প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এতে অক্সিজেন সংকট নিরসন ও ভারতের ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ নিয়ে সতর্ক করা হয়।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে জাতীয় কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে ও সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে সুপারিশগুলো গৃহীত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটি দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশগুলোর সংক্রমণের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। যদিও বাংলাদেশের সংক্রমণ নিম্নমুখী। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক প্রস্তুতি বিশেষ করে অক্সিজেন সংকট তৈরি প্রতিরোধের বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

সভায় সরকারের এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। ১২০০ বেডের মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল চালু করায় এই কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে ও সরকারকে অভিনন্দন জানায়। একইসঙ্গে উক্ত হাসপাতালে মেটারনিটি কর্নার/ইউনিটের ব্যবস্থা করার জন্যও বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, ইতোমধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত গর্ভবতীদের সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়।

কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক না করে জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের উদ্যোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই বিষয়ে জনবল তৈরি দিকেও লক্ষ্য রাখার সুপারিশ করা হয়। বিশেষায়িত হাসপাতালে নির্দিষ্ট রোগের রোগীদের করোনার বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থার ব্যাপারে মত দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ (নতুন প্রজাতি) চিহ্নিত হয়েছে। এই প্রজাতি আমাদের দেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি সংকটময় হতে পারে বলে জাতীয় কারিগরি কমিটি আশংকা করে। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন থাকা নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্ত দিয়ে জনগণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ধরনের শিথিলতা কাম্য নয়।

পালিয়ে আসা রোগীদের প্রসঙ্গে বলা হয়, ভারত থেকে আগত ১০ জন সংক্রমিত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। উক্ত চলাচলের সময় এরা যাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করা প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে, উচ্চ সংক্রমণশীল দেশ থেকেও বাংলাদেশে যাতায়াত বন্ধ করা বা সীমিত করা প্রয়োজন। এসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদেরও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সুপারিশে বলা হয়, দেশের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিধি নিষেধ অব্যাহত রেখেছে। এই বিষয়ে কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিধিনিষেধ পালনের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ আগের মতো চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সরকারের কাছে লকডাউন পরবর্তী বের হয়ে আসা পরিকল্পনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় কিটের দাম প্রায় ৩০০০/২৭০০ টাকা থেকে কমে ৮০০/১০০০ টাকায় নেমে গেছে। এর প্রেক্ষিতে বেসরকারি পর্যায়ে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে মূল্য পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। একই সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে আরটি পিসিআর টেস্টের মূল্য ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

কমিটির পর্যবেক্ষণ হলো, স্বাস্থ্যকর্মীরা বার্ন আউট হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরেকদল চিকিৎসক (নিউ সেট) প্রস্তুত করার সুপারিশ করা হয়। লকডাউনের সময় চিকিৎসকদের যাতায়াত সহজ রাখা এবং মানসম্মত প্রয়োজনীয় পিপিই পর্যাপ্ত সরবরাহ করা ও তারা তা পাচ্ছে কিনা সেটা মনিটরিং করা প্রয়োজন।

চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী/নার্স/টেকনিশিয়ান/অ্যানেসথেসিস্ট নিয়োগের কার্যক্রমকে আবারো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে এখনও জনবলের সংকট রয়েছে। জনবলের ঘাটতি রেখে সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। সব বাধা দূর করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করার সুপারিশ করা হয়। সরকার অ্যানেসথেসিস্ট, চিকিৎসক, মিড ওয়াইফ নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সভায় সরকারের কাছে নার্স নিয়োগেরও সুপারিশ করা হয়।

টিআই/ওএফ