তারা যে এতদিন গণতন্ত্রের কথা বলতেন, নির্বাচনের কথা বলতেন; পুরোটাই ছিল অভিনয়। যেহেতু তারা সবসময় ছলনার রাজনীতি করেছেন, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন, এখন তারা নিজেরাই বোকা হয়ে গেছেন…

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে উঠে আসেন জাতীয় রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে দেশের নৌপথের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নদী দখলমুক্তকরণসহ নৌপথ ঘিরে আগামীর পরিকল্পনা এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান। 

শেষ পর্বে থাকছে ‘বর্তমান সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত’ এবং ‘স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্যের সুর’ নিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নিজস্ব মতামত।

আমরা একটা আদর্শ ও নীতিনির্ভর রাজনৈতিক দল। আমরা যার নেতৃত্বে রাজনীতি করছি তিনি হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই জায়গায় আমরা ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি—দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই ঘোষণা কীভাবে দেখছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এটা নতুন কোনো বক্তব্য নয়, পুরাতন বক্তব্য নতুন করে বলেছেন। এর আগে ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করেছিলেন তারা। বয়কটের ফল তারা কিন্তু এখনও বুঝতেছেন যে একটা গণতান্ত্রিক ধারা থেকে সরে গেলে সেই ধারায় ফিরতে কত সময় লাগে?

তারা গণতান্ত্রিক ধারায় ছিলেন না। পাঁচ বছর পর তারা আবারও নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারায় এসেছিলেন এবং সেই চর্চাটাও করছিলেন। কিন্তু 'চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী', গণতন্ত্র সবার জন্য নয়। তারা সামরিক জান্তার পকেট থেকে বের হওয়া দল। যারা গোয়েন্দা সংস্থার শক্তি দিয়ে, অর্থ দিয়ে দল গঠন করেছেন; যাদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই, নীতি নেই; বিভিন্ন দল, ক্লাব, প্রতিষ্ঠান থেকে আগতদের নিয়ে দল গঠন করেছেন; আদর্শ ও নীতির যেখানে পুরোপুরি অভাব সেখানে এই ধরনের অগণতান্ত্রিক কথা আসবে— এটাই স্বাভাবিক। তারা যে এতদিন গণতন্ত্রের কথা বলতেন, নির্বাচনের কথা বলতেন; পুরোটাই ছিল অভিনয়। যেহেতু তারা সবসময় ছলনার রাজনীতি করেছেন, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন, এখন তারা নিজেরাই বোকা হয়ে গেছেন।

যারা এই পক্ষও না, ওই পক্ষও না, অন্য পক্ষ; তাদের আমরা চিনতে পেরেছি। তাদের প্রতিনিধিত্বটা এখন কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেই

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

ঢাকা পোস্ট : স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কোনোভাবেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত কি না?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা কখনোই বিব্রত নই, কারণ আমরা আমাদের নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। স্থানীয়ভাবে কিছু টানাপোড়েন আছে। সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ হয়তো স্থানীয় নির্বাচনে পড়ছে। তার মানে এই নয় যে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য নেই। আমাদের ঐক্যের প্রতীক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার থেকে বড় কথা হচ্ছে আমরা একটা আদর্শ ও নীতিনির্ভর রাজনৈতিক দল। আমরা যার নেতৃত্বে রাজনীতি করছি তিনি হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই জায়গায় আমরা ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ।

ঢাকা পোস্ট : স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকে হওয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নির্বাচনগুলো থেকে অর্জন কী?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : জাতীয় নির্বাচনে আমরা দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে সরকার গঠন করেছি। তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে অসুবিধা কোথায়? এখানে আমাদের একটা লাভ হয়েছে। বর্ণচোরাদের আমরা চিনতে পারছি। যারা বর্ণচোরা, সমাজে তারা ঘাপটি মেরে থাকত, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করত, তাদের একটা দুরভিসন্ধি ছিল। প্রতীকের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জিনিসটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। যারা এইপক্ষও না, ওইপক্ষও না, অন্যপক্ষ; তাদের আমরা চিনতে পেরেছি। তাদের প্রতিনিধিত্বটা এখন কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেই।

আমরা আপাতত বর্ণচোরাদের থামাতে পেরেছি, কিন্তু অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ওই জায়গাতেও হাত দিতে হবে

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

একটা জিনিস সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের যে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (অবাধ ও নিরপেক্ষ) নির্বাচন, এটা করতে গেলে আগে রাজনীতির জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে। দেশের যে মূল স্পিড সেটা আগে ধারণ করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা, যারা আমাদের স্বাধীনতা স্বীকার করে না, মুক্তিযুদ্ধ স্বীকার করে না, যারা এখনও খুনিদের পক্ষাবলম্বন করে, যারা ধর্ষকদের পক্ষাবলম্বন করে, তাদের নির্বাচনে রেখে কখনও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। আমরা আপাতত বর্ণচোরাদের থামাতে পেরেছি, কিন্তু অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ওই জায়গাতেও হাত দিতে হবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

ঢাকা পোস্ট : স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে ইসি সচিব বলেছেন, ‘মানুষ ভোটদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন’। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : ভোটারদের উপস্থিতি কমে গেছে, এটা বলা যাবে না। বিরোধী দল যে বলছে, বাক স্বাধীনতা নেই, তাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন কোনো নির্বাচন আছে যেখানে বিরোধী দল তাদের প্রচারণা চালাতে পারেনি? আমি তো এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো খবর পাইনি, বিরোধী দল বা কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না। এখন নির্বাচনি এজেন্ট হিসেবে যাদের ভোটকেন্দ্রে থাকার কথা তারা যদি দায়িত্ব পালন না করেন, এই দায়িত্ব কে নেবে? পুরো নির্বাচনজুড়ে যারা ভোটারদের আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন যে ভোটকেন্দ্রে গেলে গোলমাল হতে পারে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই, ভোট আগেই দেওয়া হয়ে যাবে— এই প্রচারণাগুলো যারা চালাচ্ছেন তাদের আগে চিহ্নিত করতে হবে। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায়। তারা বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।

পুরো নির্বাচনজুড়ে যারা ভোটারদের আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন যে ভোটকেন্দ্রে গেলে গোলমাল হতে পারে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই, ভোট আগেই দেওয়া হয়ে যাবে— এই প্রচারণাগুলো যারা চালাচ্ছেন তাদের আগে চিহ্নিত করতে হবে

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

ঢাকা পোস্ট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রকামী শক্তি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে মনে করেন কি না?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : একটা দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, কীভাবে তাদের গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে সেই জায়গায় তাদের অভ্যন্তরীণ কিছু চর্চার বিষয় আছে। এগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ এগুলো পর্যবেক্ষণ করে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী। রক্ত দিয়ে কেনা এই বাংলাদেশ। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা একা ভালো থাকতে চাই না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে  চাই। আমরা চাই প্রত্যেকটা দেশেই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করুক। গণতন্ত্র চর্চা হোক, গণতন্ত্র এগিয়ে যাক। গণতন্ত্রের মধ্যে সাম্য তৈরি হোক। এটা আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমাদের জনগণেরও দৃষ্টিভঙ্গি।

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। আপনার মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তিনিই অপরিহার্য, আর কেউ অপরিহার্য নন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন কাউন্সিলের মাধ্যমে। সেই থেকে ৩১ বছর তিনি কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তেই সভাপতি আছেন।

আমরা চাই প্রত্যেকটা দেশেই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করুক। গণতন্ত্র চর্চা হোক, গণতন্ত্র এগিয়ে যাক। গণতন্ত্রের মধ্যে সাম্য তৈরি হোক

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। দলের কাউন্সিলই বলে দেবে আমাদের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবেন? এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো নয়ই, বাংলাদেশের জনগণও বিকল্প কোনো নেতৃত্ব চিন্তা করছেন না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলুন…

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে যে স্বপ্ন নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের লাখ লাখ মা-বোন সম্মান দিয়েছেন, যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব’— সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আজ এই অবস্থানে পৌঁছেছি।

বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই আলোর দিশারি হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়

বাঙালি জাতি আজ মর্যাদার আসনে আসীন। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। এমন একটি সময় এটি মিলল যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করতে যাচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য।

বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই আলোর দিশারি হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

এইউএ/এমএআর/এমএমজে