হিমোফিলিয়া (রক্তরোগ) রোগীদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চল ও জেলা পর্যায়ের। তবে এ রোগের চিকিৎসা কেবলমাত্র রাজধানীকেন্দ্রিক। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের। মাত্রাতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ বহন করতে না পেরে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বেশিরভাগ রোগীই। 

রোববার বিকেলে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতি দশ হাজার জনে একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন৷ বাংলাদেশে সেই সংখ্যা ১৪ হাজারে বেশি বলে ধারণা করা হয়। তবে বাংলাদেশ হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আড়াই হাজার রোগীকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পেরেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমোটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে রোগী সহজে শনাক্ত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়িতে নিজেরাই চিকিৎসা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে প্রধান সংকট হলো, দেশে কী পরিমাণ হিমোফিলিয়া রোগী আছে, সেটি আমরা এখনো চিহ্নিত  করতে পারিনি। আবার যতটুকু পারছি, তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছি না।

হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে কীভাবে শনাক্তের ব্যবস্থা করা যায়, সংশ্লিষ্টদের তা নিয়ে ভাবতে হবে। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সমাধান করতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের দেশে ১৪ হাজার হিমোফিলিয়া রোগী আছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এটির উন্নতি করতে হবে। শুধু ডায়াগনসিস করলেই হবে না, শনাক্তদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, আটটি বিভাগে হতে যাওয়া নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে আলাদা হিমোফিলিয়া বিভাগ থাকছে। তবে বেশি প্রয়োজন একটি হিমোফিলিয়া কেয়ার সেন্টার। নীতিমালাও থাকা দরকার।

আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নীতিমালায় হিমোফিলিয়া অন্তর্ভুক্ত হবে আশা করে রোবেদ আমিন বলেন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। সোসাইটি ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে হিমোফিলিয়ায় বাংলাদেশ এক সময় ভালো করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এ জন্য সরকার আটটি বিভাগে হতে যাওয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমোফিলিয়ার রোগীদের জন্য দেড়শ শয্যা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, করোনার আগে কিছুটা কাজ হলেও এরপর থেকে কমেছে। এখন আবারও পদক্ষেপ বাড়বে। রক্ত সম্পর্কিত রোগগুলো নিয়ে যে সহযোগিতা দরকার সরকার তা করবে বলেও জানান তিনি।

টিআই/আরএইচ