কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ নিশ্চিতের দাবি
মৃত্যুর ৭১ শতাংশই দায়ী ‘উচ্চ রক্তচাপ’, বাজেটে বরাদ্দ ৫ শতাংশেরও কম
দেশে অসংক্রামক রোগে মৃতের মধ্যে ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ, অথচ সরকারের স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ এই রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবং সাংবাদিক কর্মশালার বক্তারা কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়ে নিয়মিত চিকিৎসা এবং ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন।
তারা সতর্ক করেছেন, যদি প্রাথমিক স্তরে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে দেশের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় উভয়ই ক্রমবর্ধমান হবে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিএমএ ভবনে “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : অগ্রগতি, বাধা এবং করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায়। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৮ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার প্রোগ্রাম অফিসার সামিহা বিনতে কামাল। উপস্থাপনায় জানানো হয়, দেশে অসংক্রামক রোগ মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী। তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ কম হওয়ায় এবং বরাদ্দ করা অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না হওয়ায়, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে, উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
এসব প্রসঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ডা. গীতা রানী দেবী বলেন, “প্রান্তিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে বড় ধাপ এগোবে এবং রোগীর ঝুঁকি কমবে। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগ।”
অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) রিয়াদ আরেফিন বলেন, “উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা ইতোমধ্যেই উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সুসংগঠিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করি দ্রুতই দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় আলোচকরা আহ্বান জানান, সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা, নিরবিচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা মনে করেন, শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক উদ্যোগ নয়, বরং গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোই হবে মূল চাবিকাঠি।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সফলতা আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ—জনসাধারণের কাছে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরা।
টিআই/এসএম