প্রসূতি মায়েদের করোনা টিকার আওতায় আনার চিন্তা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ নিয়ে শিগগিরই প্রসূতিদের টিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রসূতিদের টিকার বিষয়টি নিয়ে আমরা গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টিতে সম্মতি জানিয়েছেন। প্রসূতিদের টিকা প্রয়োগ নিয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে আজ রাতে একটি মিটিং রয়েছে, তারা যে পরামর্শ দেবে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’

খুরশীদ আলম বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছে। তারা সেখানে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এ বিষয়টির অনুমোদন দেয়নি। বিভিন্ন দেশ নিজেদের ইচ্ছা বা প্রটোকল অনুযায়ী প্রসূতি মায়েদের টিকা দিচ্ছে।’

কবে থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রসূতিদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। আমাদের জাতীয় কারিগরি কমিটি যদি বলে, তাহলে আমরা কার্যক্রম শুরু করে দেব। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। এই মুহূর্তে আমরা কারিগরি কমিটির পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, প্রসূতিদের টিকা দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি দেখেশুনে খুব সতর্কভাবে করতে হবে । যেন কোনো ধরনের জটিলতা দেখা না দেয়। যারা নিতে চায় তারা যেন স্বেচ্ছায় নেয়। কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া যাবে না। আমরা বলেছি, শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় যারা নিতে চাইবে তাদেরকেই আমরা টিকা দেব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুহার বাংলাদেশে দিনদিন বাড়ছে। গত ১০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ১০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।

এ অবস্থায় শিগগিরই প্রসূতিদের টিকার আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রসূতিদের ক্ষেত্রে শুধু টিকার অনুমোদন নয়, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারও দিতে হবে।

এই বিষয়ে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও রিউমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রসূতিকালীন সময়টাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করি। এর প্রতিটিকে বলা হয় একেকটি ট্রাইমেস্টার (তিন মাসে এক ট্রাইমেস্টার)। দেখা গেছে, তৃতীয় ট্রাইমেস্টার পর্যায়ে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে তার করোনা সহজেই তীব্র আকার ধারণ করে। আমরা গত কয়েকদিনে বেশ কিছু প্রসূতি মাকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি। এজন্য ভালো একটা ব্যবস্থা হতে পারে প্রসূতিদের টিকাদান।

এ ব্যাপারে পৃথিবীতে বেশকিছু গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গত ১২ জুলাই ইসরাইলে একটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে যেখানে করোনা টিকা দেওয়া প্রায় সাত হাজার ৫০০ জন এবং টিকা না দেওয়া সাত হাজার ৫০০ জন গর্ভবতী মায়ের ফলাফল দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যে ফলাফলটা অনেক খারাপ ছিল।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ধাত্রীবিদ্যা কাউন্সিলও (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব গাইনোকলজি অ্যান্ড অবসটেট্রিকস) জোর দিয়ে বলছে, গর্ভবতীদের জন্য টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। কাজেই আমি বলব, সরকার বাধ্যতামূলক না করুক, অন্তত গর্ভবতীদের অগ্রাধিকারে আনা দরকার। বয়স ৩০ বছরের নিচে হলেও তাদের টিকা দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে গর্ভবতীদের অনুপ্রাণিতও করা দরকার।

বিশিষ্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম বলেন, কোভিডের শুরুতে ফার্টিলিটি সোসাইটিগুলো এক অজানা আশঙ্কায় চিকিৎসা বন্ধ রাখতে বলেছিল। কারণ প্রেগন্যান্সিতে মায়ের ও বাচ্চার ওপর কোভিডের প্রভাব ছিল অজানা। কিন্তু ইংল্যান্ডের একটি বড় সমীক্ষায় দেখা গেল, রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন : ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ থাকা (বিশেষ করে ব্ল্যাক এবং এশিয়ানদের মধ্যে) মায়েদের মৃত্যুহার বেশি। যা নন-প্রেগন্যান্টদের জন্যও প্রযোজ্য। প্রিম্যাচিউরড ডেলিভারি ছাড়া বাচ্চাদের উপর তেমন কোনো প্রভাব নেই। বিশেষ করে জন্মগত ত্রুটির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

টিআই/এসকেডি/জেএস