‘একটি শব্দ-একটি আলোয়’ নিভছে জীবন প্রদীপ, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল
চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন সাতক্ষীরার দেবব্রত মণ্ডল। গত ৬ মে সকালে আকাশে মেঘ জমতে দেখে বাবার সঙ্গে স্থানীয় বনবিবিতলা বিলে ধান কাটতে যান তিনি। কাজ প্রায় শেষ হতেই বৃষ্টির আভাস দেখে তার বাবা আগে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু দেবব্রত থেকে যান একটু পরে বের হবেন বলে। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বজ্রপাতে মুহূর্তেই নিথর হয়ে যান তরুণ দেবব্রত।
গত ১ মে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায়ও বজ্রপাতের ফলে ঘটে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। সেদিন দুপুরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিলেন রাকিবুল হাসান খান রাফি। মাত্র ২৩ বছর বয়সী রাফি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। বৃষ্টি শুরু হলে খেলা থামিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতের শিকার হয়ে তিনিও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহত হন সঙ্গে থাকা আরও চারজন।
বিজ্ঞাপন
বজ্রপাতে ১৪ বছরে (২০১০-২০২৪ সাল) প্রাণ গেল ৪ হাজার ১৫৮ জনের। নিহতদের মধ্যে শিশু ৭৭৪ জন, নারী ৫৪১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। সেবছর ৩৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এককভাবে সর্বোচ্চ পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে ২০২০ সালে। যার সংখ্যা ২৭১ জন
দেবব্রত আর রাফি— দুই ভিন্ন জেলার দুই তরুণ হলেও তাদের শেষ ঠিকানা হয়েছে এক। এই দুটি ঘটনাই এককভাবে দুঃখজনক হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে —এমন মৃত্যু এখন বাংলাদেশের জন্য প্রতিদিনের খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে, খেতখামারে, স্কুলে যাওয়া পথে, খেলাধুলার সময় কিংবা যেকোনো মুহূর্তেই নেমে আসা ‘একটি শব্দ ও একটি আলো’ নিভিয়ে দিচ্ছে জীবন প্রদীপ।
বজ্রপাত এখন নীরব ঘাতক, বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে বজ্রপাত এখন আর কেবল প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়—এটি একটি প্রাণঘাতী দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। তবে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ।
১৪ বছরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ৪ হাজার ১৫৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ। নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪১ ও ৭৭৪ জন
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের (এসএমআরসি) তথ্যমতে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বজ্রপাতের সংখ্যা ও এতে প্রাণহানির দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষ ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছর মার্চ মাস থেকেই বজ্রপাতের প্রকোপ শুরু হয় এবং বর্ষাকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। বছরে বজ্রপাতে গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ২০২৪ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৩০০ ছঁই ছুঁই (২৮৮)। আর ২০২৫ সালের শুরু থেকেই যেন আরও ভয়াল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। মাত্র জানুয়ারি থেকে মে মাসের প্রথম দশকে দেশজুড়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে মৃতদের বেশিরভাগই হন কৃষক, গৃহবধূ, শ্রমিক এবং স্কুল-কলেজগামী শিশু-কিশোররা।
আরও পড়ুন
বজ্রপাতের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বজ্রপাতে ১৪ বছরে (২০১০-২০২৪ সাল) প্রাণ গেল ৪ হাজার ১৫৮ জনের। নিহতদের মধ্যে শিশু ৭৭৪ জন, নারী ৫৪১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। সেবছর ৩৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এককভাবে সর্বোচ্চ পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে ২০২০ সালে। যার সংখ্যা ২৭১ জন।
তথ্য বলছে, ২০১০ সালে বজ্রপাতে প্রাণ হারান ১২৩ জন, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৩৬২ জনে। এরপর ২০২২ সালে কিছুটা হ্রাস পেলেও মৃত্যু হয়েছে ৩১৬ জনের। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৮৮ জন, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
এছাড়া, ১৪ বছরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ৪ হাজার ১৫৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ। নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪১ ও ৭৭৪ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের কৃষিকাজ, মাছ ধরা, গবাদি পশু পালনসহ বহিরাঙ্গন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ফলে মৃত্যুর হারও বেশি।
বজ্রপাতের ফলে আহতের সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এই সময়কালে বজ্রপাতজনিত আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৪ জনে। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আহত হন ১৯৬ জন।
এছাড়া, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরও সারা দেশে বজ্রপাতের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে—এই বজ্রপাত মৌসুমে প্রাণহানির ঘটনা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। মাত্র একদিনেই, অর্থাৎ গত ২৮ এপ্রিল বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন। এদের মধ্যে ১৯ জনই ছিলেন কৃষক—যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করছিলেন। আর শুধু কিশোরগঞ্জ জেলাতেই এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন।
এরসঙ্গে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট হবিগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও কুড়িগ্রাম এলাকাতেও প্রতিবছরই বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
যে কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বজ্রপাত
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতের তীব্রতা ও ঘনত্ব বাড়ছে। এর ফলে প্রতিবছরই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তারা মনে করেন, সময়মতো পূর্বাভাস, সচেতনতা এবং সঠিক আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে এ মৃত্যু কমানো সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বজ্রপাত বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা ও উষ্ণ বায়ুর মিশ্রণ বেড়েছে। ফলে এই পরিস্থিতি বজ্রমেঘ তৈরির উপযোগী আবহাওয়া সৃষ্টি করছে বারবার। এছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে মৌসুমি জলবায়ু, উচ্চ তাপমাত্রা ও ঘন মেঘ তৈরি হয়। ফলে এ আবহাওয়া বজ্রপাতের জন্য একটি প্রাকৃতিক ‘হটস্পট’ তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্প বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন মাসে এ প্রবণতা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আগে বজ্রপাত মৌসুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। এখন প্রায় বছরজুড়েই বজ্রপাত হচ্ছে—এটি স্পষ্ট জলবায়ুগত সংকেত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
একটি বজ্রপাত বিদ্যুৎ ছড়ায় কয়েক মিলিয়ন ভোল্ট
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাত হলো একটি প্রাকৃতিক বৈদ্যুতিক নির্গমন প্রক্রিয়া, যা মূলত আকাশে জমে থাকা বিশাল পরিমাণ ইলেকট্রিক চার্জের হঠাৎ মুক্তি। এটি তখন ঘটে যখন মেঘের ভেতরে কিংবা মেঘ থেকে ভূমির মধ্যে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বজ্রমেঘ বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয়ের প্রধান উৎস। মেঘের ওপরের অংশে পজিটিভ চার্জ এবং নিচের অংশে নেগেটিভ চার্জ জমা হয়। আর ভূমিতে থাকা যেকোনো উচ্চতর বস্তু—যেমন গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বা মানুষের শরীর—এই বৈদ্যুতিক চার্জের সঙ্গে আকর্ষিত হয়ে একটি বৈদ্যুতিক ‘চ্যানেল’ তৈরি করে। ফলস্বরূপ, তীব্র আলোকচ্ছটা ও শব্দসহ সেই চার্জ ‘নির্গত’ হয়। এই ঘটনাকেই আমরা বলি বজ্রপাত।
তিনি বলেন, একটি বজ্রপাত সাধারণত কয়েক মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ ছড়ায় এবং তাপমাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে ৩০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। যা সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি গরম। এ কারণে বজ্রপাতে সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাণ হারান বা গুরুতরভাবে দগ্ধ হন।
প্রান্তিকদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে
বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন প্রান্তিক ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষজন। বিশেষ করে কৃষক, জেলে, শিশু-কিশোররা। তাদের অধিকাংশেরই তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই আবার সতর্কবার্তা পাওয়ার সুযোগও সীমিত। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাত বাড়লেও প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষায় নেওয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। ফলে এক অদৃশ্য যমদূত মাথায় নিয়েই তারা প্রতিদিন কাজকর্ম করছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন, বজ্রপাত বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়েও সচেতনতা কার্যক্রমও সীমিত।
এমন অবস্থায় বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতা ও পূর্বসতর্কতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তির যুগে বসবাস করলেও বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে এখনও পর্যাপ্ত সচেতনতা নেই। বজ্রপাতের সময় কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, কী করা যাবে না—এসব বিষয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষকে বারবার সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে স্কুলপর্যায় থেকে এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া জরুরি। স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু তথ্য নয় বরং মানুষের জীবন বাঁচাতে দরকার সঠিক প্রস্তুতি। এরসঙ্গে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বা ‘লাইটনিং অ্যারেস্টর’ এর ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার সমন্বয় ছাড়া বজ্রপাত থেকে জীবন রক্ষা কঠিন। যার জন্য টেকসই অবকাঠামো ও স্থানীয় প্রস্তুতি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জীবন বাঁচাতে বাড়াতে হবে সতর্কতা
আবহাওয়া অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পাঠালেও তা পৌঁছায় না সবার কাছে। কিন্তু গ্রামের কৃষকের হাতে স্মার্টফোন না থাকলে এসব উদ্যোগও ব্যর্থ হয়ে পড়ে। কিছু স্টার্ট-আপ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সতর্কতা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সেগুলোর নাগাল গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছেনি এখনো।
সেজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুলে বজ্রপাত বিষয়ক সচেতনতামূলক শিক্ষা থাকা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় সতর্কবার্তা দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
এছাড়ক কৃষকদের জন্য নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে পারলেও মৃত্যু হার কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বজ্রঝড় সাধারণত খুব দ্রুত তৈরি হয়, তাই আগাম সতর্কতা না থাকলে মাঠে কাজ করা কৃষকদের পক্ষে সময়মতো নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে খুব শিগগিরই বজ্রপাত হতে পারে পরিবেশে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, আকাশে হঠাৎ ঘন মেঘ জমা হওয়া, মেঘের গর্জন, বাতাসের আচরণে দ্রুত পরিবর্তন, ঝোড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমক দেখা দিলে বুঝতে হবে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই খোলা মাঠ, ধানক্ষেত বা জলাশয় ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত। কৃষকদের মধ্যে এসব লক্ষণ চেনার প্রশিক্ষণ ও মোবাইল ফোনে বার্তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা গেলেও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এমন পরিবেশ দেখলে বা বজ্রপাত শুরু হলে ঘর ছেড়ে বের না হওয়ার এবং জানালা-দরজা বন্ধ রাখার পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি। এছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার, গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়ার, কংক্রিটের মেঝেতে না শোয়ার এবং কংক্রিটের দেয়ালে হেলান না দেওয়ার কথাও বলা হয়।
এরসঙ্গে বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর প্লাগ খুলে রাখার, জলাশয় থেকে দ্রুত উঠে আসার এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তু থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি শিলাবৃষ্টির সময় ঘরে অবস্থান করার কথাও উল্লেখ করেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।
আরএইচটি/এসএম