ডেঙ্গু কমলেও বাড়ছে চিকুনগুনিয়া, শনাক্তকরণ নিয়ে জটিলতা
ভয়ংকর ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে যখন রাজধানীবাসী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে আরেক মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া। ডেঙ্গুর সঙ্গে উপসর্গের মিল থাকায় এই রোগ শনাক্তকরণে তৈরি হচ্ছে নতুন জটিলতা, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। ফলস্বরূপ, একদিকে যেমন চিকিৎসকরা সঠিক রোগ নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন, তেমনি অভিভাবকরাও বাড়তি খরচ আর অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। বাংলাদেশের শিশু হাসপাতালগুলো বর্তমানে এই নতুন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যস্ত, যেখানে প্রতিটি জ্বর এখন ডেঙ্গু না চিকুনগুনিয়া— এই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
রাজধানী ঢাকায় শিশু রোগজনিত অন্যতম ভরসার হাসপাতাল হলো বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের ভিড়ে ঠাসা হাসপাতালটির বহির্বিভাগ। অধিকাংশ রোগীকেই ‘সিট নেই’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড কিংবা সাধারণ মৌসুমি ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে— চার থেকে পাঁচদিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, মাথা ও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও অল্প সময়ের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক পরিবার থেকে একই দিনে দুই বা তিনজন রোগী হাসপাতালে আসছেন।
সাত বছর বয়সী রোগী নওশিনকে গত সপ্তাহে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন ধরে তার উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা ও অবসাদ ছিল। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকরা ডেঙ্গু ভেবে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেল, সে আসলে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। নওশিনের মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রথমে মেয়ের অবস্থা দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলেছিলেন ডেঙ্গু হতে পারে, তাই ভয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে আসি। পরে শুনলাম চিকুনগুনিয়া। এখন আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। মেয়ের ছোট্ট শরীরটা জ্বরে কাঁপতে দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠছে
শুরুতে ডেঙ্গু পরীক্ষা, পরে আবার চিকুনগুনিয়া
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালে আসা অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্কের যেন শেষ নেই। অনেকেই বলছেন, শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে তারা প্রথমেই ডেঙ্গুর ভয় পান। কিন্তু চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ায় এখন সেই দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন, শুধু মানসিক চাপই নয়, বারবার টেস্ট করাতে গিয়ে তাদের আর্থিক খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
সাত বছর বয়সী রোগী নওশিনকে গত সপ্তাহে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন ধরে তার উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা ও অবসাদ ছিল। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকরা ডেঙ্গু ভেবে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেল, সে আসলে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। নওশিনের মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথমে মেয়ের অবস্থা দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলেছিলেন ডেঙ্গু হতে পারে, তাই ভয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে আসি। পরে শুনলাম চিকুনগুনিয়া। এখন আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। মেয়ের ছোট্ট শরীরটা জ্বরে কাঁপতে দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠছে।’
অন্যদিকে, ১০ বছর বয়সী রাফির বাবা কামরুল হাসান বলেন, ‘শিশুটা হঠাৎ করে খুব জ্বরে আক্রান্ত হয়। হাত-পা ব্যথায় কাঁদতে থাকে। ডাক্তাররা প্রথমে বলেন ডেঙ্গু। ভর্তি করার পর দেখা গেল চিকুনগুনিয়া। কয়েক দিন ধরে এক বিছানায় ছটফট করতে থাকা ছেলেকে দেখে মনে হয়েছে এই রোগও ডেঙ্গুর মতো ভয়ঙ্কর।’
আরেক অভিভাবক বলেন, ডেঙ্গুর সময় একরকম ভয়ের মধ্যে ছিলাম, এখন আবার নতুন করে চিকুনগুনিয়ার ভয়। শিশু অসুস্থ হলে আমরা বুঝতেই পারছি না আসলে কী হয়েছে। একবার টেস্ট করালেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এতে টাকা-পয়সাও যাচ্ছে, আবার দুশ্চিন্তাও বাড়ছে।
ডেঙ্গু কিছুটা কমলেও চিকুনগুনিয়ার কেস বাড়ছে
চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে হাসপাতালে বিশাল চাপ ছিল। এখন ডেঙ্গুর সংখ্যা কমতে শুরু করলেও নতুন করে চিকুনগুনিয়ার কেস বাড়ছে। সমস্যা হলো, রোগী আসার পর শুরুতে বোঝা যাচ্ছে না শিশুটি আসলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নাকি চিকুনগুনিয়ায়। উপসর্গগুলো প্রায় একই— উচ্চ জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এই মিলের কারণে অনেক সময় দ্রুত শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তারা বলছেন, অনেক শিশুকে প্রথমে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হচ্ছে। পরে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সে আসলে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। এতে চিকিৎসার ধরন পাল্টাতে হচ্ছে, আবার রোগীর অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন। একদিকে ভুল চিকিৎসা শুরু হওয়ার ভয়, অন্যদিকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট।
আরও পড়ুন
শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এবিএম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আগের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। আগে অনেক রোগী ভর্তি থাকলেও এখন সেই সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে ডেঙ্গু এখনও একেবারে চলে যায়নি, এটি কম থাকলেও বিদ্যমান রয়েছে। অন্যদিকে, চিকুনগুনিয়া রোগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। আগের বছরগুলোর তুলনায় এই বছর চিকুনগুনিয়ার সংখ্যা অনেকখানি বেড়েছে এবং এর উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এই মৌসুমে ডেঙ্গুর চেয়েও বেশি সংখ্যক চিকুনগুনিয়ার রোগী আসছে।’
‘আমাদের হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি চিকুনগুনিয়ার রোগী আসছে খিলক্ষেত ও এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে। ওই অঞ্চলে প্রচুর চিকুনগুনিয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে— শরীরে অনেক জ্বর থাকে, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা থাকে, হাতে প্রচুর ব্যথা অনুভব হয় এবং দুই থেকে তিন দিনের মাথায় শরীরে বড় বড় লাল লাল র্যাশ (ফুসকুড়ি) ওঠে।’
ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট সাধারণত প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। কিন্তু চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করতে সময় লাগে। পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে চিকুনগুনিয়ার রিপোর্ট আসে না বা রোগটি ধরা পড়ে না। চিকুনগুনিয়ার নিশ্চিত (কনফার্মেটরি) পরীক্ষাটি সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিনের দিন করা উচিত। তবে, আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার ফলাফলের আগেই চিকিৎসকরা রোগীর লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন বা ধারণা করতে পারেন যে এটি হয়তো চিকুনগুনিয়া
ডা. এবিএম মাহফুজ হাসান আল মামুন, আরএমও, শিশু হাসপাতাল
ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া রোগের উপসর্গ কাছাকাছি হলেও তাদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য বিদ্যমান। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত জয়েন্টে মারাত্মক ব্যথা হয়, যা ডেঙ্গুর চেয়ে ভিন্ন। ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে শরীরে র্যাশ বহুলভাবে দেখা গেলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এটি তেমন দেখা যায় না। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দুটিই ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। একই সময়ে এই দুটি রোগের প্রকোপ বাড়ার এটিও একটি কারণ।
ডেঙ্গু শনাক্তে রিপোর্ট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা পাচ্ছেন কি না— জানতে চাইলে ডা. এবিএম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, ‘না, ডেঙ্গু শনাক্ত নিয়ে কোনো সমস্যা আমরা পাচ্ছি না। জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে টেস্ট করালে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। তবে এর বেশি সময় পার হলে তা আর শনাক্ত হয় না। কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ পরে চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করতে হয়। এই সময়ের আগে টেস্ট করলে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় না।’
‘ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট সাধারণত প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। কিন্তু চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করতে সময় লাগে। পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে চিকুনগুনিয়ার রিপোর্ট আসে না বা রোগটি ধরা পড়ে না। চিকুনগুনিয়ার নিশ্চিত (কনফার্মেটরি) পরীক্ষাটি সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিনের দিন করা উচিত। তবে, আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার ফলাফলের আগেই চিকিৎসকরা রোগীর লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন বা ধারণা করতে পারেন যে এটি হয়তো চিকুনগুনিয়া।’
রোগীর শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি আর্থিক চাপও বাড়ছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আব্দুল হামিদ মনে করেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় অনেক রোগীকে একাধিকবার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। প্রথম দিকে ডেঙ্গু নেগেটিভ এলে কয়েকদিন পর আবার চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করাতে হয়। এতে রোগীর শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি আর্থিক চাপও বাড়ছে।
‘ডেঙ্গু এখন শুধু স্বাস্থ্য সংকট নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতির জন্যও বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় গড়ে কয়েক হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকাও খরচ হয়ে যায়। অনেক পরিবারকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়, আবার আক্রান্ত রোগী সুস্থ হলেও দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারে না। এতে পরিবার যেমন চাপে পড়ে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ে। মৃত্যুর ঘটনাগুলো তো পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে দেয়, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতার ক্ষতি ডেকে আনে।’
তার মতে, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় মৌসুমি নয়, বরং সারা বছরব্যাপী স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে প্রতি বছর নতুন করে একই শোক, একই ক্ষতি দেখতে হবে।’
অঞ্চলভিত্তিক রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সরকারের কৌশলকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তার মতে, অঞ্চলভিত্তিক রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনা ছাড়া সংক্রামক এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব।
তিনি বলেন, ‘অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গুর রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনার জন্য সরকারের কোনো সুসংগঠিত উদ্যোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বারবার সরকারকে বলেছি। কিন্তু দৃশ্যত মনে হচ্ছে সরকার ডেঙ্গুকে জনস্বাস্থ্যের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে না। অথচ বাস্তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ।’
‘আমাদের প্রথমেই খতিয়ে দেখতে হবে এডিস মশা বর্তমানে ব্যবহৃত কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধশক্তি গড়ে তুলেছে কি না। যদি প্রতিরোধ তৈরি হয়ে থাকে, তবে এই ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম কোনো ফল দেবে না। পাশাপাশি মশার ঘনত্ব, প্রজননক্ষেত্র, মৌসুমি পরিবর্তন— সবকিছুর একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করতে হবে।’
আরও পড়ুন
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর হারকে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ করে তুলেছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি। ‘যেসব দেশ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সফল হয়েছে, তারা রোগতত্ত্ব ও মহামারিবিদ্যার জায়গায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদেরও দ্রুত সেই পথে হাঁটতে হবে। নইলে প্রতি বছর একই দুর্দশা দেখতে হবে।’
চলতি বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ২১ সেপ্টেম্বর
ডেঙ্গুতে চলতি বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে এদিন ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছে বরিশাল বিভাগে। এ নিয়ে এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৯ জনে। আর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে এর মধ্যে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়। অর্থাৎ, গতকাল শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা থেকে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এর আগের ২৪ ঘণ্টায়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪৪ জন পুরুষ এবং ২৯৬ জন নারী। একই সময়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৩ জন রোগী।
বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, এই ১২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন জন ও দুজন বরগুনায় মারা গেছে। বাকি সাতজনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির হাসপাতালগুলোতে তিনজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় দুজন এবং চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছে। সর্বশেষ মৃত্যুর তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ ছিল, তবে একদিনে এত বেশি মৃত্যুর নজির এই বছর প্রথম। সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ ডেঙ্গুতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২১ সেপ্টেম্বরের আগে এটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সভিত্তিক রোগী ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
টিআই/এমএআর/