বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিয়ে কিশোর শ্রাবণ স্নাল ও কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তা ও হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিবিড় চিকিৎসা সেবায় তারা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

বুধবার দুপুরে বিএসএমএমইউয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। উপাচার্য বলেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন হজকিন্স লিম্ফোমা রোগে আক্রান্ত শ্রাবণ স্নাল ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

সংবাদ সম্মেলন কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী কাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মায়ের মতো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরঋণী। আমি হাঁটতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রীর অনুদান ও নির্দেশে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসি। এখানে চিকিৎসা নিয়ে আমি আজ সুস্থ, হাঁটতে পারছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও আমার চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন,  মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, বেসিক সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরীন তফাদার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহীন  আকতার, নার্সিং ও মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিত  কুমার কুন্ডু, সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন প্রমুখ।

কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী গাজী (৫০) গত বছরের ৪ অক্টোবর তার গ্রামের বাড়ির বাজার থেকে ফেরার সময় সাইকেল থেকে পড়ে যান। এতে তিনি কোমরে আঘাত পেয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।  দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তিনি সুস্থ হতে পারেননি। এ খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে বলেন।

২৭ ফেব্রুয়ারি আকবর আলীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের গ্রিন-২ ইউনিটে সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিত কুমার কুন্ডুর অধীনে ভর্তি করা হয়। কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিকস, কিডনি রোগ, সিভিয়ার হাইপো ক্যালেমিয়া, ডিস লিপিডিমিয়া, ডিসকোয়েড লুপাস, ইরাথ্রো মাটোসিস রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। ভর্তির চার সপ্তাহ চিকিৎসা  নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা অপারেশন অনুকূল হলে ৩০ মার্চ তার অপারেশন করা হয়। তার সফল অপারেশন করেন অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আর্থপ্লাস্টি সার্জন ডা.ইন্দ্রজিৎ কুমার কুন্ডু। অপারেশন পরবর্তী তার শারীরিক অবস্থা নীবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ১৭ এপ্রিল মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্য আকবর ছুটিতে যেতে পারেন মর্মে বোর্ডের অধ্যাপকরা সম্মত হন। আকবরকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটি দেওয়া হয়।

এদিকে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের অধিবাসী কৃষক আরেং ও নীলিমা স্নালের ১২ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া শ্রাবণ স্নাল হজকিন্স লিম্ফোমা রোগে আক্রান্ত ছিল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে শ্রাবণকে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে নির্দেশ দেন।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর শ্রাবণ স্নালকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যিালয়ে হেমাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহের অধীনে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার হজকিন্স লিম্ফোমা রোগ নির্ণয় করা হয়। এরপর গত ৭ নভেম্বর প্রথম কেমোথেরাপি শুরু হয়। রোগ নির্ণয়ের সময় তার টিউমারের আকার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। বর্তমানে এর আকার ২ দশমিক ১ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার শ্রাবণকে ছুটি দেওয়া হবে।

টিআই/আরএইচ