করোনার হানা, এর মধ্যে অধিকাংশ সময়ই বৈরী আবহাওয়া। সকালে রোদ, তো বিকেল থেকে বৃষ্টি। কিন্তু থেমে নেই কাজ। কেউ ময়লা তুলছেন, কেউ মাটি ফেলছেন আবার কেউ ঢালাইয়ের কাজ করছেন। পুরোদমে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ।

বিমানবন্দরটির সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে এর রানওয়ে। অত্যাধুনিক বিমানবন্দরের কাতারে নাম লেখাতে যাওয়া কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি হচ্ছে সমুদ্র-ছুঁয়ে। সমুদ্রের নোনা জলের ঠিক ওপরেই উড়োজাহাজটি অবতরণের প্রস্তুতি নেবে। রানওয়ে স্পর্শ করার তিন সেকেন্ড আগে সেটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করবে। পৃথিবীর উপকূলীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে এই বিমানবন্দর।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নয় হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে।

বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নয় হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠা-নামা করতে পারবে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়ে নির্মাণে চলছে বালু ভরাটের কাজ

সরেজমিন বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপের পাশেই সমুদ্রে বালি ভরাটের কাজ চলছে। বিমানবন্দরের ভেতরে টার্মিনাল ভবনটির কাজও দ্রুতগতিতে শেষ হচ্ছে। টার্মিনাল ভবনের অবকাঠামো ও ঢালাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শিগগিরই শুরু হবে ফিনিশিংয়ের কাজ।

টার্মিনাল কমপ্লেক্স নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি। নির্মাণকাজে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক যুক্ত। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থাই এখানে আছে। আশা করছি শিগগিরই কাজ শেষ করতে পারব।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ দুই অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে আগের টার্মিনাল ভবনসহ কিছু মেরামতের কাজ হচ্ছে। এটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রানওয়ে সম্প্রসারণ, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম ও ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম স্থাপন এবং নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজার বিমানবন্দর

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিমানবন্দরের উন্নয়ন। চলমান কাজ সম্পন্ন হলে রানওয়ের আয়তন বাড়বে, অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হবে বিমানবন্দর।

‘আশা করছি, গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা ভোগ করবেন।’

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলেই এখানে ওঠা-নামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্প।

দ্রুত এগিয়ে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের নির্মাণকাজ

বেবিচক বলছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং কয়েকটি কার্গো প্রতিষ্ঠানের ছোট এয়ারক্রাফট এই বিমানবন্দরে ওঠা-নামা করে। ভবিষ্যতে কক্সবাজার সংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশের বড় বড় এয়ারলাইন্সের এয়ারক্রাফট এখানে অবতরণ করতে পারবে।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বিশ্বের নামকরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ৯ ফেব্রুয়ারি বেবিচক সদরদফতরে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন- জেভি’র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেবিচক অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত ২১ শতাংশ কম দর প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠান দুটি। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয়।

শিল্পীর চোখে যেভাবে নির্মিত হবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের বর্ধিত রানওয়ে

বেবিচক জানায়, নির্মাণকাজের অনুমতি পাওয়া চীনের ওই দুই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ‘বেইজিং বিমানবন্দর’ নির্মাণের মতো অত্যাধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা। এই বিমানবন্দরেও থাকবে সব ধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া।

এআর/জেইউ/এমএআর/