চরবাসীর দোরগোড়ায় ২৪ ঘণ্টার আধুনিক প্রসব সেবা
সিরাজগঞ্জের ঘোরজান ইউনিয়নের ভাঙনপ্রবণ ও দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো ২৪ ঘণ্টার আধুনিক প্রসব ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যাত্রা শুরু করেছে ব্র্যাকের ‘সুস্বাস্থ্য’ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। ফিলিপস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চালু হওয়া এই কেন্দ্রটি দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্যসেবা সংকটে থাকা চরবাসীর মাতৃ ও নবজাতক সেবায় নতুন আশার আলো হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সিরাজগঞ্জের ঘোরজান ইউনিয়নে ‘চর হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ (চার্মস) কর্মসূচির আওতায় স্থাপিত এই সেন্টারটির উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চলে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবা বিস্তারে নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো। এর আগে কুড়িগ্রামের চর নারায়ণপুরে প্রথম কেন্দ্রটি কার্যক্রম শুরু করে এবং মাত্র ছয় মাসেই কার্যকারিতা প্রমাণ করে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক এসব তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়েছে, বন্যা, নদীভাঙন ও মৌসুমভেদে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় এসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন। বহু বছর ধরে ঘোরজানের মতো বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের নারীরা বাড়িতেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের চেয়ে এখানকার মানুষের মধ্যে অনেক বেশি। অনেক মৃত্যুর তথ্য পর্যন্ত কোথাও লিপিবদ্ধ হয় না।
বিজ্ঞাপন
ব্র্যাক জানায়, কুড়িগ্রামের প্রথম কেন্দ্রটি চালুর পর ২০টি স্বাভাবিক প্রসব নিরাপদে সম্পন্ন হয় এবং প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা পান। ৪০০-র বেশি নারী প্রথমবারের মতো আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর সুযোগ পান। জটিল গর্ভধারণ শনাক্ত করে দ্রুত জেলা হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়, যা বহু জীবন রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।
ফিলিপস ফাউন্ডেশনের প্রধান এডিন সাররুখ এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ভূগোলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসমতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা এই উদ্যোগের মূল সাফল্য। স্থানীয় জ্ঞান ও উদ্ভাবন ব্যবহার করে ব্র্যাক দেখিয়েছে—সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেও মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল আমীন বলেন, এই অঞ্চলে এতদিন কোনো প্রসব সেবা ছিল না। ব্র্যাকের এই উদ্যোগ সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে আরও শক্ত সমন্বয় তৈরি করবে।
ব্র্যাকের হেড অব হেলথ সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইনোভেশন ডা. ইমরান আহমেদ চৌধুরী বলেন, শেষ প্রান্তের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে না পারলে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বৈষম্য থেকেই যায়। কুড়িগ্রামের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে দুর্গম এলাকাতেও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।
টিআই/এমজে