অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ /ছবি- ঢাকা পোস্ট

• ২০ জনের বেশি রোগী নয়, সময় ১০ মিনিটের কম নয় 
• ৬ মাসের মধ্যে রোবটিক সার্জারি-বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট 
• সহসা পুরোদমে চালু হচ্ছে না ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ 
• এখানে সেবার মূল্য হবে বিএসএমএমইউ-এর দ্বিগুণ 
• সাশ্রয় নয়, আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে চায় এ হাসপাতাল 
• বিভাগীয় শহরেও পৌঁছে যাবে বিএসএমএমইউ-এর সেবা 

দেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। সংক্ষেপে বিএসএমএমইউ। উপাচার্য হিসেবে কাজ করছেন অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। যোগ দেওয়ার পরপরই এখানে সার্বিক চিকিৎসা ও গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সহকর্মীদের ভাষায়, শারফুদ্দিন আহমেদ একজন ‘কাজ-পাগল’ মানুষ। একই সঙ্গে পরিশ্রমী, সময়-সচেতন একজন দক্ষ সংগঠকও তিনি।

চিকিৎসায় বিদেশ-নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে শারফুদ্দিন আহমেদের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের। তবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে এখনও পুরোদমে চালু হয়নি হাসপাতালটির সেবা। উপাচার্যের প্রত্যাশা, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সব সেবা মিলবে এখানে। এমনকি রোগী দেখার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক দিনে ২০ জনের বেশি নয় এবং ১০ মিনিটের কমে একজন রোগীকে দেখবেন না।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলে ঢাকা পোস্ট। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম।

ঢাকা পোস্ট : প্রত্যাশার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। আমরা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি উদ্বোধনের পরপরই পূর্ণদমে চালু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনার কারণে আমরা ডিসেম্বরের সব যন্ত্রপাতি এখনও পাইনি। ডায়ালাইসিস, এনেসথেসিয়া মেশিনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রপাতি না আসায় হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করতে না পারলেও আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ উদ্বোধনের পরপরই কিছু জনবল আমরা নিয়োগ দিই। কিছু লোককে আমরা কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনি। এভাবে ৩৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসককে নিয়ে আমরা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছি।

গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ১২ হাজারের অধিক রোগী দেখেছি। এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ব্লাডসহ প্রায় ২২ হাজারের বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। এরপরও আমরা বসে নাই। সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই। কারণ, এটা চালাতে তো টাকা লাগে। আমাদের এখনও ১৭০০ এর মতো জনবল প্রয়োজন।

আমাদের চিফ কনসালট্যান্টরা হবেন অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালট্যান্টরা হবেন সহযোগী অধ্যাপক এবং কনসালট্যান্টরা হবেন সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার। সার্বিকভাবে আমরা কিছু দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। সরকারের টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করা মেডিকেল অফিসার কেউ এখানে যোগ দিতে চাইলে তাদের আমরা নিয়োগ দেব।

ইতোমধ্যে এখানে চিকিৎসা নেওয়া অসংখ্য মানুষের প্রশংসা আমরা পাচ্ছি। যেসব রোগী আসছেন তারা প্রত্যেকেই ভালো সেবা পাচ্ছেন। মানুষ যেন ঠিক মতো সেবা পান সেজন্য আমি নতুন একটি ফর্মুলা চিকিৎসকদের দিয়েছি। এটি হলো ১০ × ২০। অর্থাৎ একজন বিশেষজ্ঞ দিনে ২০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না, এমনকি কোনো রোগীকে ১০ মিনিটের কম সময় দেওয়া যাবে না। এ ফর্মুলা দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা চাই না কোনো রোগী ইনভেস্টিগেশন করতে এসে ফিরে যাক। সব রোগীর সঙ্গে ভালো আচরণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আমাদের এখানে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের মতামত এবং চিকিৎসায় তাদের সন্তোষ বা অসন্তোষের বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। প্রায় প্রত্যেকেই সেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা পোস্ট : পুরোদমে কবে নাগাদ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : এ বিষয়ে জানার জন্য প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) আমরা ডেকেছিলাম। মন্ত্রণালয়, পিএম অফিসসহ একসঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। তাদের আমরা বলেছি, যন্ত্রপাতি না আসলে তো আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এ ব্যর্থতার দায় কার; আমি বলব যথাসময়ে যন্ত্রপাতি না আসার। সেই যন্ত্রপাতি তো আনবেন প্রকল্প পরিচালক।

প্রকল্প পরিচালক আমাদের কথা দিয়েছেন, আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সব যন্ত্রপাতি আসবে। এর মধ্যে যদি আমরা নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে ফেলতে পারি, তাহলে ১ জুলাই থেকে আশা করি আরও কিছু কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারব। সম্পূর্ণ কার্যক্রম হয়তো এ সময়ে শুরু করতে পারব না। তবে, আশা করছি ২৫ শতাংশ কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে যাবে। এরপর ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী ১ জুলাই শত ভাগ কার্যক্রম শুরু করে দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে।

তবে, আগামী ১ জুলাই থেকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ইনডোর কার্যক্রম শুরু করার ইচ্ছা আমাদের আছে। ইনডোরের মধ্যে থাকবে ডায়ালাইসিস, ওটি, মা ও শিশু বিভাগ, অ্যাক্সিডেন্টাল ইমারজেন্সি, থাকবে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি। এছাড়া কিডনি, লিভার, ইউরোলজি ছাড়াও আই ও ইএনটি (নাক, কান, গলা)-ও রাখা হচ্ছে। আমরা এখানে রোবটিক সার্জারির ব্যবস্থা করব, থাকবে বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যবস্থাও।

আমরা ইতোমধ্যে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছি। এ মুহূর্তে আমাদের পরিকল্পনা হলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে রোবটিক সার্জারি ও বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম শুরু করা। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এ দেশের মানুষের যত আশা, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মাধ্যমে আমরা সেগুলো পূরণ করব।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মাধ্যমে আমরা এ বিদেশমুখিতা কমাতে পারব কি না?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করতেন— এমন অনেকেই এখন আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা সন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন, আমাদের এখানকার স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বমানের। আমার কাছে মনে হচ্ছে, মানুষের প্রত্যাশার জায়গাটা আমরা পূরণ করতে পারছি। আমরা যখন পুরোদমে সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারব তখন রোগীদের বিদেশমুখিতা আরও কমে আসবে। আমরা শুধু মানুষের প্রত্যাশা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ নয়, দেশের অর্থ যেন দেশেই থাকে সেটিও নিশ্চিত করব।

আমরা যে জরুরি বিভাগটা চালু করেছি, সেখানে নিউরো ক্যাথল্যাব আছে। আমরা সেখানে স্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। হার্টের রোগীদের জন্য আমরা ক্যাথল্যাব চালু করেছি। আমার কাছে যেটা মনে হয়, যেকোনো বড় কার্যক্রম সুন্দরভাবে শুরু করতে গেলে কিছুটা সময় লাগে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের ছয় মাসেও তারা পুরোপুরি সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারেনি, পরবর্তীতে হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : বলা হয়, বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগীদের আস্থাহীনতা রয়েছে। যে কারণে তারা সাধ্য মতো অন্যান্য দেশে চিকিৎসার জন্য চলে যান। বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমাদের নিউ মার্কেটেও কিন্তু সবকিছু পাওয়া যায়। তারপরও একদল লোক থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর ছাড়া বিয়ের বাজার করবেন না। তাদের তো আমরা ঠেকাতে পারব না।

আমার এখানে একটা রোগী একবার কর্নিয়ার সমস্যা নিয়ে আসেন। যার সমাধান হয়ে যায় মাত্র এক মিনিটে। কিন্তু এজন্য সেই রোগী চার্টার্ড প্লেনে করে সিঙ্গাপুরে যান। আমাদের বরিশালের মেয়র, তিনিও সিঙ্গাপুরে যান। অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।

ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যে লোকটা দেশের বাইরে যান, তিনি কিন্তু তার পরিবারের চলার টাকাটাও বাসায় রেখে যান না। একপর্যায়ে তার সন্তানরা না খেয়ে থাকেন। অথচ আমাদের দেশেই ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে করোনার সময় দুইটা বছরের দিকে তাকালে। ওই সময় কেউই দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। তাহলে মানুষ কোথায় চিকিৎসা নিয়েছেন? অবশ্যই বাংলাদেশে নিয়েছেন

আমার কথা হলো, আজ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যে লোকটা দেশের বাইরে যান, তিনি কিন্তু তার পরিবারের চলার টাকাটাও বাসায় রেখে যান না। একপর্যায়ে তার সন্তানরা না খেয়ে থাকেন। অথচ আমাদের দেশেই ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে করোনার সময় দুইটা বছরের দিকে তাকালে। ওই সময় কেউই দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। তাহলে মানুষ কোথায় চিকিৎসা নিয়েছেন? অবশ্যই বাংলাদেশে নিয়েছেন।

সব ধরনের চিকিৎসার বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে, সবসময় এমন কিছু মানুষ থাকবেই যারা বিদেশে ঘুরতে যান, পাশাপাশি একটু হেলথ চেকআপ করে আসেন। আরেকটি বিষয় হলো- আস্থাহীনতা। আমি প্রায়ই দেখি, রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে সাত দিনের। কিন্তু তিনি তিন দিন হলেই মনে করেন যে আমার তো ওষুধে কাজ হচ্ছে না। যাই, পাশের দেশে একটু দেখিয়ে আসি। অর্থাৎ দেশের চিকিৎসায় তাদের একটু ধৈর্যও নেই।

এ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে মানুষকে বেশি বেশি সচেতন করা। তাদের জানানো যে আমাদের দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়। বিশেষ করে ক্যান্সারের চিকিৎসা। আমার দেশে যা আছে এর চেয়ে ভালো কিন্তু পাশের দেশ ভারতেও নেই। লিনাক মেশিন, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি— সবই আমাদের দেশে আছে। পাশাপাশি আমাদের মেডিকেলে ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আছেন। আমরা যদি আগামী ছয় মাসের মধ্যে রোবটিক সার্জারি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু করতে পারি, তাহলে আশা করছি রোগীদের বিদেশগমন অনেকটা কমে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের অনেক ডলারও সাশ্রয় হবে।

ঢাকা পোস্ট : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসা সাধারণ মানুষের জন্য কতটা সাশ্রয়ী হবে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : এখানে চিকিৎসাসেবা সাশ্রয়ী হবে, এটা কিন্তু আমরা কখনওই বলিনি এবং বলছি না। আমরা বলছি, যে রোগী দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা খরচ করেন, আমাদের হাসপাতালে দুই লাখ টাকার মধ্যে সেই সেবা পাওয়া সম্ভব। যেমন- বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট। ভারতে গিয়ে এটি করতে লাগে ২২ লাখ টাকা। সেটি আমরা করে ফেলব দুই লাখে।

আমাদের দেশ থেকে অনেক মানুষ তুরস্কে গিয়ে হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট করান। বিমান ভাড়াসহ যাওয়া-আসা আর চিকিৎসায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সেটি আমাদের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুই লাখে হবে। এর মানে হলো, এ সেবাগুলো যদি আমরা দেশেই দিতে পারি, আমাদের অর্থ সাশ্রয় হবে।

আমাদের বিএসএমএমইউতে সেবা নিতে যে খরচ সেই সেবা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে গেলে একটু ব্যয়বহুল হবে। আমরা ভাবছি যে সেবা আমরা ১০০ টাকায় দিই, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেটি ২০০ টাকায় দিব। বিষয়গুলো এখনও আমাদের ভাবনার মধ্যে আছে। সিদ্ধান্তগুলো আমাদের কমিটি বসে চূড়ান্ত করবে।

ঢাকা পোস্ট : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পাশেই আরেকটি হাসপাতাল তৈরির কথা বলেছিলেন। সেটি কোথায় এবং কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে বলে মনে করেন?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পাশেই আরেকটি হাসপাতাল করতে চাই। আপনারা জানেন, বেতার ভবনটি অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। এভাবে ফেলে রাখার চেয়ে সেটা কাজে লাগানো উচিত হবে বলে আমি মনে করি। নতুন হাসপাতালে থাকবে আমাদের একাডেমিক রিসার্চ সেন্টার, সিমুল্যাশন ল্যাব। এছাড়া আমাদের বিএসএমএমইউতে কয়েকটি বিভাগের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। সেগুলো ওখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। বিশেষ করে ভাসকুলার সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগকে আরও উন্নত করার ইচ্ছা আছে। আমরা মনে করি, হাসপাতালটি চালু হলে আমাদের চিকিৎসাসেবা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

ঢাকা পোস্ট : বিএসএমএমইউতে প্রতিনিয়তই দেখা যায় রোগীর চাপ। ভবিষ্যতে চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে আর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমরা এখানে চেষ্টা করি নামমাত্র মূল্যে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে। আমাদের আউটডোরে ৩০ টাকার টিকিটে মানুষ বিশেষজ্ঞ সেবা পান।

আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে গরিব রোগীরা অর্ধেক খরচে থেকে সেবা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাকি অর্ধেক খরচ বিএসএমএমইউ বহন করে।

এছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো- ঢাকার আশপাশে আমরা আউটডোর সেন্টার করব। যেমন- কিছু ডাক্তার আমরা শিবচরে, কিছু ডাক্তার পূর্বাচলে আবার কিছু ডাক্তার আমিনবাজারের আউটডোরে বসাব। ওইসব এলাকার রোগীদের যেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এসে ভিড় করতে না হয়। এমন পরিকল্পনা আমাদের আছে।

এমনকি ভবিষ্যতে বিভাগীয় শহরেও রোগীদের চিকিৎসায় সেন্টার করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের সেবাগুলো যদি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকরা বাই-রোটেশন (চক্রাকার পদ্ধতি) বিভিন্ন এলাকায় যাবেন এবং চিকিৎসাসেবা দেবেন। শিবচরে যদি আমাদের একজন অধ্যাপক গিয়ে সেবা দিয়ে আসেন তাহলে ওই এলাকার রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে না। আমাদের চিকিৎসক যদি আমিনবাজারে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসেন তাহলে ওই এলাকার রোগীদের আর বিএসএমএমইউ বা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আসতে হবে না।

একনজরে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার খায়েরহাট গ্রামে ১৯৫৬ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মা হোসনে আরা বেগম। ব্যক্তিজীবনে শারফুদ্দিন আহমেদ বিবাহিত। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডার্মাটোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নাফিজা আহমেদ তার সহধর্মিণী। তাদের তিন পুত্রসন্তান। তারা হলেন- তাজবীর আহমেদ, তানভীর আহমেদ ও তাহমিদ আহমেদ সাদাত।

শারফুদ্দিন আহমেদ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী জি সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। বরিশালে অবস্থিত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) থেকে ১৯৮২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) থেকে ১৯৮৫ সালে অফথালমোলজিতে ডিপ্লোমা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯৮২ সালে সহকারী সার্জন হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার, রেসিডেন্ট সার্জন ও রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হন এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত একই পদে নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৯৮ সালের ২৪ মার্চ তিনি তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর)-এ সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল আইপিজিএমআর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। তিনি ২০০১ সালে বিএসএমএমইউ-এর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিভাগটির সভাপতি ছিলেন।

বিএসএমএমইউতে কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ চালু হলে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত বিভাগটির অধ্যাপক ও সভাপতির দায়িত্ব নেন। অধ্যাপনা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি শারফুদ্দিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএসএমএমইউ-এর সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২৯ মার্চ পরবর্তী তিন বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

টিআই/এমএআর/ওএফ