চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখা ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, রমজান মাসে রোজা রাখায় স্বাভাবিক জীবনাচারে বেশকিছু পরিবর্তন আসে। ওষুধ, খাবার-দাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ই ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আসন্ন রোজার মাসকে সামনে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার প্রস্তুতি শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ অ্যান্ডাক্রোইন সোসাইটি (বিইএস) এবং সানোফি বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ‘রমজানে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিস হলো চারটি প্রধান ধরনের অসংক্রামক রোগের মধ্যে একটি, যা বিশ্বব্যাপী অসুস্থতা এবং মৃত্যুহারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। আনুমানিকভাবে বলা যাচ্ছে যে বিশ্বে মোট ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি রোগী ইসলাম ধর্মাবলম্বী, রমজান মাস মুসলিম জনসংখ্যার ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় একটি বড় প্রভাব ফেলে। রমজান মাসে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের খাদ্য এবং তরল গ্রহণের সময়সূচিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কারণে শারীরিক জটিলতার বিশেষ ঝুঁকি বেড়ে থাকে।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওষুধ নেওয়াটাই সবকিছু নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের তার দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থার সামঞ্জস্য করতে হয়। তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকিমুক্তভাবে রোজা রাখা এবং সঠিক মাত্রায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক নির্দেশনা বরাবরই দিয়ে আসছে। এ বছর তা আরও জোরদার হবে।

এ সময় বারডেম জেনারেল হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষই যেহেতু মুসলিম সেহেতু মুসলিম ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, রমজানে অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগী স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে রোজা রাখেন। চিকিৎসক হিসেবে একজন রোগীর শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত রেখে রোজা রাখতে সহায়তা করাই আমাদের লক্ষ্য।

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি এ সব রোগীদের সাহায্য করার জন্য সারা বাংলাদেশে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ অনুষ্ঠানটি তারই একটি প্রয়াস।

অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের ইনসুলিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারের পরিচালক সৈয়দ এ বি তাহমীদ বলেন, রমজানে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা ২০২২ একটি অভিনব প্রকল্প। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রস্তুতকরা সর্বশেষ প্রমাণ-ভিত্তিক ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার এ নির্দেশিকা অবশ্যই আমাদের ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদে রোজা রাখতে সহায়তা করবে।

সানোফি কর্তৃপক্ষ জানায়, রমজান মাসে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর রোজা নিশ্চিত করতে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) এবং বৈজ্ঞানিক অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সানোফি বাংলাদেশ ‘রমজানে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এ বৈজ্ঞানিক অধিবেশন ও কর্মশালার আয়োজন করেছে।

এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে রমজানের আগে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকির স্তরবিন্যাস এবং ওষুধের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রমাণ-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শ প্রদানে চিকিৎসকদের সমর্থন ও হালনাগাদ করা।

আরও জানানো হয়, রমজান মাসে রোজা রাখতে ইচ্ছুক রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ডায়াবেটিস এবং রমজান ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (ডিএআর) সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) চিকিৎসকদের জন্য পবিত্র মাসে তাদের রোগীদের ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে রমজানের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে।

এ প্রকল্পের অধীনে, ৩০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক রমজানে বিভিন্ন পর্যায়ে রোগীর রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখবেন এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) রোজা রাখার সময় ডায়াবেটিস রোগীকে নিরাপদ রাখতে ওষুধের পাশাপাশি দৈনিক রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণের জন্য বই, ডায়েট চার্ট এবং ব্যায়াম চার্টের মতো সমস্ত সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করবে।

সানোফি বাংলাদেশ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ অভিনব এবং রোগীকেন্দ্রিক উদ্যোগের বৈজ্ঞানিক অংশীদার। রোগীর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, বিইএস পরবর্তী সময়ে বিশেষভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তবসম্মত এবং প্রমাণ-ভিত্তিক নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।

টিআই/এসএম