বাংলাদেশকে শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে ভারত। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এস জয়শঙ্কর একথা বলেন।

নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি থেকে শুরু করে জ্বালানি ও অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশসহ সব ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বকে সম্প্রসারিত করতে ঢাকা-নয়াদিল্লি কাজ করছে বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। আর এটা অন্যদের কাছে অনুকরণীয় একটি উদাহরণ। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল। দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয়পক্ষই এ সম্পর্কের অগ্রগতি সাধন করেছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনর আমন্ত্রণে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় একদিনের ঝটিকা সফরে আসেন জয়শঙ্কর। মূলত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর চূড়ান্ত করতেই তার এ সফর।

বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের এমন কোনো বিষয় নেই, যা আমরা একসঙ্গে আলোচনা করতে পারি না বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি না।’

করোনা মহামারিতেও বাংলাদেশের জন্য ভারতের পরামর্শ অব্যাহত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে অনলাইনে সম্মেলন করেছি। সেপ্টেম্বরে যৌথ পরামর্শক কমিশন, পররাষ্ট্র, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক, পুলিশ প্রধানদের বৈঠক, বিএসএফ-বিজিবির আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা সফর করেছি।’

ঢাকা-নয়াদিল্লীর বাণিজ্য, পানি সম্পদ এবং নৌ-পরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠক শিগগির অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। ‘এসব বৈঠকে উভয়পক্ষের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে’ বক্তব্যে যোগ করেন জয়শঙ্কর।

প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকা সফরের কথা স্মরণ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। এ সফর খুবই স্মরণীয় হবে। কারণ এটি করোনাভাইরাস মহামারির পর দেশের বাইরে তার প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম সফর। এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। কারণ উভয় দেশ মুজিববর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ও আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন করছে।’

সম্প্রতি এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশের প্রশংসা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উত্তরণে আমরা প্রশংসা ও গর্ভ প্রকাশ করি। ভারত বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে জানতে চাইলে জয়শঙ্কর জানান, পানি নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই পানি সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে।

বিফ্রিং-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

এ সময় বাংলাদেশে করোনার টিকা সরবরাহ করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মোমেন।

ঢাকা-নয়াদিল্লীর সম্পর্ক করোনা মহামারিতে আরও দৃঢ় হয়েছে জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহামারি আমাদের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ দিয়েছে। ভারতের উৎপাদিত কোভিড টিকার সবচেয়ে বড় গ্রহীতা বাংলাদেশ। এছাড়া বন্ধুত্বের মধ্যে ভারতের টিকার সবচেয়ে বড় উপহারটি বাংলাদেশের জন্যই ছিল।’

জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়েও বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করেছি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আগরতলায় পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা, ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের জাতীয় নৌ-পথে সংযুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে দুটি নতুন প্রটোকল রুট যুক্ত করা, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কন্টেইনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু করা এবং জ্বালানি খাতে একটি যৌথ উদ্যোগ গঠন।’

দুই দেশের সম্পর্ক ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সামনের দিনগুলোর সম্পর্ক কেমন হতে পারে-সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো খাত নেই যে আমরা কাজ করছি না। আমাদের সম্পর্কের মূল উপাদান হবে কানেক্টিভিটি।’

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করছেন জয়শঙ্কর। পরে বিকাল ৫টায় ভারত ভবনে (পুরনো হাই কমিশন ভবন) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে যাবেন।

এনআই/এমএইচএস