আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে পালিত হবে ২৫তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। এ সপ্তাহে প্রায় চার কোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। 

দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫-১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২-১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমক্স ৫০০ মি.গ্রা.) ভরা পেটে সেবন করানো হবে।

অধিদফতর জানায়, কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদযাপনের লক্ষ্য হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ৫-১৬ বছর বয়সী সব (স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, ঝরেপড়া, ছিন্নমূল ও কর্মজীবী) শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে সেবন করানো। 

পাশাপাশি কৃমির পুনঃসংক্রমণ রোধকল্পে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। এসব শিশুদের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তারা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। এ থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবীবাহিত রোগ-ব্যাধি থেকেও মুক্তি পাবে।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, কৃমি শিশুদের শরীরে অপুষ্টিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গ্রাম এবং শহরের বস্তি এলাকার শিশুরা এ সমস্যায় বেশি ভোগে। তাই শিশুদের সুস্থ এবং কৃমিমুক্ত রাখতে অবশ্যই কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। যেহেতু গতবার করোনার কারণে এ কর্মসূচি করা যায়নি, তাই এ বছর কর্মসূচি পালন করতে হবে। এখান থেকে যাতে একটি শিশুও বাদ না পড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, কৃমি অন্ত্র থেকে রক্ত শোষণ করে। ফলে শিশুরা রক্ত স্বল্পতায় ভোগে। এ ছাড়া কৃমির কারণে বদহজম, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কৃমি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিরও ব্যাঘাত ঘটায়। এতে তাদের শিখন ক্ষমতা হ্রাস পায় ও শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় থাকতে বাধা সৃষ্টি করে। কৃমি শিশুদের অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং অন্ত্রের অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করে, ফলে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। কৃমির অতি আক্রমণ শিশুর মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

অধিদফতর জানায়, কৃমির বিষয়টি খুবই সাধারণ বিষয় হিসাবে সর্বসাধারণের কাছে পরিলক্ষিত হয়। আসলে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এক নজরে কৃমিসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

> কৃমি মানুষের পেটে (অন্ত্রে) পরজীবী হিসাবে বাস করে এবং খাবারের পুষ্টি শোষণ করে। এতে শিশুরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতায় ভোগে।

> কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে রক্ত শোষণ করে। ফলে শিশুরা রক্ত স্বল্পতায় ভোগে।

> কৃমি বদহজম, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।

> কৃমির সংক্রমণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শিখন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ক্লাসে শিশুকে সক্রিয় থাকতে দেয় না।   
 
>  অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং অন্ত্রের অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করে, যার ফলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

> কৃমির অতি সংক্রমণ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয় 

> পরিবারের সবাই একত্রে বছরে কমপক্ষে দুবার (৬ মাস পর পর) কৃমির ওষুধ সেবন করা।

> খালি পায়ে চলাফেরা না করা এবং পায়খানা ব্যবহারের সময় স্যান্ডেল পরা।

> পায়খানার পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা।

> হাতের নখ ছোট রাখা। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার নখ কাটা।

> খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা।

> খোলা বা অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়া।

> ফলমূল খাওয়ার আগে তা নিরাপদ পানি দিয়ে ধোয়া।

> প্রতিবার খাবার গ্রহণের আগে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির সংক্রমণ বেশি দেখা যায় (০-৪ বছর-৭ শতাংশ, ৫-১৪ বছর- ৩২ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর- ১৫ শতাংশ, ২৫-৪৪ বছর- ৭ শতাংশ, ৪৫-৫৪ বছর- ৫ শতাংশ, ৫৫ বছরের অধিক ৪ শতাংশ)। এ জরিপের ওপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের জন্য কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০০৫ সালে কর্মসূচিটি তিন জেলায় নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ১৬ জেলায়, মে ২০০৮ পর্যন্ত ২৪ জেলায় ও নভেম্বর ২০০৮ থেকে ৬৪টি জেলায় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়।
 
টিআই/আরএইচ