ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর এক সপ্তাহ পর রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ শহর খেরসনের দখল নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ইউক্রেনজুড়ে তীব্র সংঘর্ষের মাঝে বুধবার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে মস্কো।

এদিকে, খেরসনের মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী শহর দখলের চেষ্টা করছে। তবে শহরে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে রুশ সৈন্যরা। ইউক্রেনের অন্যতম বড় এই শহর রাশিয়ার সৈন্যদের দখলের দাবির ব্যাপারে মিশ্র তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর আগে, মস্কো এই শহরটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, খেরসন চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, আমরা এখনও ইউক্রেন, আমরা এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, প্রায় ৩ লাখ মানুষের এই শহর যদি রাশিয়ার সৈন্যরা দখলে নেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পতন হওয়া সবচেয়ে বড় শহর হবে এটি। সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও হবে শহরটি। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র এই খেরসন শহর।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে, কিছু কিছু শহরে রুশ সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনের আরেক শহর খারকিভে চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়েছে রুশ সৈন্যরা। এই শহরের সরকারি-বেসরকারি ভবনের পাশাপাশি বেসামরিক এলাকার আবাসিক ভবনেও হামলা হয়েছে। 

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে রশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে জয় পেলেও তাকে ক্রমাগতভাবে দীর্ঘসময় ধরে চড়া মূল্য দিতে হবে। বাইডেন বলেছেন, কী আসছে সে সম্পর্কে হয়তো তার (পুতিনের) কোনো ধারণা নেই। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলেছে, হানাদার রুশ সৈন্যদের অগ্রযাত্রা ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।

এদিকে, কিয়েভের উত্তর প্রান্ত থেকে ৪০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ এক রাশিয়ান সামরিক যানের বহর রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে বর্তমানে সামরিক এই বহরের যাত্রা কিছুটা ধীর হয়েছে।

বুধবার এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কোর আগ্রাসনের প্রথম ছয়দিনে প্রায় ৬ হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। বোমা ও বিমান হামলা চালিয়ে ক্রেমলিন ইউক্রেন দখল করতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

এসএস/জেএস