রক্তদানের মাধ্যমে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বরং শরীরের ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সোমবার (১৪ জুন) বিএসএমএমইউয়ের এ ব্লকে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে বিশ্ব রক্তদান দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারব না। তবে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আমাদের পক্ষে সদকায়ে জারিয়া অর্জন করা সম্ভব। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বরং শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন কেন্দ্রীয় রক্তপরিসঞ্চালন বিভাগের (বর্তমানে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ) উদ্বোধন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একজন ডাক্তার তৈরি করতে জনগণের অনেক টাকা খরচ হয়। বঙ্গবন্ধু চিকিৎসকদেরকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করায় আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমি দেশের চিকিৎসক সমাজকে আরও বেশি করে রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। দেশের সব সুস্থ মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এসময় তিনি ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উন্নয়নে বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে ১০.৭ কোটি ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। বিশ্বের প্রায় ৬২টি দেশে শতকরা ১০০ ভাগ স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ হয়। উন্নত বিশ্বে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৩৬ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন যা উন্নয়নশীল দেশে ৩ জনেরও কম। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ নারী প্রসবজনিত কারণে মারা যায় । তারমধ্যে দেড় লাখ মারা যায় কেবল মাত্র রক্তের অভাবে।

এছাড়াও দুর্ঘটনা জনিত কারণে ৫-২৯ বছরের মানুষ বেশি মারা যায়, যাদের রক্তের প্রয়োজন অবধারিত। কোনো দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র দুই শতাংশ মানুষ যদি বছরে মাত্র একবার রক্তদান করেন, তাহলে দেশে রক্তের অভাব থাকে না।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি শুরু হয়। এর আওতায় সারাদেশে ২০৮টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে রক্তদাতাদের এইডস, হেপাটাইটিস-বি ও সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও ৬৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স সংগ্রহ করে রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৬ লাখের অধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে সংগৃহীত রক্তের প্রায় ৬৯ ভাগ সংগ্রহ করা হয় আত্মীয়-স্বজন থেকে। ৩১ ভাগ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতা থেকে। স্বেচ্ছা রক্তদাতা সংখ্যা গত ১০ বছরে শতকরা ১০ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ৩১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু মুমূর্ষু রোগীর জন্য অনেক সময় রক্ত দেওয়ার কোনো আত্মীয়-স্বজন থাকে না। এজন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। যাতে শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদান নিশ্চিত করা যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধনসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস ২০২১ উদযাপিত হয়েছে।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়শা খাতুন, অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।

করোনা সম্পর্কিত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা সম্পর্কিত মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে তৈরি করা ‘করোনা-অ্যাসোসিয়েটেড মিউকরমাইকোসিস ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

টিআই/ওএফ