অধিকাংশ সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা / ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী সংঘর্ষ এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি, বুলিং, স্লেজিং, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

কখনও ঢাকা কলেজ আর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, কখনও ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে; আবার কখনও তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এর আগে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মারামারি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও গড়িয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া তখন বলেছিলেন, দুই কলেজের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের ফটকে গিয়ে ‘তোরা মুরগি, সাহস থাকলে বের হ’ বলে চিৎকার করেন। এরপর দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়

উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এমন বেপরোয়া আচরণ করছেন কেন? বারবার কেন-ই বা তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম আসছে— সদুত্তর নেই কারও কাছে।

অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে মারামারি কিংবা সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি ঘটলেও এখন পর্যন্ত স্থানীয় থানা পুলিশ কিংবা কলেজ প্রশাসন কেউ-ই এসব ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। নিতে পারেনি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ফলে মারামারি-সংঘর্ষসহ নেতিবাচক নানা ঘটনা থামছে না।

আইডিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড খুলে নিজ কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা / ফাইল ছবি

বিগত কয়েক বছর ধরে চলা সংঘর্ষের ঘটনা, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সরেজমিনে সংঘর্ষস্থলে অবস্থান, শিক্ষার্থী ও কলেজ প্রশাসনের বক্তব্য, স্থানীয় তিন থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানা বিষয়ে বিশ্লেষণ এবং ঢাকা পোস্টের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের বেশকিছু কারণ।

অধিকাংশ সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেমন- ব্যক্তিগত সমস্যা, ক্ষোভ, প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব বা উস্কানি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এছাড়া কলেজ প্রশাসনের দূরদর্শিতার অভাব, দোষীদের শাস্তি না হওয়া, তিন থানার সমন্বয়হীনতা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাবও শিক্ষার্থীদের বারবার সংঘর্ষে জড়ানোর অন্যতম কারণ

তুচ্ছ ঘটনা

অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেমন- ব্যক্তিগত সমস্যা, ক্ষোভ, প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব বা উস্কানি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এছাড়া কলেজ প্রশাসনের দূরদর্শিতার অভাব, দোষীদের শাস্তি না হওয়া, তিন থানার সমন্বয়হীনতা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাবও শিক্ষার্থীদের বারবার সংঘর্ষে জড়ানোর অন্যতম কারণ।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে ছোটখাটো মারামারি হলেও দুই বছর ধরে সহিংসতার পরিমাণ ও মাত্রা অনেক বেড়েছে। তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও বোধগম্য নয় তাদের। বেশ কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করেও উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চলতি বছর প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ১২ ফেব্রুয়ারি। জানা গেছে, ‘মুরগি’ বলার কারণে সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

আরও পড়ুন >> সায়েন্সল্যাবে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ

ওই ঘটনা সম্পর্কে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া তখন বলেছিলেন, দুই কলেজের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের ফটকে গিয়ে ‘তোরা মুরগি, সাহস থাকলে বের হ’ বলে চিৎকার করেন। এরপর দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা / ফাইল ছবি

ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও র‌্যাগিং দেওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসব ঘটনার জেরে পরবর্তীতে গত ২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ও ৫ মার্চ (রোববার) বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

২ মার্চের সংঘর্ষ যেভাবে

ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোমালিন্য ও বাদানুবাদ একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে সেটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, ঢাকা কলেজের ‘বিজয় ৭১’ বাস উত্তরায় শিক্ষার্থীদের নামিয়ে কলেজে ফেরার পথে সায়েন্সল্যাব এলাকায় আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে ভাঙচুরের শিকার হয়। ইটের আঘাতে কলেজ বাসের পেছনের এবং উভয় পাশের কয়েকটি গ্লাস ভেঙে যায়। আহত হন বাসের চালক সেলিম উদ্দিন। ভাঙচুরের শিকার বাসটি ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। শুরু হয় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ। এক ঘণ্টা ধরে চলা ওই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয় নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি ও কলাবাগান থানা পুলিশের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ কন্ট্রোল রুম (পিসিআর) থেকে অতিরিক্ত পুলিশও আনতে হয়। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হন।

নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা / ঢাকা পোস্ট

ফের সংঘর্ষ ৫ মার্চ
 
সর্বশেষ গত ৫ মার্চ (রোববার) দুপুরের পর আবারও সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে। যথারীতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সায়েন্সল্যাব এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। এ ঘটনার কারণ হিসেবে জানা যায়, ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের সামনে মারধরের শিকার হন ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তার জেরেই আবারও ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার (৫ মার্চ) বিকেলে তিন দিনের জন্য ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন >> বাস ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক : ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ

সংঘর্ষের কারণ হিসেবে যা জানাল পুলিশ
 
গত ৫ মার্চের সংঘর্ষের ঘটনায় ফৌজদারি বিধি ১৫৪ ধারায় অপরাধ বিবেচনায় নিউ মার্কেট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের করা ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়শ ছাত্র এবং ছাত্র নামধারী দুষ্কৃতিকারীকে আসামি করা হয়।
 
পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র আইডিয়াল কলেজে যাওয়ার জন্য সায়েন্সল্যাব পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান নেয়। অপরদিকে আইডিয়াল কলেজের ছাত্ররাও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের প্রতিহত করার জন্য পূবালী ব্যাংক বিসিএসআইআর শাখার সামনে অবস্থান নেয়। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উভয় পাশের উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু তারা যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। রাস্তার গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় গত ১৯ এপ্রিল ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে / ফাইল ছবি

নিরাপত্তার স্বার্থে মাইক দিয়ে উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে পুলিশ এবং অবস্থান ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। তখন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম (পিসিআর) থেকে অতিরিক্ত ছয় প্লাটুন ফোর্স ঘটনাস্থলে আনা হয়। এ সময় ছাত্র নামধারী কিছু দুষ্কৃতিকারীর উস্কানিতে উভয় পক্ষের ছাত্ররা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠেন এবং পুলিশের উদ্দেশে ঢিল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্ররা পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে সায়েন্সল্যাব মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে গাড়ির গতিরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। উভয়পক্ষের উত্তেজিত ছাত্ররা দুষ্কৃতিকারীদের নেতৃত্বে সায়েন্সল্যাব মোড়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। পুলিশ বক্সের দরজা, জানালা ও অন্যান্য সরকারি সরঞ্জাম ভাঙচুর করে এক লাখ টাকার ক্ষতি করে। দুষ্কৃতকারী ও উত্তেজিত ছাত্রদের নিক্ষিপ্ত ইট-পাটকেল ও লাঠি-সোটার আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও গুরুতর জখম হন। তখন বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের সতর্ক করে নিজ নিজ কলেজ ও বাসায় যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। একাধিকবার অনুরোধ করার পরও সায়েন্সল্যাব মোড়ের উভয় দিক থেকে আসা অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীদের নেতৃত্বাধীন উভয় কলেজের উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। পরে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।

পরে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, বল প্রয়োগ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, যান চলাচলে গতিরোধ, অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ও ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করায় অজ্ঞাতনামা ছাত্রদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের নয়টি (১৪৩/১৪৭/১৮৬/৩৪১/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪২৭/৩৪) ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় পুলিশের অ্যাকশন / সংগৃহীত ছবি

বলির পাঁঠা হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা

তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও রেষারেষির ঘটনায় ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কে বা কারা মারামারি-ঝগড়া করছেন, তারা তা জানেন না। অথচ ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে মার খাচ্ছেন।

আরও পড়ুন >> সংঘর্ষ-মৃত্যু, কমিটি দাবি; ঢাকা কলেজে উত্তাপ ছিল বছরজুড়ে

এমন হয়রানির শিকার সাব্বির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, যারা ঝামেলা করে তারা তো নির্ধারিত সময়ের পরই কেটে পড়ে। এরপর সেই ক্ষোভ ঢালা হয় আমাদের ওপর। ইউনিফর্ম দেখেই মারধর শুরু করে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত বাজে অবস্থার মধ্যে আছি। কোনো ধরনের সমস্যায় না জড়ালেও অনেক সময় সাজা ভোগ করতে হচ্ছে।
 
তিন কলেজ প্রশাসন যা বলছে
 
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্দিষ্ট কোনো কারণে নয় বরং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, যে কোনো সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর অজানা কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। যদি পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করত তাহলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। নির্ধারিত কিছু স্পটে বারবার সমস্যা হচ্ছে। সেসব জায়গায় পুলিশ যদি নির্ধারিত সময়ে (ছুটির সময়ে) তাদের টহল টিম রাখে তাহলে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ঢাকা কলেজের সঙ্গে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত— বলছে কর্তৃপক্ষ / ঢাকা পোস্ট

এসব বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইমোশনে আঘাত করে সংঘর্ষ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এবার সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্ম। মূলত বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমস্যার শুরু। ভাঙা বাসটি কলেজে আসার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেটি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। অধিকাংশ বিভাগেই পরীক্ষা চলছিল। আমরা তাদের ক্লাস রুম থেকে বের হতে দিইনি। কিন্তু বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়। শিক্ষকদের পাঠিয়ে তাদের কলেজে ফেরত আনি।’

‘আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ইটের আঘাতে আহত হন। এসব ঘটনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা দোষী হলে ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে অনেকের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

অপরদিকে, সর্বশেষ ঘটনার দিন (৫ মার্চ) ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে— এমন খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলেও ‘সিটি কলেজের কোনো শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না’ দাবি করেন কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্যা চলছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করি শিক্ষকদের মাঠে পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের নিভৃত করার। গত ৫ তারিখ (মার্চ) সায়েন্সল্যাবের যে সংঘর্ষ ‘ত্রিমুখী’ বলে মিডিয়াতে প্রচার করা হয়েছে সেটি ভুল। সিটি কলেজের কোনো শিক্ষার্থী এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না।”

আরও পড়ুন >> ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা

তবে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা নয় বরং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাই আইডিয়াল কলেজে আক্রমণ করেছে— এমন দাবি করেন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করায় ফেব্রুয়ারির ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন বলেও জানান।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইডিয়ালের শিক্ষক-কর্মচারীরাও সংঘর্ষে অংশ নিয়েছেন— এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তিনটি কলেজের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এসব সমস্যা নিরসন করতে হবে। সেজন্য সব কলেজের প্রশাসনের অংশগ্রহণমূলক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।’

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বললেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ / ঢাকা পোস্ট

যা বলছে স্থানীয় থানা পুলিশ

‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথমে মনোমালিন্য, পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়’ বলে মন্তব্য করেন ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া। তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আশপাশের স্কুলের। অনেক সময় দেখা যায়, তাদের স্কুলের দ্বন্দ্ব পরবর্তীতে কলেজ পর্যায়ে এসে প্রকাশ ঘটে। ছোটখাট ইস্যুগুলো পুরো কলেজে ছড়িয়ে পড়ে। সুনির্দিষ্ট বা নির্ধারিত কোনো কারণ বা অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের সবসময় পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কোনো কাজের সঙ্গে যেন কেউ জড়িত না হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাব ফেরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ক্যাম্পেইন ও মোটিভেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’

নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সাবু বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে, শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাই।’

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ান। এমন একটি ঘটনার দৃশ্য / ঢাকা পোস্ট

‘তারা (শিক্ষার্থীরা) দেশের সম্পদ। ছাত্রদের হাত ধরেই ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। দেশের জন্য প্রথম রক্ত ছাত্ররাই দিয়েছে। দেশের ক্রান্তিকালে তারাই এগিয়ে আসে। তাই বলব, এখন দেশ গঠনের সময়। নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন মানবিকতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখার বিষয়গুলো মেনে চলে— বলেন ওসি শফিকুল।
 
আরএইচটি/এফকে/ওএফ