসে। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় তাদের। সেগুলো কৌশলে মোকাবিলা করেন তারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৬৪ জেলার মধ্যে বর্তমানে ১০ জেলার ডিসি পদে নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে কাজী নাহিদ রসুল, মাদারীপুরে ড. রহিমা খাতুন, রংপুরে ড. চিত্রলেখা নাজনীন, ঝিনাইদহে মনিরা বেগম, নেত্রকোণায় অঞ্জনা খান মজলিশ, জামালপুরে শ্রাবস্তী রায়, শেরপুরে সাহেলা আক্তার, বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, ঝালকাঠিতে ফারাহ্‌ গুল নিঝুম এবং হবিগঞ্জে ইশরাত জাহান ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

নাম প্রকাশ না করে এক নারী জেলা প্রশাসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্মক্ষেত্রে আমরা নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি। এর মধ্যে ‘রাজনৈতিক শক্তির চাপ’ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

‘একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার নানা দায়িত্ব থাকে। মনে করেন, জেলায় অনেক দিন ধরে একটি বড় ধরনের অবৈধ কাজ চলছে। সেই অবৈধ কাজ বন্ধ করতে আমি উদ্যোগ নিলাম। এরপর দেখা গেল রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল বা শক্তি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তখন সেই কাজ বন্ধ করা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক শক্তি বা মহল অনেক প্রভাবশালী হয়। তারা নারীদের দুর্বল ভাবে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। আসলে এগুলো মোকাবিলা করা তখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা চেষ্টা করি এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করি। কৌশলেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি।’

অন্যদিকে, ‘প্রতিবন্ধকতা যোগ্যতা দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়’—  মনে করেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিজের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তা যোগ্যতা দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। কেউ কারও জন্য মাঠ খালি করে দেয় না। যে যোগ্য, সে তার পথ তৈরি করে নেয়।’

অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘এখন যেসব নারী মাঠে কাজ করছেন, তারা তাদের যোগ্যতাবলেই কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেয়েদেরকে সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে তারা সামনে এগিয়ে যেতে পারে এবং তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে। এমন ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এখন আমাদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সময় এসেছে এবং আমরা আমাদের নিজ যোগ্যতায় কাজ করে যাচ্ছি। সেটা আমরা প্রমাণও করতে পারছি বলে মনে করি।’

‘নারীরা এখন জেলা প্রশাসক হিসেবে আছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন। তারা তাদের যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতায় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ১৩৯টির দায়িত্বে আছেন নারী কর্মকর্তারা। কর্মক্ষেত্রে তারাও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

নাম প্রকাশ না করে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের বাধার মুখে পড়তে হয়। সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যায়— এমন কাজ করলে ওপর মহলে নালিশ যায়। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এগুলো মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করি।’

আরেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কর্মরতদের বয়স তুলনামূলকভাবে কম হয়। কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে নানা ধরনের চাপ আসে। সেগুলো মোকাবিলা করাটা চ্যালেঞ্জিং। এ পদে নারী হলে তো আরও বেশি দুর্বল ভাবা হয়। তবে আমি মনে করি, যদি আমি দায়িত্বশীল ও সৎ হই, তাহলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।’

বিসিএস ক্যাডারের নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সায়লা ফারজানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ করতে গিয়ে নারীদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের পরিবার ও কর্মস্থল— দুটোই একসঙ্গে সামলাতে হয়। কোনোটাকে বাদ দেওয়া যায় না।

‘বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সংগঠন থেকে নারীদের সহায়তা করা হয়। আমরা বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও কৌশল শিখিয়ে দেই। এছাড়া মতবিনিময়ের মাধ্যমেও দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল শিখিয়ে দেওয়া হয়।’

এসএইচআর/এসএম