মো. জসিম উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান, বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ

শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো বিশ্বে চলছে প্যানডেমিক সিচুয়েশন (অতিমারি পরিস্থিতি)। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করে কীভাবে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সামনে এগিয়ে যেতে পারেন সেই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেব। চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা কিন্তু সেভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় আগামীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে…

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের ফেডারেশন অর্থাৎ এফবিসিসিআই’র সভাপতি হচ্ছেন বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। তিনি ২০২১-২৩ সাল মেয়াদে সংগঠনটির নেতৃত্ব দেবেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। এ সমিতি থেকে তিনি এফবিসিসিআই মনোনীত পরিচালক হন। এফবিসিসিআই’র নিয়ম অনুযায়ী পরিচালকরা নতুন সভাপতি নির্বাচিত করেন। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এফবিসিসিআই’র ২৫তম সভাপতি হিসেবে জসিম উদ্দিনের নাম এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৯ মে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেবেন তিনি।

করোনা অতিমারির এ সময়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই’র আগামীর কার্যক্রম, লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন জসিম উদ্দিন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। 

ঢাকা পোস্ট : করোনা মহামারির সময়ে এফবিসিসিআই’র সভাপতি হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের শীর্ষপদে আসীন হয়ে আপনার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য কী হবে?

জসিম উদ্দিন : এফবিসিসিআই টার্গেটভিত্তিক কাজের চেয়ে সরকারের পলিসি লেভেলে কাজ করে বেশি। অর্থাৎ সরকার যে আইনকানুন ও নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় তা ব্যবসাবান্ধব কি না, সেটা দেখভাল করে এফবিসিসিআই। সামনে বাজেট ঘোষণা। এখানে আমাদের মূল কাজটা হবে বাজেটটা যেন শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব হয়। বাজেটের নীতিগুলো যেন ব্যবসায়ীদের ওপর বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। এ বিষয়গুলো সমন্বয় করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

এছাড়া বর্তমান পরিচালনাপর্ষদ বেশকিছু কাজ এগিয়ে নিয়েছে। এগুলো শেষ করার পাশাপাশি ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কীভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করা যায়, বিশেষ করে করোনার কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিষয়ে আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয়ের চেষ্টা করব।

২০০০-০১ অর্থবছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ন্যাশনাল এক্সপোর্ট স্বর্ণ পদক ট্রফি লাভ করেন জসিম উদ্দিন 

ঢাকা পোস্ট : বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন মূলত ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তাদের বিষয়ে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?

জসিম উদ্দিন : শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো বিশ্বে চলছে প্যানডেমিক সিচুয়েশন (অতিমারি পরিস্থিতি)। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করে কীভাবে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সামনে এগিয়ে যেতে পারেন সেই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেব। চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা কিন্তু সেভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় আগামীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

ঢাকা পোস্ট : সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না?

জসিম উদ্দিন : এফবিসিসিআই মূলত সরকারের পলিসি অর্থাৎ বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজ করে। সামনে বাজেট। বাজেটে যেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক  নীতি রাখা হয় সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব। পাশাপাশি ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ব্যবসা আরও সহজীকরণ, ঋণপ্রাপ্তি ও অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করব।

ঢাকা পোস্ট : করোনার শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। ঋণসহ নানা প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আর কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন আছে কি না?

জসিম উদ্দিন : মহামারির মধ্যেও জীবন-জীবিকা সচল রাখতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত তৎপর। তার নির্দেশ, যেকোনো মূল্যে জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে হবে। মহামারির শুরু থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে প্যানডেমিক সিচুয়েশনেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, আগামীতেও তিনি ব্যবসা সহায়ক নীতি গ্রহণ করবেন। ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবেন।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন জসিম উদ্দিন

ঢাকা পোস্ট : দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ সময় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

জসিম উদ্দিন : বর্তমান সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে কী হবে তা অনিশ্চিত। মানুষের জীবন যেমন মূল্যবান, জীবিকাও মূল্যবান। বিষয় দুটি সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা সচল রাখতে পারি তাহলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। এজন্য আমাদের কৌশলী হতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় নীতি-সহায়তা দিতে হবে। বাজেট করতে হবে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব। তাহলে আমরা ক্ষতি কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারব।

ঢাকা পোস্ট : প্লাস্টিক পণ্য, আবাসন, গণমাধ্যম, তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সফল হয়েছেন। বর্তমানে সুইসটেল নামে গুলশানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল করছেন। বেঙ্গল কমার্শিয়াল নামে নতুন একটি ব্যাংকের অনুমোদনও পেয়েছেন। ব্যাংক খাতে আসার বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না?

জসিম উদ্দিন : বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য সব ব্যবসার মতো ব্যাংক খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, ব্যবসা ভালো না হলে ব্যাংক খাতও ভালো করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছিলেন এর মধ্যে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ফান্ডের পুরোপুরি অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকাররা এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি মনে করি, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এখন আমাদের কাজ করা দরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কীভাবে ব্যাংক ঋণের আওতায় আনা যায়, এ বিষয়ে খাতভিত্তিক এবং জেলা চেম্বারগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার চিন্তা আছে।

একনজরে জসিম উদ্দিন

সফল উদ্যোক্তা জসিম উদ্দিনের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেম্বর গ্রামে। তার পিতা মরহুম আলহাজ ইদ্রিস মিয়া ছিলেন এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। বিজনেস স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর জসিম উদ্দিন ১৯৮৩ সালে পারিবারিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এখন তিনি গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান।

দেশের অর্থনীতিতে বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০০৮-০৯ সালে শিল্পোদ্যোক্তা জসিম উদ্দিনকে সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইমপরট্যান্ট পারসন) হিসেবে মনোনীত করে। রফতানি খাতে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ন্যাশনাল এক্সপোর্ট সিলভার পদক এবং ২০০০-০১ অর্থবছরের জন্য স্বর্ণ পদক ট্রফি লাভ করেন।

বড় ভাই বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলমসহ অন্যদের সঙ্গে জসিম উদ্দিন

জসিম উদ্দিন ২০১০-১২ সাল মেয়াদে এফবিসিসিআই’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্লাস্টিক পণ্য, আবাসন, গণমাধ্যম, তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় অবদান রাখছে তার গ্রুপ। বর্তমানে সুইসটেল নামে গুলশানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল করছে এ শিল্পগোষ্ঠী। নতুন অনুমোদন পাওয়া দেশের ৬০তম তফসিলি ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছে ‘বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড’। জসিম উদ্দিন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার ভাই বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম একজন সংসদ সদস্য। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানও।

এসআই/এমএআর/