করোনার মহামারির লম্বা সময় পেরিয়ে দু’বার, তিনবার বা চারবার করোনায় আক্রান্ত হওয়া এখন আর মানুষের কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ওমিক্রন ও এর সাবভ্যারিয়েন্টগুলো অনেক বেশি সংক্রামক। করোনার টিকা নেওয়া থাকুক বা আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকলেও এগুলোতে আবারও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে, বার বার করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা আমাদের জীবনের একটা অংশে পরিণত হয়ে গেছে।     

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বর্তমানে  যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ সংক্রমণের জন্য দায়ী BA.5 সাব্যভারিয়েন্ট একবার সংক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে আবারও সংক্রমিত করতে পারে। ওমিক্রনের সাবভ্যারিয়েন্ট BA.2.75 নিয়েও একই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। এটিই এখন বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি এখনও খুব বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে না।  

সাধারণভাবে বলা হচ্ছে, আপনার শরীর যদি একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে ভালোভাবে লড়বে। অর্থাৎ পরের দফায় আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা কম থাকবে। 

একবার আক্রান্ত হলে বা টিকা নেওয়ার পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয় শরীরে। একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই ক্ষমতা মৃত্যুর বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই কমিয়ে আনতে পারে। 

তবে একবার আক্রান্ত হওয়ার অর্থ কোনোভাবেই এটা নয় যে, ভবিষ্যতে আর এ রোগে আক্রান্ত হবে না। বিশেষ করে BA.5 এবং অন্যান্য ওমিক্রন সাবভ্যারিয়েন্টের জন্য এটা আরও বেশি প্রযোজ্য।  

আরও পড়ুন : করোনার পর শরীরে আয়রনের ঘাটতি বিপদের কারণ হতে পারে?

জুনে সায়েন্স নামক জার্নালে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু স্বাস্থ্যকর্মীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তিন ডোজ টিকাও নিয়েছিলেন, তারপরও তারা আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ টিকা নেওয়ার কারণে বা একবার আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের শরীরে যে প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল, সেটা আর বাড়েনি। কিন্তু যারা কখনও করোনায় আক্রান্ত হননি, তবে তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের শরীরে প্রতিরোধী ক্ষমতা কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে।  

মে মাসে নেচারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছিল যে, যারা করোনার টিকা নেননি, কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে প্রতিরোধী ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। 

তবে ওই গবেষণাপ্রতিবেদনের একজন সহলেখক বলছেন, তাই বলে ওমিক্রনের আক্রান্ত হওয়া শরীরের প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ানোর একটা ভালো উপায় মনে করার কোনো কারণ নেই।  

জুনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুনঃসংক্রমণ গুরুতর অসুস্থ না করলেও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় সংক্রমণের [প্রথম সংক্রমণের চেয়ে] গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু দ্বিতীয় সংক্রমণ থেকেও ক্ষতি হতে পারে।  

আরও পড়ুন : মানুষের আয়ু কমাল করোনা

সংক্রমণের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকিগুলোর একটি হলো লং কোভিড। টিকার পুরো ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদেরও এটা হতে পারে। একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত প্রতি ৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের একজনের লং কোভিডের আশঙ্কা থাকে।  

প্রথম সংক্রমণের তুলনায় দ্বিতীয় সংক্রমণে লং কোভিডের ঝুঁকি বেশি কি না তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই লং কোভিডের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। সুতরাং দ্বিতীয় সংক্রমণে লং কোভিডের ঝুঁকি থাকে, তবে সেটা কত মানুষের হতে পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো পর্যাপ্ত তথ্য এখনও নেই।  

করোনায় একবার সংক্রমিত হওয়ার পর কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ না হয়ে থাকে, তার মানে এটা ধরে নেওয়া যাবে না যে প্রত্যেকবারেই তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। এছাড়া আরেকটি বড় বিপদ হলো- টিকাপ্রাপ্ত কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি কোনো ভাইরাস উচ্চ হারে সংক্রমিত করতে থাকে, তবে হয়তো একদিন ওই ভাইরাস আগের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।  
 
সূত্র : টাইম ম্যাগাজিন। 

এনএফ