করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন ও  নিজেদের দাবির কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র তাদের সুরক্ষার বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।

ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে আতকিয়া সাদিয়া আনিকা নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনিই আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আশা করি, তিনি আমাদের সুরক্ষার বিষয়টি বুঝবেন। আমরা তার মুখ থেকেই শুনতে চাই তিনি আমাদের ঝুঁকিতে ফেলে এই পরীক্ষাটা নিতে চান কি-না।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, দেশে করোনা এখন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে গেছে। আমরা বলছি না যতদিন করোনা বিদায় না হবে, ততদিন পরীক্ষা দেবো না। আমাদের দাবি হচ্ছে, আগে সব পরীক্ষার্থীকে টিকা দিন, তারপর আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো। টিকা ছাড়া এই পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষায় বসতে চাই না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সবমিলে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৬ জনে। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ লাখ ২২ হাজারের অধিক পরীক্ষার্থী আসবে। মাত্র ১৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে গেলে কি পরিমাণ জনসমাগম হবে তা সহজেই বোঝা যায়। জনসমাগম কমাতে সরকার নির্দেশনা দিলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক খোলা চিঠিতে পরীক্ষার্থীরা বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশের ১৯টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এমন একটি পরীক্ষার পর সংক্রমণ হার ঠিক কোন অবস্থায় পৌঁছবে, তা সহজেই অনুমেয়।
তবুও আমরা মেনে নিলাম, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের ফটকের বাইরে উপচে পড়া ভিড় কীভাবে সামাল দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে? সেখানে যদি কোনো লক্ষণ-উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্ত রোগী উপস্থিত থাকেন তাহলে বাকিরাও চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। 

পরীক্ষক-পরিদর্শকদের মধ্যেও আতঙ্ক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া শুধু শিক্ষার্থী নয়, আমাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এতো পরীক্ষার্থী আসবে, সেখানে আমাদেরও যেতে হবে। সংক্রমণের ভয় তো স্বাভাবিকভাবেই থাকে। এই মুহূর্তে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টা উপর মহলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। চাইলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

কেন্দ্র পরিদর্শকের দায়িত্ব পাওয়া এক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন সংক্রমণের যে ধারা, যাদের টেস্ট করতে পাঠাচ্ছি, তাদের প্রায় সবার পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। এর বাইরেও এমন অনেকেই আছেন যারা ভয়ে চিকিৎসকের কাছেই যাচ্ছেন না। 

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই। এখন দিতে হবে অন্তত ১৪ দিনের লকডাউন। অনেকটা কারফিউ জারির মতো। এই ১৪ দিনের মধ্যে যদি আমরা ভাইরাসকে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়াতে না দেই, তাহলে সর্বোচ্চ ক্ষতিটা হবে না। কিন্তু আমরা যদি এরকম বড় একটা পাবলিক পরীক্ষা নিতে যাই, তাহলে এটা বড় একটা ধাক্কার কারণ হবে।

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউসিজি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মুহূর্তে পরীক্ষা নেওয়া নীতিনির্ধারণী ব্যাপার। তারা চাইলে পুনরায় বিবেচনা করতে পারেন। যদি পরীক্ষা নিতেই হয়, তাহলে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। নয়তো বড় একটা ঝুঁকি তৈরি হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে অবশ্যই একাধিক মাস্ক পরে আসতে হবে। হাতে গ্লোভস, প্রয়োজনে মাথায় ক্যাপ পরে আসতে হবে। আর সঙ্গে অভিভাবকদের না নিয়ে আসাই উচিত হবে। 

যথাসময়েই পরীক্ষা হবে, থাকবে বিশেষ ব্যবস্থাও

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মুহূর্তে পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। ২ এপ্রিল পরীক্ষা নিতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত রোববার (২৮ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংক্রমিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কেউ আশঙ্কা করেন যে তার মাঝে করোনা উপসর্গ আছে অথবা কারও মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরীক্ষা নেব। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো প্রতিটা কেন্দ্রে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা থাকছে। তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আশা করছি, সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। 

টিআই/এসকেডি