দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর এবার নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। যেখানে দলটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেই। নতুন এই সমীকরণে বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া অনেকের দৃষ্টিতে এখন কেবল ‘আনুষ্ঠানিকতা’। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ, নির্বাচনী ইশতেহার, গণতন্ত্র, জোট রাজনীতি, জুলাই সনদ, এনসিপি, জামায়াত ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের চিফ অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্টেট অ্যাফেয়ার্স আদিত্য রিমন

ঢাকা পোস্ট : অন্তত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর দেশে একটা স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনার কী মনে হয়, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসবে?

মির্জা ফখরুল : প্রথমত, বিষয়টা হচ্ছে—বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চার সুযোগ সেভাবে পাওয়া যায়নি। একমাত্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করেছিলেন। তিনি কয়েক বছর ছিলেন, আর সেই কয়েক বছরে তিনি চেষ্টা করেছিলেন একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে।

দ্বিতীয়ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেখানে আমরা মোটামুটি একটা গণতান্ত্রিক চর্চা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা বলতে যেটাকে বোঝায়, যাকে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র বলা যায়—সেটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেখেনি। এই দেশ বারবার ধাক্কা খেয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পর যখন শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, সেটাই ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। পরবর্তীতে এরশাদের মার্শাল ল এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন—বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কার্যত গলা টিপে হত্যা করেছে।

গণতন্ত্র বলতে শুধু নির্বাচন বা সংসদ নয়—গণতন্ত্র একটি সামগ্রিক বিষয়। এর ভেতরে মিডিয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সব জায়গাতেই এখন একটা সমস্যা আছে—মানসিকতার সমস্যা। যদি গণতন্ত্রের চর্চা ধারাবাহিকভাবে চলত, তাহলে যেমন দেখা গেছে—যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েকবার নির্বাচন হয়েছে, তখন একটা গণতান্ত্রিক ধারা তৈরি হয়েছিল। সেই ধারা যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে পারত, তাহলে আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।

কিন্তু এখানে মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে একটা প্রচেষ্টা আছে, যেন গণতন্ত্রকে জিপটাইজ (জিম্মি) করে রাখা হয়। এটা এক ধরনের deliberate attempt। আমাদের মিডিয়ারও সেই চর্চাটা নেই, যা থাকা দরকার। সত্যকে সত্য বলা, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলা—এই জায়গাটায় পেশাদারিত্বের একদম অভাব। যখন কেউ নিজস্ব স্বার্থে বা পদ্ধতিতে খবর তৈরি করা শুরু করে, তখন সেটা গণতন্ত্রের জন্য কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণেই আমি তখনও বলেছিলাম, এখনো বলছি, আমৃত্যু বলব—কারণ আমি একজন গণতান্ত্রিক মানুষ।

ঢাকা পোস্ট : জুলাই সনদ নিয়ে একটা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ২৫টি রাজনৈতিক দল এতে স্বাক্ষর করেছে। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে এক সাক্ষাতে জামায়াতের জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, যদি নভেম্বরে গণভোট না হয় তাহলে তারা জুলাই সনদ থেকে স্বাক্ষর প্রত্যাহার করবেন এবং আন্দোলনে যাবেন। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা বা জটিলতা তৈরি হতে পারে কি না?

মির্জা ফখরুল : আমি তাদের কথাবার্তায় খুব একটা জটিলতা দেখি না। এখন পর্যন্ত তারা যা বলেছেন এবং সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তাতে আমি আশাবাদী। তবে তারা যেটা বলছেন এবং করতে চাচ্ছেন—আমি মনে করি তাদের এটা নিয়ে দুই বার চিন্তা করা উচিত। কারণ এখন মূল সংকট হচ্ছে—একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এই দুটো বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেই সবকিছু এগিয়ে যাবে। তখন যত রকম তর্ক-বিতর্ক বা মতপার্থক্য আছে, সেগুলো সংসদে গিয়ে আলোচনা করা সম্ভব।

আমরা কেন সেটা করি না? যেখানে আপনি আমার সঙ্গে একমত নন সেই লড়াইটা সংসদেই হোক, সংসদের ভেতরেই আসুক। কিন্তু যখনই আমরা বিষয়গুলোকে রাস্তায় নিয়ে আসি, তখন দেশ ও জাতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমি কয়েকটা কথা বলি—শুধু অর্থ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সবকিছু—ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ—সবই নেমে এসেছে। কোনো বিনিয়োগই হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই।

আমরা যদি আগে থেকেই পক্ষপাতদুষ্ট কথা বলতে থাকি, একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকি, তাহলে এটা আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আমি আহ্বান করব, অনুরোধ জানাব—সব রাজনৈতিক দল যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এখন নির্বাচনের দিকে যায়। Now, let’s go for election. নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, আমরা সেটা মেনে নেব। তারপর সবাই মিলে চেষ্টা করব দেশ গড়তে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ম্যাডামও (খালেদা জিয়া) বলেছেন—আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই।

ঢাকা পোস্ট : আপনি প্রায়ই বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ভিন্নমত লালনে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ভিন্নমত কতটা আছে? আর সাম্প্রতিক যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যাচ্ছে, এ থেকে মুক্তির উপায় কী?

মির্জা ফখরুল : মুক্তির উপায় একটাই—তাদের অনুধাবন করানো, বোঝানো। তাদের বুঝতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবসময় কিছু অ্যান্টি-ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তারা তাদের অ্যান্টি-ডেমোক্রেটিক অ্যাক্টিভিটিজ চালিয়ে যায়। দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়ে।

আমি সবসময় একটাই আবেদন জানাই—Please, come out of that (দয়া করে ওটা থেকে বেরিয়ে আসুন)। আমি কারও নাম বলব না, কোনো দলের নামও বলব না। কিন্তু কেউ কেউ চেষ্টা করছে যেন নির্বাচন না হয়। আমি জানতে চাই—লাভটা কী? What is the benefit? এক বছর পর যদি নির্বাচন হয়, তাদের লাভটা কী হবে? গণতন্ত্র কতটুকু এগোবে, দেশ কতটুকু এগোবে? আজ যদি আবার কোনো পরিবর্তন ঘটে, তাতে দেশের কত বড় ক্ষতি হবে, সেটা কেউ ভেবে দেখেছে? আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য থাকা উচিত—সবাই নির্বাচনে নামি। জনগণ যাকে ভোট দেবে, আমরা নিঃসন্দেহে মাথা পেতে নেব এবং সেই অনুযায়ী কাজ করব।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নে চ্যালেঞ্জ কেমন দেখছেন? যুগপৎ সঙ্গীদের কত আসন ছাড় দেবেন?

মির্জা ফখরুল : প্রথমত, প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ, গত ১৫-১৬ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। সেখানে যেমন তরুণ প্রজন্ম আছে, তেমনি আছেন পুরনো প্রজন্মের নেতারা। সবাইকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে মাঠপর্যায়ে জরিপ করছি, যাতে জয় পেতে পারেন এমন সম্ভাবনাময় প্রার্থী নির্বাচন করা যায়। আমরা যাচাই করছি—কে জিততে পারেন, কার জনসমর্থন বেশি। এভাবে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেবে আমাদের সংসদীয় বোর্ড।

দ্বিতীয়ত, যুগপৎ সঙ্গীদের কাছ থেকেও আমরা তালিকা নিচ্ছি। তাদের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব। তারপর মাঠের বাস্তবতা ও প্রার্থীর সক্ষমতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। ধরুন, কোনো আসনে এমন একজন প্রার্থী দেওয়া হলো যার জয়ের সম্ভাবনা খুব কম বা নেই বললেই চলে—তাহলে তো সেই আসনটা হারাতে হবে, প্রতিপক্ষের কাছে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে আমরা যুগপৎ সঙ্গীদের অনুরোধ করব, তারা যেন বিষয়টি বিবেচনায় নেন। পরবর্তীতে আমরা সেটি অন্যভাবে সমাধান করব। তবে, আমরা যতটা সম্ভব আমাদের জোটসঙ্গীদের আসন ছাড় দেব।

ঢাকা পোস্ট : আপনাদের ওপর নির্বাচনী জোট করার কোনো চাপ আছে কি না কিংবা নির্বাচন-পরবর্তী জোট?

মির্জা ফখরুল : নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে পারলে আমাদের যুগপৎ সঙ্গীদের নিয়ে জাতীয় সরকার করার ঘোষণা দেওয়া আছে আমাদের। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেটা আগেই বলেছেন যে, একসঙ্গে আন্দোলনের সঙ্গীদের নিয়ে দেশ পুনর্গঠন করবেন।

ঢাকা পোস্ট : পিআর নিয়ে বিএনপির একটা দ্বিমত আছে। কিন্তু পিআর ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন কোনো সংস্কার এনেছে মনে করছেন?

মির্জা ফখরুল : নির্বাচনের যে ব্যবস্থা, সেটা আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এখন সেই জায়গায় ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে এসেছে। যদিও এখনো কোনো নির্বাচন এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়নি, তবু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি একটি আস্থা তৈরি হয়েছে।

এখন পর্যন্ত তারা যে কাজগুলো করেছে তাতে আমাদের বিশ্বাস আছে যে নির্বাচনটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। তারা কিছু কিছু পরিবর্তন এনেছেন, যেগুলো আমরা গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছি। কয়েকটি বিষয়ে আমাদের কিছু আপত্তি ছিল, সেগুলো আমরা জানিয়েছি। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে—উই আর হ্যাপি উইথ দ্য কমিশন।

ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছে। জাতীয় নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

মির্জা ফখরুল : আমি মনে করি না, জাতীয় নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে। কারণ অতীতেও এ ধরনের ঘটনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে বলে আমার জানা নেই। যেমন ধরুন, মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব যখন ডাকসুর ভিপি ছিলেন বা আখতারুজ্জামান ভিপি ছিলেন—তখন জাতীয় রাজনীতিতে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। এটাই বাস্তবতা।

ছাত্রদল খারাপ করার কারণও আছে। প্রথমত, বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়—দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই তারা ঢুকতে পারেনি। সেই কারণে তাদের নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি।

দ্বিতীয়ত, ছাত্রদল সবচেয়ে বেশি লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে। তাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছে, কেউ কেউ জীবন দিয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যে ভালো করা সত্যিই কঠিন। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষের একটি সুবিধা ছিল—তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল, সমঝোতার মাধ্যমে একটা অবস্থানে ছিল। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। তাই তাদের ভালো করাটাই স্বাভাবিক।

ঢাকা পোস্ট : বিগত নির্বাচনগুলোতে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে নির্বাচন করেছেন। আগামীতে তিনি কয়টি আসনে অংশ নেবেন। আর আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়টি আসনে অংশ নেবেন?

মির্জা ফখরুল : একটু অপেক্ষা করুন, তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন কি না, কয়টা আসনে করবেন, খুব শিগগির আপনাদের জানিয়ে দেব। এগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিষয়টিও তাই।

ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন- পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামাতের আন্দোলন সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা। আপনিও কি তাই মনে করেন?

মির্জা ফখরুল : আমি তাদের এই বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তারা তাদের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে কথাগুলো বলেছেন। আমরা শুধু বলছি—পিআর চাই না। কারণ, জাতি এখনো পিআর ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এটা নিয়ে পরবর্তী সংসদে আলোচনা হোক। সেখানে যদি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে পিআর গ্রহণযোগ্য, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

ঢাকা পোস্ট : আমরা এটা শুনতে পাচ্ছি এনসিপির সঙ্গে বিএনপির একটি নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই বিষয়ে জানতে চাই।

মির্জা ফখরুল : আপনি যেমন শুনতে পাচ্ছেন তেমনি আমিও শুনতে পাচ্ছি।

ঢাকা পোস্ট : এনসিপি আসতে চাইলে তাদের জন্য বিএনপির দরজা খোলা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল : আমাদের কাছে সব রাজনৈতিক দলের জন্য দরজা খোলা আছে।

ঢাকা পোস্ট : জামায়াতের জন্যও খোলা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল : জামায়াত যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চায়, তাহলে আমরা তখন বিষয়টা বিবেচনা করব। তবে রাজনীতিতে সরকারি দলও লাগবে, আবার বিরোধী দলও লাগবে—এই বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের নিয়ে এনসিপির নেতারা বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। যদিও রাজনীতিতে তারা নতুন। তাদের সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী, কীভাবে দেখেন তাদের?

মির্জা ফখরুল : আমরা তো তাদের স্বাগত জানিয়েছি, সবসময় তাদের পছন্দ করি এবং সহযোগিতা করতে চাই। এখন তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কিন্তু আমরা কখনো মাইন্ড করিনি। খেয়াল করে দেখবেন—আমি এনসিপির বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলি না। আমি তাদের স্বীকার করি, পছন্দ করি, শ্রদ্ধা করি এবং চাই তারা ভালো করুক।

রাজনৈতিক দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রতিপক্ষ থাকবে—সেটা তাদেরও স্বীকার করতে হবে। এখন তারা শুধু আন্দোলনের যোদ্ধা নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও। সেটাও তাদের সেভাবে চিন্তা করতে হবে। তবে, our door is open to all political parties (আমাদের দরজা সব রাজনৈতিক দলের জন্য খোলা)।

ঢাকা পোস্ট : তাহলে তারা যদি জোটে আসতে চায় আপনারা ওয়েলকাম করবেন, এটা বলা যায় কি না?

মির্জা ফখরুল : আলোচনা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি। যেহেতু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তাই পার্টির মহাসচিব হিসেবে আগেভাগে কিছু বলা ঠিক হবে না। অপেক্ষা করুন।

ঢাকা পোস্ট : আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ কতদূর এগিয়েছে? এতে কী থাকছে?

মির্জা ফখরুল : আমাদের ইশতেহারের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে, প্রায় শেষ পর্যায়ে বলা যায়। এখন আমরা সেক্টরভিত্তিক প্রস্তাবগুলো স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করব। সেখানে অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হবে। ইশতেহারে কী থাকবে, সেটা এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে ইশতেহারের মূল ভিত্তি হবে ৩১ দফা।

ঢাকা পোস্ট : ‘আকাশসেবা’ অর্থাৎ বিমান পরিবহন বাড়ানো নিয়ে ইশতেহারে কোনো পরিকল্পনা থাকবে?

মির্জা ফখরুল : অবশ্যই থাকবে। আমাদের ইশতেহারে বিমান খাতের পরিধি বাড়ানোর কথা স্পষ্টভাবে থাকবে। ইশতেহার প্রকাশ হলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ঢাকা পোস্ট : আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপির কাউন্সিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল : না, প্রশ্নই ওঠে না।

ঢাকা পোস্ট : তরুণ প্রজন্মের জন্য আগামীতে আপনাদের পার্টির পরিকল্পনা কী? তাদেরকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না?

মির্জা ফখরুল : ইতিমধ্যেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৫ মাসের মধ্যে ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক সম্পন্ন হয়েছে। ‘ফ্যামিলি কার্ড’, ‘কৃষি কার্ড’ ইত্যাদি চালু করা হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে কর্মসংস্থানে। এবার অগ্রাধিকার পাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত।

ঢাকা পোস্ট : শোনা যাচ্ছে তারেক রহমান নভেম্বরে দেশে ফিরবেন, এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?

মির্জা ফখরুল : তারেক রহমান যখনই উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই দেশে ফিরে আসবেন। আমরা আপনাদের জানিয়ে দেব, কখন তিনি আসবেন।

ঢাকা পোস্ট : আগামী নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহারের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

মির্জা ফখরুল : আমরা বাংলাদেশে কোনো ধরনের ধর্মীয় কার্ড খেলার বিপক্ষে। কেউ সেটা করলে, আমরা রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করব। আমরা রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করব।

ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এএইচআর/জেএস

পরবর্তী সাক্ষাৎকার : এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন