• বিএনপির কর্মসূচিতে নজর রাখছেন ক্ষমতাসীনরা
• তাৎক্ষণিক পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা
• বিভাগীয় নেতাদের সক্রিয় হতে নির্দেশ
• ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ
• ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশের ডাক আওয়ামী লীগের 

আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ধীরে ধীরে গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। তবে কোন কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে চুপ থাকলেও মাঠে সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা। দ্বাদশ নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে তারা।

বর্তমানে বিভাগীয় জেলা শহরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভা করছেন, ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। এখন শুধু জনসভা নয়, ভোটারদের উঠানে উঠানে বৈঠক করে দুই হাত তুলে ভোট চাইবেন ক্ষমতাসীনরা। তুলে ধরবেন বর্তমান সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। প্রতিশ্রুতিতে জানান দেবেন আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা— এমনটাই ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

তাদের মতে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর রাখছে। বিএনপির নেতারা কে, কোথায়, কী করছেন— সব জানার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি তাৎক্ষণিকভাবে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। যদিও পাল্টা কর্মসূচি নেই বলে প্রতিদিন বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার মন্তব্য, ‘নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে-মাঠে আছি, থাকব। প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি আছে।’

বর্তমানে বিভাগীয় জেলা শহরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভা করছেন, ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। জনসভা থেকে ভোটারদের উঠানে উঠানে বৈঠক করে দুই হাত তুলে ভোট চাইবেন ক্ষমতাসীনরা। তুলে ধরবেন বর্তমান সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। প্রতিশ্রুতিতে জানান দেবেন আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা— এমনটাই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে- জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র; বিশেষ করে চক্রান্তকারীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে চাই। আমাদের যে অভাবনীয় সাফল্য, উন্নয়ন ও অগ্রগতি; সেটা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, যে ধরনের মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে— বিষয়গুলো তৃণমূল পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে। নতুন করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

আরও পড়ুন >> আ. লীগের ২০২৩ কাটবে ‘কৌশল ও ঐক্যে’

‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভা ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হলো আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মতবিনিময় সভা, কর্মীসভাও চলছে।’

রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা / ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এ নির্বাচনের ফল ঘরে তুলতে আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে যাব, আমাদের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরব। প্রয়োজনে মানুষকে বুঝাব, কেন আমাদের ভোট দেবেন?

আওয়ামী লীগ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায়। এ সময়ের মধ্যে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণকে একবার নিজ চোখে দেখে আসতে বলব। আমরা মানুষের ভোটের মূল্যায়ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিয়ে থাকি— বলেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমাদের (রাজনৈতিক) কর্মসূচি প্রতিদিন আছে, থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত। ইউনিয়ন পর্যায়ে যে কর্মসূচি তা পাল্টাপাল্টি নয়। জনগণের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই নির্বাচনের আগে আমাদের দলীয় কর্মসূচি থাকবে।’

আরও পড়ুন >> ‘জনগণের দ্বারা ভালো নির্বাচন করানো আমার ব্রত’

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত গলা ফাটাচ্ছে মেগা প্রকল্প, মেগা দুর্নীতি! মেগা দুর্নীতি যদি হয়ে থাকে তাহলে কোনো প্রকল্পের তো আলোর মুখ দেখার কথা নয়।’

‘বিএনপির আমলে দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমাদের আমলে ১৪ বার নয় ২৮ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রথম কাতারে নেই। প্রত্যেকটা মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান। অপপ্রচারগুলো করে যাচ্ছে ওরা (বিএনপি)। এখন সকাল ১০টা। আমি যদি জোর করে বলি রাত ১০টা, হয়তো ভয়ে বলবেন ১০টা। কিন্তু আপনি তো বিশ্বাস করবেন না। এসব কারণে আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচনেও মানুষের কাছে আমরা যাব এবং মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দেবে।’

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সত্যকে মোকাবিলা করার সাহস পায় না। তারা ২৪ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে। কখনও তারা বলছে, দেশ ভারত হয়ে যাবে। কখনও বলছে, দেশে ইসলাম থাকবে না। এমন কোনো জায়গা নেই তারা মিথ্যাচার করে না। যে কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সে কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধু জনসভা নয়, প্রতিটি গ্রামে গ্রামে, প্রতিটি পাড়া পাড়ায় উঠান বৈঠক করে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরব— বলেন আমিনুল ইসলাম আমিন।

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের পর তৃণমূল আওয়ামী লীগকে গোছাতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এরই মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিভাগীয় দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের তাগিদও দিয়েছেন হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সব সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি। তিনি তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুধু বিদ্রোহী নয়, দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদেরও সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও যারা আগামীতে দলের সঙ্গে বেইমানি করবেন তারা আর কখনও ক্ষমা পাবেন না।

তারা আরও বলেন, তৃণমূলের নেতারাই ভোটারদের কাছের লোক। তারা জানেন ভোটারদের কীভাবে সন্তুষ্ট করা যাবে। নৌকার জন্য প্রয়োজনে উঠান বৈঠক, উঠানেই দুই হাত তুলে তারা নৌকার জন্য ভোট চাইবেন।

আরও পড়ুন >> জনপ্রতিনিধিরাই ‘নৌকা’ ডোবায়, সতর্ক কি আ. লীগ?

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।

তৃণমূলের নেতারাই ভোটারদের কাছের লোক। তারা জানেন ভোটারদের কীভাবে সন্তুষ্ট করা যাবে। নৌকার জন্য প্রয়োজনে উঠান বৈঠক, উঠানেই দুই হাত তুলে তারা নৌকার জন্য ভোট চাইবেন— বলছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা

সভায় সারাদেশের প্রতিটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে একযোগে ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। এসব সমাবেশে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সমাবেশে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৪০টি জেলার কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব জেলার নাম উল্লেখ নেই সেসব জেলায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

এমএসআই/এমএআর/