> মানুষের স্বার্থে দেশ চাইলে যেকোনো সময় ফিরে আসব
> দেশ আমায় অনেক দিয়েছে, এবার আমি দিতে চাই 
> চিকিৎসক নয়, চিকিৎসা-ব্যবস্থা রোগী-কেন্দ্রিক হওয়া উচিত

যেখানে আমরা কাজ করি, সেখানে রোগীকে ঘিরেই চিকিৎসা-ব্যবস্থাটা আবর্তিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখি রোগীর পরিবর্তে চিকিৎসককে ঘিরেই চিকিৎসাসেবা আবর্তিত হচ্ছে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমরা দেখতে চাই চিকিৎসককে না ঘিরে রোগীকে নিয়েই যেন চিকিৎসা-ব্যবস্থাটা আবর্তিত হোক। সবকিছুই যেন রোগী-কেন্দ্রিক হয়...

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার কলেজ অব মেডিসিন ফ্যাকাল্টির বিশিষ্ট পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর এমবিবিএস করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। দীর্ঘ ২৮ বছর প্রবাসে থাকলেও দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আবেগ-ভালোবাসা যেন তিল পরিমাণও কমেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকলেও দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থা আর চিকিৎসকরাই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান। স্বপ্ন দেখেন এক দিন উন্নত দেশগুলোর মতো প্রিয় স্বদেশের স্বাস্থ্য খাতও স্বমহিমায় আলোকিত হবে। সেই লক্ষ্যে স্বপ্নবাজ ও দেশপ্রেমী আরও কিছু চিকিৎসককে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্লানেটারি হেলথ অ্যাক্যাডেমিয়া’ নামক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গড়তে চান বৈশ্বিক মেলবন্ধন।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হন ডা. বি এম আতিকুজ্জামান। একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেন দেশের স্বাস্থ্য খাতের নানা দিকসহ উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম

ঢাকা পোস্ট : দেশের চিকিৎসকদের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। সে লক্ষ্যে একটি প্লাটফর্মও আপনারা তৈরি করেছেন। সেটি নিয়ে যদি কিছু বলতেন…

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তরুণ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে ২০২০ সালের জুলাই মাসে চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের নিয়ে আমরা একটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলি। এর নাম রাখা হয় ‘প্লানেটারি হেলথ অ্যাক্যাডেমিয়া’ (পিএইচএ)। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্ব থেকে ১৫০টিরও বেশি ফ্যাকাল্টি সদস্য নিয়ে ২০০টিরও বেশি সেশন করা হয়েছে। এসব সেশনে অংশ নেওয়া প্রত্যেকেই অত্যন্ত সম্মানিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার কলেজ অব মেডিসিন ফ্যাকাল্টির বিশিষ্ট পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. বি এম আতিকুজ্জামান

ওই সেশনগুলোতে পিএইচএ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড- ১৯ মহামারি এবং চিকিৎসা শিক্ষা সম্পর্কিত ২০টিরও বেশি ওয়েবিনার কভার করেছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি চিকিৎসকরা ছুটে এসেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড থেকে তারা এসেছেন। তাদের নিয়েই আমরা এ প্লাটফর্ম তৈরি করেছি। তারা গত দুই বছর ধরে পিএইচএ’র সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। আমরা চাই দেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের একটু একটু করে সেতুবন্ধন তৈরি করতে।

ঢাকা পোস্ট : বিদেশে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম আপনারা হাতে নিয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত যদি বলতেন…

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : চলতি বছর (২০২২ সাল) আমাদের লক্ষ্য হলো ছয় থেকে আটজন বাংলাদেশি চিকিৎসককে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানে চার থেকে ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া। ইতোমধ্যে আমরা একজনকে নিয়েছি। তিনি ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের একটি নামকরা লিভার সেন্টারে কাজ করেছেন।

আমাদের লক্ষ্য হলো- দেশের তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীদের পৃথিবীর বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। সেখানে কাজের মাধ্যমে তারা যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করবেন, সেটি বাংলাদেশে প্রয়োগ করবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- নামিদামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানকার প্রযুক্তিজ্ঞান ও ব্যবহার, চিকিৎসায় বিশ্বায়নের প্রভাব, আধুনিক বিজ্ঞানের দৌড়ে পৃথিবী কোথায় আছে আর আমরা কোথায় আছি— এসব বিষয়ে সার্বিক জ্ঞানলাভ করবেন তারা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজের সুযোগ দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।

আমরা বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ (এনআইসিভিডি) বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে মিউচুয়াল এগ্রিমেন্ট সাইন করেছি। তারা সবাই মিলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রার্থী বাছাই করবেন। আশা করছি আমাদের এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি লাভ করবে।

মানুষের স্বার্থে দেশ চাইলে যেকোনো সময় ফিরে আসব— ডা. বি এম আতিকুজ্জামান / ছবি- ঢাকা পোস্ট

পাশাপাশি আমরা আরেকটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। এর নাম হলো ‘ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর’। দেশের সব মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের অ্যাম্বাসেডর হতে পারবেন। আমরা তাদের মেন্টরশিপ প্রদান করব। এমনকি তাদের জন্য স্কলারশিপও দিব।

তাদের জন্য ‘রোড টু রেসিডেন্সি’ (আরটুআর) নামের একটি স্পেশাল প্রোগ্রামও থাকছে। সেখানে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডে চিকিৎসক হওয়া যায় বা কীভাবে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যায়— এ বিষয়ে তৃতীয় বর্ষ থেকে তাদের গড়ে তোলা হবে। এ কার্যক্রমও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

ঢাকা পোস্ট : আপনি তো যুক্তরাষ্ট্রে ভালো অবস্থানে আছেন। দেশের চিকিৎসকদের জন্য আলাদা করে কেন এতকিছু করছেন?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : আমি এ দেশের সন্তান। এ দেশের মাটিতেই আমার বড় হওয়া। দেশের বাইরে থাকলেও সবসময় বাংলাদেশের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করি। ১৯৯৪ সালে আমি দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পা দিই। বাংলাদেশে তখন এত চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা ছিল না। কিন্তু ওই সময় থেকে উচ্চশিক্ষার প্রতি আমার একটা স্বপ্ন ছিল। এরপর যখনই আমি দেশে আসি, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করি বা করে যাচ্ছি। এর কারণ দুটি। প্রথমত, গিভ ইন ব্যাক অর্থাৎ ফিরিয়ে দেওয়া। তার চেয়েও বড় কথা হলো, আমার ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব; সবাই কিন্তু এ দেশেই আছে। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে এসে আমি যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি, সেটি যেন দেশের মানুষকেও দিতে পারি, এজন্য সবসময় আমার ভেতরে একটা টান অনুভব হয়। একই সঙ্গে আমার চাওয়া, বাংলাদেশ যেন পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে; স্বাস্থ্য খাতেও যেন এটি হয়।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, এখন আমরা সবাই গ্লোবাল সিটিজেন। সুতরাং আমি পৃথিবীর যে দেশেই থাকি না কেন, আমরা আসলে সবাই একটা বিশ্বে বসবাস করি। এ বিশ্ব আপনার, আমার; আমাদের সবার। বৈশ্বিক এ পরিস্থিতিতে আমার মনে হয় টেকনোলজি ট্রান্সফার আমাদের স্বাভাবিক জীবনের একটা অংশ। এসব জিনিসও আমাকে বারবার দেশে আসা এবং দেশের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করে।

ঢাকা পোস্ট : একটি উন্নত দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করছেন, পাশাপাশি আমাদের দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাও দেখছেন। কতটুকু পার্থক্য মনে হচ্ছে? আমরা কতটুকু পিছিয়ে আছি বা কতটুকু এগিয়েছি?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : চিকিৎসা-ব্যবস্থা আসলে একটি ডাইনামিক প্রসেস। প্রতিনিয়তই এটি পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন মহামারি আসছে, সেগুলো আমরা মোকাবিলাও করছি। নতুন নতুন প্রযুক্তিও আসছে। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। এখন যেটি দরকার সেটি হলো পারস্পরিক সহযোগিতা।

দেশ আমায় অনেক দিয়েছে, এবার আমি দিতে চাই— ডা. বি এম আতিকুজ্জামান / ছবি- ঢাকা পোস্ট

একটা জিনিস আমরা সবসময় লক্ষ্য করেছি, যেখানে আমরা কাজ করি, সেখানে রোগীকে ঘিরেই চিকিৎসা-ব্যবস্থাটা আবর্তিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখি রোগীর পরিবর্তে চিকিৎসককে ঘিরেই চিকিৎসাসেবা আবর্তিত হচ্ছে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমরা দেখতে চাই চিকিৎসককে না ঘিরে রোগীকে নিয়েই যেন চিকিৎসা-ব্যবস্থাটা আবর্তিত হোক। সবকিছুই যেন রোগী-কেন্দ্রিক হয়। আমার লক্ষ্য হলো, চিকিৎসা-সংক্রান্ত এ ধারণা বদলে দিয়ে এটিকে আরও বিস্তৃত করার মাধ্যমে দেশে জনবান্ধব চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা।

ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসা প্রযুক্তিতে আমরা কতটুকু পিছিয়ে আছি?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : প্রযুক্তি তখনই উন্নতি লাভ করে, যখন এটি (প্রযুক্তি) ব্যবহারের মতো ক্যাপাবিলিটি (সামর্থ্য) আমার কাছে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জায়গাটার অভাব রয়েছে। কারণ, প্রযুক্তি যেকোনো সময় আমদানি করে আনা যায়। কিন্তু এর যথোপযুক্ত ব্যবহারই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একটা প্রযুক্তি আসার আগে যে শিক্ষা দরকার, সেটি ট্রান্সফার করার জন্য ‘প্লানেটারি হেলথ অ্যাক্যাডেমিয়া’ কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েও পড়ছে। যেমন- লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের (প্রতিস্থাপন) কথা বলা যায়। আমরা জানি একটি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য শুধু ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন হলেই চলে না। এখানে পোস্ট সার্জিক্যাল ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম ডেভেলপ করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এগুলো করতে  হলে টেকনিশিয়ান লাগে, টেকনোলজিস্ট লাগে, দক্ষ চিকিৎসক লাগে। সেজন্য আমরা বলছি, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ফেলোশিপ এক্ষেত্রে বড় কাজ করবে। আমরা যদি এখানে এসে সময় নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করি, এটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে আমরা অনেক উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়েও আছি। তবে, এটা সময়ের ব্যাপার। পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপার। সবমিলিয়ে আশা করছি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও স্বাস্থ্য খাতে ভালো কিছু করব।

ঢাকা পোস্ট : দেশে প্রতি বছর অসংখ্য নতুন চিকিৎসক বের হচ্ছেন। কিন্তু মানসম্মত চিকিৎসক নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : একটি দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের মান নির্ধারণের জন্য একটি লোকাল বডি থাকে। যেমন- আমি একজন গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট, আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান আছে, বোর্ড অব ইন্টারনাল মেডিসিন আছে। তারা নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে একজন চিকিৎসককে যাচাই করে এবং তার উন্নতির জন্য কী কী লাগবে সেটি নির্ধারণ করে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কিংবা অন্য প্রফেশনাল বডি, বিশেষ করে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) আছে, তারা এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

আমেরিকার রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি তরুণ চিকিৎসকদের সঙ্গে ডা. বি এম আতিকুজ্জামান / ছবি- সংগৃহীত

আমি বলব না যে আমাদের পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে ভালো হয়ে যাবে বা যতটা হওয়া দরকার ততটা হয়নি। তবে, অনেককে অনেক ধরনের হতাশাজনক কথাবার্তা বলতে শুনি। কিছু কিছু উপাদানের ওপর নির্ভর করে বলতে হয় যে, এ পয়েন্টগুলোতে আমাদের জুনিয়র চিকিৎসকরা ভালো করছেন না। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আমাদের ডেভেলপ করতে হবে। কিন্তু আমরা সেভাবে ডেভেলপ করতে পারিনি। সেক্ষেত্রে আমাদের যে মেডিকেল কারিকুলাম আছে, সেটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনার মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে। এখানে পারস্পরিক সহায়তার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

চিকিৎসকদের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যারা প্রশিক্ষণ নেবে তারা যেন যথেষ্ট সাপোর্ট পায়, সেটা কিন্তু বড় জিনিস। আপনি একজন চিকিৎসককে প্রশিক্ষিত করতে চান, কিন্তু সে বছরের পর বছর পড়াশোনা করছে, সে তার পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারছে না, ফলে তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে— এ বিষয়ও আমাদের দেখতে হবে। সবমিলিয়ে প্রশিক্ষণগুলো ভালো হলে চিকিৎসকের মানও ভালো হবে।

ঢাকা পোস্ট : কখনও যদি দেশের স্বার্থে, চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে দেশে চলে আসতে বলা হয়, আসবেন কি না?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো সময় দেশ চাইলে অবশ্যই চলে আসব। তবে, এখন যেভাবে পৃথিবী এগোচ্ছে এবং যেভাবে ভার্চুয়াল টেকনোলজি কাজ করছে, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বসেও কিন্তু আপনি দেশেই থাকতে পারেন। ‘প্লানেটারি হেলথ অ্যাক্যাডেমিয়া’ গত দেড় বছর ধরে সেটি প্রমাণ করেছে। তারপরও যদি শারীরিকভাবে দেশে চলে আসতে হয়, অবশ্যই চলে আসব।

তবে, আমরা এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছি যে চাইলেই যেকোনো সময় সবকিছু ছেড়ে চলে আসতে পরি না। হয়তো নির্দিষ্ট সময় দেশে অবস্থান করে সাহায্য করতে পারি। আমরা যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছি, সবাই কিন্তু একই ইচ্ছা পোষণ করেন। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় দেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশিষ্ট পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. বি এম আতিকুজ্জামান / ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা পোস্ট : দেশের তরুণ চিকিৎসকদের প্রতি আপনার বিশেষ কোনো পরামর্শ আছে কি না?

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান : তরুণ চিকিৎসকদের সবসময় মনে রাখতে হবে, পুরো বিশ্বটা এখন হাতের মুঠোয়। হতে পারে বাংলাদেশ আলাদা একটি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র আলাদা দেশ, কানাডাও আলাদা। কিন্তু আমাদের উন্নত প্রযুক্তি দরকার, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। এজন্য তাকে হতে হবে একজন গ্লোবাল ফিজিশিয়ান। তার দক্ষতা হতে হবে গ্লোবাল ফিজিশিয়ানের মতো। সেজন্য তাকে এগিয়ে যেতে হবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এটা করতে চাইলে তাকে কোলাবোরেট করতে হবে, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এ বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন নতুন কিছু জানার জন্য সবসময় তাদের ক্ষুধা থাকতে হবে। সবমিলিয়ে একজন তরুণ চিকিৎসককে হতে হবে সবচেয়ে বেশি স্মার্ট। তাকে হতে হবে সবচেয়ে বেশি দক্ষ, জানতে হবে নিজের সিলেবাসের বাইরেও চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা জানা-অজানা তথ্য।

টিআই/এমএআর/