দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০২০ সালের এই দিনে (৮ মার্চ) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে প্রথমবারের মতো জানানো হয়, দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী এবং দুইজন পুরুষ।

এরপর টানা দুই বছরে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০২ জনের। এ সময় করোনায় ঝরেছে ২৯ হাজার ৮৯ জনের প্রাণ। 

শুরু থেকে ভয়-ভীতি আর আতঙ্ক নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণ এলেও বর্তমানে করোনাবাস্তবতার সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ভাইরাসটিতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশে।

দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়তে থাকে আশঙ্কাজনকভাবে। এরপর ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল ছিল প্রথম মৃত্যুশূন্য দিন। পরবর্তী মৃত্যুশূন্য দিন ছিল ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর, সেদিন দেশে করোনায় একজনও মারা যাননি। তবে এরপর এখনো করোনায় মৃত্যুহীন দিন আসেনি বাংলাদেশে।

দুই বছরে আক্রান্ত ১৯ লাখ ৪৭ হাজার, মৃত্যু ২৯ হাজার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৮টি। এতে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জনের। তাদের মধ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৫৫৯ জনের।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চের ৭ তারিখ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫০টি। এতে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০২ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৪ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ৮৯ জন। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৫৬৯ জন। আর নারী রয়েছেন ১০ হাজার ৫২০ জন।

বেশি মৃত্যু ঢাকায়, কম ময়মনসিংহে

বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছেন ১২ হাজার ৭৭৫ জন, মৃত্যুর হার ৪৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। সবচেয়ে কম মারা গেছে ময়মনসিংহে। বিভাগটিতে ৮৭৯ জন মারা গেছেন, মৃত্যুর হার তিন দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

এছাড়াও চট্টগ্রামে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, খুলনায় ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ, রংপুরে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সিলেটে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বরিশালে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৭ হাজার ২৯৭টি। পরীক্ষা হয়েছে ৫৫ হাজার ২৮৪টি। শনাক্ত সর্বোচ্চ হয়েছে ১৬ হাজার ২৩০টি। সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৬২৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬৪ জন। শনাক্তের হার সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সুস্থের হার ৯৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১২ দশমিক ৮২৫ শতাংশ। 

সব খুলে দিয়েছি, এটাই বড় সফলতা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনা শনাক্ত হওয়ার দুই বছর প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে। গত মাসেই করোনা শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশের ওপরে উঠেছিল, এখন সেটা নেমে এসেছে ২ শতাংশে। মানুষের মৃত্যুও কমে গেছে। আমরাও সব কিছুই খুলে দিতে পেরেছি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মিল, কারখানাসহ সব কিছুই চলছে। এটা আমাদের বড় সফলতা।

তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার কারণে দেশ সুরক্ষিত। টিকা আমরা দিতে পেরেছি বলে সংক্রমণের হার কমেছে। তাই স্কুল খুলেছে। এখন কোভিড টেস্ট ছাড়াই বিদেশ যেতে পারছে দেশের মানুষ। এটাও আমাদের সফলতার মধ্যেই পরে। চাকরির জন্য বিদেশ যাচ্ছে, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বেড়েছে, এটাতে টিকার ভূমিকা আছে। দেশের জিডিপি কমেনি। লকডাউন থাকলে আমাদের গ্রোথ বাড়ত না। তাই আমাদের জিডিপি বেড়েছে। এটা সবচেয়ে বড় সফলতা।

নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা বেশি হচ্ছে : জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনা সংক্রমণ কমে আসায় হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড রোগী চিকিৎসা এখন বেশি হচ্ছে। ঢাকা শহরের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে মাত্র ৪০০ করোনা রোগী, আর সারা বাংলাদেশে ৮০০ জনের মতো রোগী আছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে এক লাখ বেড আছে। এই এক লাখ বেড তো নন-কোভিড রোগী জন্য।

মন্ত্রী আরও বলেন, ৪ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। আট হাজার নতুন নার্সও নেওয়া হচ্ছে। করোনা কমে আসায় তারা এখন নন-করোনা রোগীর দিকেই বেশি নজর দেবেন।

টিআই/এইচকে