প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো, কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকাসহ নানা বিষয় নিয়েই দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কয়েক দফায় ঘটেছে হাতাহাতির ঘটনাও।

টিকাগ্রহীতাদের অভিযোগ, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতেই দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। তবে আনসারসহ নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে অনেকে সিরিয়াল ছাড়াই কেন্দ্রে প্রবেশ করে টিকা নিয়ে বের হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষের এত দীর্ঘ লাইন, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মো. এরশাদুল হক (৩৫) নামের একজন সৌদিপ্রবাসী প্রথম ডোজ নিয়েছেন সৌদি আরবে। দ্বিতীয় ডোজ নিতে কিশোরগঞ্জ থেকে সকাল আটটায় এসেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ আর কোথাও দেখিনি। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও বলতে পারছি না টিকা নিয়ে ফিরতে পারব কি না। দীর্ঘ লাইন দেখে অনেকেই টিকা না নিয়ে ফিরে গেছেন বলেও তিনি জানান। 

টাঙ্গাইল থেকে আসা কুয়েত প্রবাসী সুলতান হোসেন (৪২) জানান, সকাল ৮টায় এসে লাইন ধরেছি। গতকাল মাঝরাতে রওনা দিয়ে এসেছি। এখনও বুঝতে পারছি না আর কতক্ষণ লাগবে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, আনসার সদস্যরা কিছুক্ষণ পর পর নিজের পরিচিত বলে একজন একজন করে অনেককেই ভেতরে নিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাদের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।

টিকা গ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে টিকা নিতে আসা প্রায় সবাই এসএমএস পাওয়ার পর টিকা নিতে এসেছেন। বিদেশগামী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছেন তারা।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকাগ্রহীতাদের এমন বিশৃঙ্খলা শুধু আজকের ঘটনাই নয়, টিকা নিতে আসা প্রবাসীরা টিকা না পেয়ে প্রায়ই বিক্ষোভ করে থাকেন। গত ২০ অক্টোবর করোনার টিকা না পেয়ে হাসপাতালটিতে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। তাদের অভিযোগ, টিকা নেওয়ার জন্য এসএমএস দিয়ে এখন টিকা নিতে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ছুটির কারণে টিকা দেওয়া হবে না।

টিকাপ্রত্যাশীদের অনেকে বলছেন, এসএমএসে দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় টিকা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন অনেকেই। এসে দেখেন ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটির কারণে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার ছুটি সেটাও হাসপাতাল থেকে জানানো হয়নি।

এসব প্রসঙ্গে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান জানান, হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই সহস্রাধিক মানুষ টিকার জন্য ভিড় জমায়। অনেকে এসএমএস না পেয়েও টিকা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। বিশৃঙ্খলা মূলত তাদের জন্যই হয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করি যেন কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই প্রতিদিনের কার্যক্রম শেষ করতে পারি।

তিনি বলেন, গত বুধবার ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি নিয়ে একটু সমস্যাটা দেখা দেয়। মঙ্গলবারের ছুটি পরিবর্তন হওয়ায় এসএমএস জটিলতা তৈরি হয়।

পরিচালক আরো বলেন, ফাইজারের টিকা তাপমাত্রাগত জটিলতার কারণে সীমিত পর্যায়ে দেওয়া হয়। আগে প্রতি কেন্দ্রে ২০০ ডোজ দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের অন্তত ১ হাজার করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই টিকা যারা নিতে আসেন তাদের কেউ কেউ হয়ত টিকা স্বল্পতার কারণে কখনো ঝামেলায় পড়তে পারেন। 

টিআই/এইচকে