স্বাস্থ্যখাতের রেফারেল ব্যবস্থার দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান।

তিনি বলেছেন, ভুল জায়গায় পাঠানো কিংবা রিসিভ না করার কারণে অনেক রোগী মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। ঢাকার বড় হাসপাতালে ভয়াবহ চাপ ও বিশৃঙ্খলার বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটকে এ বিষয়ে আরও মানবিক, আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস ও হসপিটালের নতুন ৫০০ শয্যার এক্সপানশন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘসূত্রতা, অদক্ষতা এবং রেফারেল ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভুল রেফারেলের কারণে অনেক রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে শেষমেষ মৃত্যুর দিকে চলে যায়।

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে বারান্দা, করিডোর, র‌্যাম্প— কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। আপনি একটা রোগীর শরীরের ওপর দিয়েও হাঁটতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি রোগী নিয়ে আসে, সে যায় কোথায়? সেই বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করে তিনি নিউরোসায়েন্সের ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন।

চিকিৎসা সেবাকর্মীদের সতর্ক করে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, রোগী ফেরত দিলে অন্তত বলবেন, রোগী কোথায় যাবে। ডিএমসিতে পাঠালে ওখানে একটা পয়েন্টে জানিয়ে দেবেন— আমার রোগী যাচ্ছে, দয়া করে রিসিভ করেন।

কীভাবে ভুল রেফারেল সবচেয়ে বড় ক্ষতি ঘটায় তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কখনো বলছি দাঁতের সমস্যা, ডেন্টালে যান— ডেন্টাল বলে আমি এটা ম্যানেজ করতে পারব না। আবার মাথার খুলিতে আঘাত থাকলে পাঠাচ্ছি নিটরে। এতে রোগী বারবার ঘুরে শেষে মারা যায়।”

সচিব বলেন, “আপনার বিভাগের সঙ্গে যদি সম্পর্ক থাকে, তাহলে রোগীটা রিসিভ করেন। যদি কার্ডিয়াক ডাক্তার লাগে, অন্য বিভাগ থেকে নিয়ে আসুন। মানুষকে বাঁচানোর জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন। একেবারে আপনার এলাকার বাইরে হলে সেটি ভিন্ন কথা।”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রোগী ফেরত দিলে যেন আরেকটা জায়গায় সঠিকভাবে পৌঁছায়— এই ন্যূনতম মানবিক কাজটা আমাদের করতেই হবে।

স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘ প্রজেক্ট–জটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মতো জায়গায় তিন বছরের কাজ দশ বছরেও শেষ করতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে নিনসের মতো প্রতিষ্ঠানের সফল ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসার।”

তিনি ২০০৬ সালে নিনস প্রতিষ্ঠার শুরুর কথা স্মরণ করে বলেন, “এটা ছিল বস্তির জায়গা। এত খারাপ পরিবেশে হাসপাতাল দাঁড় করানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও এখন এটি দেশের মডেল প্রতিষ্ঠান।”

নিনসের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ নিয়েও সচিব খোলামেলা প্রশংসা করেন। এসময় স্বাস্থ্য সচিব চিকিৎসকদের দায়িত্বের সীমা ব্যাখ্যা করে বলেন, “ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসকদের কাজ নয়। এই দায়টা নন–মেডিকেল স্টাফদের। প্রয়োজনে একজন ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ও একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে শুধু এ কাজের জন্য ডেডিকেটেড রাখবেন।”

স্বাস্থ্য সচিব ব্যক্তিগত আবেদন রেখে বলেন, “আমরা অনেকেই ৬০ বা ৬০ প্লাস। বয়স্কদের জন্য একটা আলাদা এরিয়া থাকলে আমাদের মতো মানুষও প্রয়োজনীয় সেবা কাছ থেকে পাবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

টিআই/এমজে