২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় সারাদেশে ৬২টি মামলা হয়েছিল। এসব মামলার আসামিদের মধ্যে হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী অনেক নেতা গ্রেফতার হলেও সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফীপন্থি নেতারা এখনো নিরাপদে আছেন। যদিও শফীপন্থিরা বলছেন, তাদের বাসাবাড়িতেও পুলিশ হানা দিয়েছে।

শাপলা চত্বরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে জানা যায়, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ধর্মীয়গ্রন্থে আগুন, বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে লুটপাটের ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় পাঁচটি এবং মতিঝিল পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, মোবাইল ও নগদ টাকা লুটপাটের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়।

এসব মামলার আসামির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত মামলার ছয়টির এজাহারে দুই নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন শফীপন্থি অন্যতম সংগঠক মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী। এক মামলায় চার এবং দুটিতে ১৩ নম্বর আসামি হিসেবে মুফতি ফয়জুল্লাহর নাম রয়েছে। এছাড়া ওই সাত মামলার মধ্যে চারটিতে যথাক্রমে ৯, ১৭, ১৭ ও ২২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে রয়েছে ইসলামি ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নাম।

সাত মামলার ছয়টির এজাহারে দুই নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন শফীপন্থি অন্যতম সংগঠক মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী। এক মামলায় চার এবং দুটিতে ১৩ নম্বর আসামি হিসেবে মুফতি ফয়জুল্লাহর নাম রয়েছে। এছাড়া ওই সাত মামলার মধ্যে চারটিতে যথাক্রমে ৯, ১৭, ১৭ ও ২২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে রয়েছে ইসলামি ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নাম

একইভাবে চার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির তালিকায় রয়েছে মাওলানা আলতাফ হোসাইনের নাম; যথাক্রমে ২২, ২২, ৩৬ ও ৩৯ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, একটি মামলায় ৮৯ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে নাম রয়েছে শফীপুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর। বিগত দুই মাসে হেফাজতের অনেক নেতা গ্রেফতার হলেও উল্লিখিত আসামিরা এখনো রয়েছেন নিরাপদে।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অপরাধ করে থাকলে অন্যরাও গ্রেফতার হবে।’

‘কে কোন পন্থি, সেসব হিসেব করে গ্রেফতার করা হচ্ছে না’ দাবি করে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘যখন মামলাগুলো হয়েছে, তখন আমরা এখানে ছিলাম না। মামলার নথি ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার অভিযান চলছে। নথিতে কোথাও শফীপন্থি বা বাবুনগরীপন্থি লেখা নেই।’

শফীপন্থি নেতারা বলছেন, আহমদ শফীর সময়ে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হওয়া কমিটির নেতারা সাধারণ আলেম-ওলামাদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা (হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটি) দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার আন্দোলনে নামে এবং সরকার পতনের উদ্দেশ্যে সাধারণ আলেম-ওলামা ও মাদরাসার ছাত্রদের রাস্তায় নামায়। এতে ২০ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ জীবন হারান এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হয়। ফলে পুলিশ ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার করছে। তবে, মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হওয়া আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না শফীপন্থিরা। তাই তারা গ্রেফতারের বাইরে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির (প্রয়াত) আল্লামা আহমদ শফী, ফাইল ছবি

এ বিষয়ে হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের বাসাবাড়িতেও পুলিশ গিয়েছে। তারা (জুনায়েদ বাবুনগরী কমিটি) তো আলেম সমাজকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আল্লামা আহমদ শফীর সময়ে আলেমদের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক ছিল। এখন কেন সেটা নেই। তার জবাব কে দেবে?’

মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে একটি পক্ষ ইস্যুটি দাঁড় করিয়েছে।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আহমদ শফীর সন্তান মাওলানা আনাস মাদানী। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের সাবেক শফিপন্থি এক নেতা বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী জীবদ্দশায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই সময় তো হেফাজতের মামলাগুলো পেন্ডিং ছিল। মোদিবিরোধী হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো কওমি মাদরাসা, ছাত্র-শিক্ষক সবাই বিপদে পড়েছে। অনেক আলেম-ওলামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা এখনো চলমান।’

হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল্লামা আহমদ শফী মৃত্যুবরণ করেন। ওই বছরের ১৫ নভেম্বরে সাবেক মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন আল্লামা শফীর পুত্র হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মঈনুদ্দীন রুহী, সাবেক ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আমিনী, সাবেক মহানগর নেতা মাওলানা আলতাফ হোসেন।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল (২ জুন) বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে হেফাজতের শফীপন্থি নেতারা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এই পক্ষের নেতা আনসারুল হক ইমরান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে শাইখুল ইসলাম শহীদ আল্লামা শাহ আহমদ শফী হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের ও উসকানিদাতাদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এএইচআর/এফআর/এমএআর/