দেশের স্বাস্থ্যখাতে সম্পদের সীমাবদ্ধতার পরও কম খরচে এমন অভাবনীয় সাফল্যের জন্যে বাংলাদেশ বিশ্বের চোখে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক। 

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের খরচ অনেক কম। চিকিৎসায় আমাদের সফলতা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।

এনামুল হক জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে দেশে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ২৪.৩ শতাংশ এবং গড় আয়ু ছিল ৭২.৯ বছর। অন্যদিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জন্য এই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৩০ এবং ৭২ বছর। ভারতের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় ৬৩.৭৫ ডলার হলেও আমাদের দেশে ব্যয় তার থেকে অনেক কম।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিপর্যয়মূলক ব্যয় এবং দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি  (এসএসকে) পাইলটিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা ঢাকা মহানগরীসহ দেশের আরও ছয়টি জেলায় সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্ডের ভিত্তিতে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন এবং ১১০টি রোগের (রোগ নির্ণয়, ঔষধ, পথ্যসহ) পূর্ণ চিকিৎসা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। 

এনামুল হক আরও বলেন, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ধাপে ধাপে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা/স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির মতো কার্যক্রম গ্রহণ করার।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল। তিনি জানান, ২০২০ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে খরচের মাধ্যমে বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৮.৫%) ব্যয় সম্পন্ন হয়েছে, অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তৃক ব্যয়ের পরিমাণ ৫ শতাংশ। ইতোপূর্বে প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে সরকারি খাতের ব্যয় ছিল ২২.৮ শতাংশ; যা ২০২০ সালে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ২৩.১ শতাংশে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করেছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথচলায় দেশে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের খরচ করার প্রবণতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

টিআই/এনএফ