বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মুজিবশতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রোগীদেরকে আরও বেশি করে সেবা দিতে হবে। সেবা দিয়েই রোগীদের মন জয় করতে হবে।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়বেটিস অ্যান্ড হরমোন) বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে অনেক সময় মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়, হার্ট, কিডনি, লিভারসহ রোগীরা বিভিন্ন জটিলতায় ভোগেন। তবে মানুষ সচেতন হলে এই রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ব্লকে অডিটোরিয়ামে ডায়াবেটিস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ডায়াবেটিসের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

‘এ’ ব্লকে আয়োজিত সেমিনারে স্নায়ুবিক জটিলতা নির্ণয় ও চিকিৎসা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, অসংখ্য ডায়াবেটিসের রোগী স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত।

অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম উল্লেখ করেন, পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের রোগী বৃদ্ধির হার বেশি। শনাক্ত ছাড়া রোগীর সংখ্যাও অনেক- ৬৮ শতাংশ। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সমন্বিত কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।

গাইনোকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সঠিক পরিচর্যা জরুরি। 

সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। 

বক্ষব্যাধি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আবুল হাসানাত, অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেগম নাসরীন প্রমুখ। গুরুত্বপূর্ণ এই সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে ডায়াবেটিসের স্নায়ুবিক জটিলতা প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রায় অর্ধেক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর নিউরোপ্যাথি তথা পেরিফেরাল স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা হচ্ছে ডায়াবেটিসের সর্বাধিক সংঘটিত জটিলতা। তবে প্রথম দিকে উপসর্গ প্রকাশ নাও হতে পারে অথবা হাত-পা ঝিনঝিন করতে পারে বা অসাড় হতে পারে। পরবর্তীতে হাত-পা দুর্বল বা অবশ হতে পারে। পায়ে ক্ষত হতে পারে। চোখের দৃষ্টি সমস্যা হয়, চল্লিশোর্ধ্ব প্রতি তিনজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজনের রেটিনোপ্যাথি দেখা দেয়। এতে চোখের পেছনের আলোক সংবেদনশীল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া অটোনোমাস নিউরোপ্যাথি হতে পারে। যার ফলে হজমে সমস্যা, রক্তচাপ কমা, অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে এবং ব্যথার উপলব্ধি কমতে পারে। যেকোনো নিউরোপ্যাথি হতে পারে। যার ফলে উরুর ব্যথা, পীঠের নিচে প্রচণ্ড ব্যথা, বুকের ব্যথা ও কানে শোনার সমস্যাও হতে পারে।

এছাড়া ডায়াবেটিসের ফলে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। হঠাৎ সুগার খুব বেশি বেড়ে গেলে অথবা কমে গেলে অজ্ঞান, খিঁচুনি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই জটিলতা রোধে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের সাথে সাথে ওজন কমানো, খাবার থেকে কম ক্যালোরি গ্রহণ, শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করা অবশ্যই প্রয়োজন।

টিআই/এইচকে/